খনিতে পাওয়া ১৯ শতকের জিন্স বিক্রি হলো ৮৭ হাজার ডলারে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ১৮৮০ সালের একটি জিন্সের প্যান্টের দাম উঠেছে প্রায় ৮৭ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৮ লাখ টাকার ওপরে। লিভাইস ব্র্যান্ডের জিন্সটি বিকিয়েছে মেক্সিকোর ছোট এক শহরের নিলামে।


বার্তা সংস্থা সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, পরিত্যক্ত খনিতে জিন্সটির সন্ধান পান এক প্রত্নতত্ত্ববিদ, আরও বিশেষভাবে বললে 'ডেনিম আর্কিওলজিস্ট'। পরে সেটি কিনে নেন কাইলি হুটনার এবং জিপ স্টিভেনসন, ডেনিমের সমঝদার দুই ক্রেতা। 


সিএনএনকে স্টিভেনসন বলন, "নিলাম শুরুর আগ পর্যন্ত আমাদের এই জিন্স কেনার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। এখনও এ ঘটনার কথা মনে পড়লে পাগলামি ছাড়া কিছু মনে হয় না।" 


জিন্সটির বিক্রিমূল্য ধরা হয় ৮৭ হাজার ৪০০ ডলার, যা এযাবতকালে ডেনিমের জন্য প্রদান করা সর্বোচ্চ মূল্যগুলোর অন্যতম। এর ৯০% হুটনার পরিশোধ করবেন, বাকি ১০% প্রদানের দায়িত্ব স্টিভেনসনের।


স্টিভেনসন প্রায় তিন দশক ধরে লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি ডেনিম রিপেয়ারের দোকান চালাচ্ছেন; কিন্তু তিনি এমন জিন্স কখনো পাননি।


"আকার এবং পরার অবস্থা বিবেচনায় নিলে এই জিন্স অত্যন্ত বিরল", বলেন তিনি।



পাঁচ বছর আগে প্রথম এই জিন্সটির ব্যাপারে জানতে পারেন স্টিভেনসন।  


সেসময় পশ্চিম আমেরিকায় মাইকেল হ্যারিস খুঁজে পান এটি। পরের পাঁচ বছর আরও অন্তত ৫০টি পরিত্যক্ত খনিতে এমন আরেকজোড়া জিন্সের সন্ধানে ঘুরে বেড়ান তিনি। কিন্তু যেগুলো পাওয়া যায়, কোনোটিরই মান ততো ভালো না হওয়ায় পরার উপযুক্ত ছিল না; ফলে ঠাঁই হয় জাদুঘরে।


"অথচ অবাক করার মতো বিষয় এই জিন্সটা এখনও টেকসই এবং পরিধানযোগ্য।কেবল কয়েকটি সফট স্পট বা দাগ রয়েছে; সেসব বাদ দিলে এটা একেবারে দারুণ একটা জিন্স", বলেন স্টিভেনসন।  


"আমি তো জনি ডেপ বা জেসন মোমোয়াকে এই জিন্স পরা অবস্থায় কল্পনাও করে ফেলেছি।"


মেক্সিকোর ছোট শহর অ্যাজটেকের উপকণ্ঠে 'ডুরাঙ্গো ভিনটেজ ফেস্টিভাসে' নিলামটি অনুষ্ঠিত হয়। চার দিনের উৎসবটির আয়োজনে ছিলেন ভিনটেজ ডেনিম বিশেষজ্ঞ ব্রিট ইটন। তার কাছে এ ধরনের পণ্য খুঁজে বেড়ানো রীতিমতো আসক্তির মতো।


ইটন বলেন, "আমি গত প্রায় ২৫ বছর ধরে এ ব্যবসায় আছি। সাধারণত এ ধরনের ভিনটেজ জিন্সগুলোর দাম সর্বোচ্চ ১০০ ডলার পর্যন্ত ওঠে। এবারের মতো এমন জিন্স সারাজীবনে মানুষ একবারই পায়।"


সত্যি কথা বলতে ইটন চান নি যে, জিন্সটি বিক্রি হোক, সে উদ্দেশ্যেই চড়া দাম নির্ধারণ করেন। কিন্তু এর বিরলতার জন্যই নিলামে এটি সবার আকর্ষণ কেড়ে নেয়।


জিন্সটি আমেরিকার ইতিহাসের একটি অন্ধকার পর্বের সাক্ষ্যও বহন করে। এর ভিতরের পকেটে ছাপার হরফে লেখা আছে, 'দ্য অনলি কাইন্ড মেড বাই হোয়াইট লেবার' (শ্বেতাঙ্গ শ্রমিকদের দ্বারা নির্মিত একমাত্র ধরন)। 




লিভাইসের একজন মুখপাত্র এর ব্যাখ্যায় জানান, ১৮৮২ সালে মার্কিন কংগ্রেস চীনা বর্জন আইন প্রবর্তনের পরে কোম্পানিটি এই স্লোগান ব্যবহার করে।


সেসময় চীনা শ্রমিকদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষেধ ছিল। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল থেকে জানা যায়,  পরবর্তীতে ১৮৯০ সালে লিভাইস এই স্লোগান এবং নীতি উভয়ই বাদ দেয়। আর আইনটি ১৯৪৩ সালে বাতিল ঘোষণা করা হয়।


এদিকে জিন্সটি নিয়ে স্টিভেনসনের সামনে কী পরিকল্পনা? "আমরা চাইব সত্যিকার আগ্রহী কোনো ব্যক্তি এই জিন্সজোড়া কিনে নিক। এরপর এর ঠাঁই হোক তার পছন্দসই কোনো জাদুঘরে, যেমন স্মিথসোনিয়ান বা মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টে।"


আপাতত লস অ্যাঞ্জেলেসে স্টিভেনসনের তত্ত্বাবধানেই থাকছে এটি; যে কেউ চাইলে 'অ্যাপয়েন্টমেন্টের' ভিত্তিতে জিন্সটি দেখতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.