পৃথিবীকে ৪৮ বার প্রদক্ষিণ করেছেন যে নারী

ODD বাংলা ডেস্ক: ১৯৬১ সালে ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মহাকাশচারী হিসাবে মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্থান পেলেন। এরপর তৎকালীন সোভিয়েত ঠিক করল আরো একটি অভিযানের। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ নারী মহাকাশচারীদের নির্বাচন ও বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রায় ৪০০ নারীর মধ্য থেকে নানা ধাপে চূড়ান্ত করা হয়েছিল পাঁচ নারীকে।

এই পাঁচজনের একজন ছিলেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। শুরু হলো ১৮ মাসের কঠিন ট্রেনিং। অবশেষে ১৯৬৩ সালের ১৬ই জুন ভস্তক ৬ (Vostok 6) যাত্রা করলো মহাকাশে। মহাকাশচারী হিসাবে দ্বিতীয়, নারী হিসাবে প্রথমবার ৭১ ঘন্টা ধরে পৃথিবীকে ৪৮ বার প্রদক্ষিণ করে মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে স্থান পেলেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। সে সময় ভ্যালেন্তিনার বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর।

৬ই মার্চ, ১৯৩৭ সালে রাশিয়ার ইয়ারোস্লাভ অঞ্চলের মাসলেনিকোভো গ্রামে ভ্যালেন্তিনা জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান। পরিবারে সচ্ছলতা ছিল না। আর্থিক অনটনের মধ্যেই বড় হন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার বাবা মারা গিয়েছিলেন। মাত্র ৮ বছর স্কুলে পড়াশোনা করতে পেরেছিলেন ভ্যালেন্তিনা। এরপর তিনি কলকারখানায় কাজ নিয়েছিলেন।

তখনকার সময়ে প্রযুক্তি এত উন্নত না থাকার কারণে মহাকাশচারীদের ক্যাপসুল মাটিতে পড়ার আগে প্যারাসুটে করে তাদেরকে নেমে আসতে হত। মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে কোনও ধারণা না থাকলেও ভ্যালেন্তিনার ১২৬ টি প্যারাসুট লাফের অভিজ্ঞতাই তাকে সুযোগ করে দেয় মহাকাশচারী হিসাবে নিজের নাম সুপারিশ করার জন্য। 

ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর তেরেসকোভা একমাত্র নারী নির্বাচিত হন মহাকাশে যাওয়ার জন্য। সোভিয়েত একসঙ্গে দুইটি মহাকাশ অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছিল। ‘ভোস্তক সিক্স’ মিশনে ভ্যালেন্তিনাকে মহাকাশে পাঠানো হয়। এর পাইলট ছিলেন তিনি। প্রায় ৭০ ঘণ্টার মতো মহাকাশে ছিলেন ভ্যালেন্তিনা, পৃথিবীর চারদিকের কক্ষপথে পরিভ্রমণ করেছিলেন ৪৮ বার।

মহাকাশযানের যে সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভ্যালেন্তিনার পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল সেটি কাজ করতে সমস্যা দেখা দেয়। যদিও সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা দ্রুত একটা বিকল্প সমাধান বের করে ফেলেন এবং ভ্যালেন্তিনা অধুনা মঙ্গোলিয়া, চীন, কাজাকিস্থান বর্ডারের কাছে নামেন। সাধারণ গ্রামবাসীরা তাকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ করলে তিনি যোগ দেন এবং এর জন্যে পরে তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়। কারণ, মহাকাশ থেকে ফেরার পরে প্রথম নিয়ম হলো নিজের মেডিকেল পরীক্ষা করানো।

এরপর তেরেসকোভা আর কোনোদিন মহাকাশে যেতে পারেননি। ১৯৬৩ সালের ৩রা নভেম্বর ভ্যালেন্তিনা নিজের সহকর্মী, মহাকাশচারী এন্ড্রিয়ান নিকোলায়েভকে বিয়ে করেন। তাদের প্রথম মেয়ে এলেনাকে নিয়ে সোভিয়েত মেডিকেল দল যথেষ্ট কৌতূহলী ছিল কারণ, এলেনা বিশ্বের প্রথম সন্তান যার পিতামাতা দুজনেই মহাকাশে সময় কাটিয়ে এসেছেন!

২০০৮ সালে ২৯তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের (বেজিং অলিম্পিক) সেন্ট পিটার্সবার্গ অংশে তিনি মশাল বহন করেছিলেন। সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নানা মর্যাদাপূর্ণ খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। পেয়েছিলেন ‘হিরো অব দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন’,‘দ্য অর্ডার অব লেনিন’ প্রভৃতি সম্মাননা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.