মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় যে প্রযুক্তিতে বানানো হচ্ছে ফ্ল্যাট-প্যাক ঘর
ODD বাংলা ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ কোটি মানুষ এখন বাস্তুচ্যুত। তাদেরই একজন ওয়ালা আব্দুল কাদির আল-কুর্দি। ওয়ালা এবং তার পরিবার সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে থাকেন। সম্প্রতি তারা একটি নতুন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন। যেটি তৈরি হয়েছে ক্লাসিক সুইডিশ ধারণার ওপর ভিত্তি করে। ফ্ল্যাট-প্যাক আসবাব দিয়ে বানানো হয়েছে। এই কাজটি করে চলেছে দাতব্য সংস্থা বেটার শেল্টার। শরণার্থীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা উন্নত করতে চায় সংস্থাটি।
প্রথমে তারা একটি পরিক্ষামূলক ফ্ল্যাট-প্যাক আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, এই টুকরোগুলো জুড়ে দেয়া আসলে কতটা সহজ? এই ছোট দলটি পুরো আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করতে সময় নিয়েছে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা। এটা সহজ আর এটা ইকিয়ার আসবাবপত্রের মত।
দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা এমন নয় যে সবকিছু খুব সহজে আপনা আপনিই কাঠামোতে বসে যাবে। একে কাপড়ের আলমারি বা এরচেয়ে জটিল কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায়। আশ্রয়কেন্দ্রে আরাম আর নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু নতুন ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, সোলার প্যানেল, বাতাস চলাচলের জন্য জানালা, দরজায় তালা দেয়ার ব্যবস্থা। দেয়ারৗ বেশ মজবুত।
সিরিয়ার যুদ্ধের কারণে ওয়ালা এবং তার পরিবার নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছিলেন। গত বছর এই ফ্ল্যাট প্যাক আশ্রয়ে আসার আগে তারা থাকতেন একটি তাঁবুতে।
শরণার্থী শিবিরে থেকেই অনেকে বিয়ে করেন এবং সন্তান জন্ম দেন। তাদের দরকার নিরাপদ বাসস্থান। যেখানে তারা পরিবারের সঙ্গে আরো ভালোভাবে বসবাস করতে পারবেন।
সেই লক্ষ্যেই বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার বেটার শেল্টার হোম ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো পাঁচ বছর স্থায়ী হওয়ার মতো ডিজাইন করা হয়েছে। বিভিন্ন আবহাওয়া ও সংস্কৃতির সঙ্গে যাতে সহজে মানিয়ে যায়-সেভাবেই আবাসনের নকশা করা হয়েছে। প্রতিটি আবাসন বাবদ খরচ পড়ছে ১৫০০ ডলার যা তাঁবুর তুলনায় তিনগুণ বেশি।
২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে শরণার্থীদের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবাসন সমস্যা সমাধানের অন্যতম উপায় হতে পারে ফ্ল্যাট-প্যাক।
নতুন ঘর পেয়ে ওয়ালা বলেছেন, এই আশ্রয়টি আমাদের বৃষ্টি এবং রোদ থেকে রক্ষা করে। আমরা এখানে বসি। এটা আমাদের বসার ঘরের মত, কিন্তু আমার বাচ্চারা এখানেই ঘুমায়। এই ঘরের তাপমাত্রাও বেশ আরামদায়ক। এটি গ্রীষ্মে শীতল থাকে এবং শীতকালে উষ্ণ লাগে। এখানেই বড় পার্থক্য। কারণ, তাঁবু বৃষ্টি এবং রোদ থেকে রক্ষা করতে পারে না।
তিনি আরো জানান, অতিরিক্ত তাপ কাপড় পুড়িয়ে ছিদ্র করে ফেলে।
একটি দাতব্য সংস্থা হাজার হাজার ফ্ল্যাট-প্যাক বাড়ি করে দিয়েছে যেখানে আশ্রয়ে আছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শরণার্থীরা। বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য তৈরি করা এসব ফ্ল্যাট-প্যাক বাড়ি সম্পর্কে বিশ্বকে জানানোর চেষ্টা করছে সংস্থাটি।
বেটার শেল্টার নামে এই দাতব্য সংস্থার লক্ষ্য বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য ক্যানভাস তাবুর চেয়ে অনেক বেশি মজবুত আবাসন তৈরি করে দেয়া। দাতব্য সংস্থাটি মূলত সুইডিশ ফার্নিচার কোম্পানি ইকিয়া ফাউন্ডেশনের ধারণা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সুইডিশ ফার্নিচার কোম্পানি ইকিয়া ফাউন্ডেশন প্রায় ৭০ হাজার আবাসন তৈরি করেছে এবং বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়েছে। এগুলো তাবুর চেয়ে শক্ত, মজবুত টেকসই এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হল এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মানুষকে গ্রীষ্মের গরমে শীতল রাখে আবার শীতকালে উষ্ণতা দেয় এবং তাঁবুগুলো সারা বছর শুষ্ক থাকে।
Post a Comment