রং দেখে ভয়ে কাঁপেন এই গ্রামের লোকজন! কেন জানেন?

ODD বাংলা ডেস্ক: রং ছাড়া দোল বা হোলি কল্পনা করা যায় না। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার কাসমার ব্লকের দুর্গাপুর গ্রামের মানুষ হোলি খেলে না বহু বছর ধরে। হোলির দিনে আবীর, রং কেউ ছুঁয়েও দেখে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে এই ঐতিহ্য। এর পেছনে গ্রামের মানুষ অনেক ধরনের বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে।

কথিত আছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে দুর্গাপুরে রাজা দুর্গাপ্রসাদ দেব রাজত্ব করতেন। গ্রামের ঐতিহাসিক দুর্গা পাহাড়ের পাদদেশে ছিল তার হাভেলি। তিনি খুব জনপ্রিয় ছিলেন। পদ্মা (রামগড়) রাজার সঙ্গে যুদ্ধে তার পরিবারের প্রতিটি সদস্য নিহত হয়। সেদিন ছিল হোলির দিন। এই দুঃখে মানুষ তখন থেকে হোলি খেলে না এই গ্রামে। মনে করা হয়, হোলি খেললে গ্রামে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

দুর্গা পাহাড়ী বদরাও বাবা নামেও পরিচিত। গ্রামবাসীদের মতে, বদরাও বাবা রং পছন্দ করেন না। এই কারণেই পূজোয় বলি হলে ছাগল ও মোরগও সাদা রঙের দেওয়া হয়। বদরাও বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রামে রং-আবির ব্যবহার করলে গ্রামবাসীদের তার ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। গ্রামে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তাতে মানুষ ও পশুপাখির ক্ষতি হয়।

বদরাও বাবা যাতে রাগ না করেন তাই গ্রামে হোলি উদযাপন করা হয় না। কিছু গ্রামবাসী আরো বলে যে হোলি না খেলার পেছনে আরো একটি কাহিনী রয়েছে। প্রায় ২০০ বছর আগে কিছু মালহার এখানে এসে দুটি ভিন্ন জায়গায় বাসা বেঁধেছিল। মালহাররা প্রচুর হোলি খেলে। ওই দিনে মৃত্যু হয় ৫ মালহারের। গ্রামের দুই ডজনের বেশি গরু মারা যায়। অন্যান্য অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। এই ঘটনার পর গ্রামের মানুষ হোলি খেলা চিরতরে বন্ধ করে দেয়।

হোলি উদযাপন না করার রীতি শুধুমাত্র গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ। গ্রামবাসীরা যে অন্য কোথাও হোলি খেলতে পারবে না তা নয়। কিন্তু হোলির দিন যদি দুর্গাপুরের লোকেরা অন্য গ্রামে যায় এবং সেখানকার লোকজন জানতে পারে যে তারা দুর্গাপুরের, তবে প্রত্যেকে তাদের বিশ্বাসকে সম্মান করে এবং তাদের রং দেয় না।

গ্রামের বাইরে থাকলে এখানকার যুবক-যুবতীরাও হোলি খেলেন। কিন্তু যে বছর তারা গ্রামে থাকেন সেই বছর তাদের গায়ে রঙের ছোঁয়াও লাগে না। দুর্গাপুর জনসংখ্যার দিক থেকে বোকারো জেলার কাসমার ব্লকের বৃহত্তম গ্রাম।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.