জন্মের পরই বিচ্ছিন্ন যমজ ভাই, ৩৯ বছর পর দেখা

ODD বাংলা ডেস্ক: যমজ ভাই, জন্মের সময়েই একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। আলাদা হওয়ার পর নিজেদের অজান্তেই তারা একদম একই জীবন কাটিয়েছেন। তাদের জীবনের গল্প শুনে মনে হবে, একটি যেন অন্যটির প্রতিচ্ছবি।

তাদের সম্পর্কে যা জানা গিয়েছে, সবই সত্যি। এমনকি ‘ফ্যাক্ট চেক’ও তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে যা দেখা গেল, তা থেকে তাজ্জব অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে, এ সবই কি সত্যি?

জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় আট দশক আগে। ১৯৪০ সালে ওহায়োতে জন্ম হয় এই দুই যমজ ভাইয়ের। তাদের যখন তিন সপ্তাহ বয়স, তখন দুই জনকে দত্তক নেন ওহায়োর দুই পরিবার। লিমার লেওয়িস দম্পতি দত্তক নেয়ার পর তাদের সন্তানের নাম রাখেন জেমস। কাকতালীয় ভাবে, পিকোয়ার স্প্রিঙ্গার দম্পতি তাদের সন্তানের নামও রাখেন জেমস।

দুই দম্পতিই জানতেন যে, তারা যমজ সন্তানদের আলাদা ভাবে দত্তক নিচ্ছেন। তবে দত্তক নেয়ার পর দুই পরিবার একে অপরের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই রাখেননি। এমনই দাবি করা হয়েছে। শুধু ভালো নামেই নয়, তাদের ডাক নামের ক্ষেত্রেও মিল ছিল। দুই জনেরই বাড়িতে তাদের জিম নামে ডাকা হতো বলে দাবি করা হয়েছে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেই নয়, মিল ছিল তাদের পোষ্যের ক্ষেত্রেও। দুই জনেই কুকুর পুষতেন। তারা দুই জনেই তাদের পোষ্যের নাম রেখেছিলেন ‘টয়’।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, স্কুলে পড়াকালীন দুই জিমের প্রিয় বিষয় ছিল অঙ্ক। দুই জনেই বানানে দুর্বল ছিলেন। একই রকম শখ পালন করতেন দুই জনেই। কাঠের উপর নকশা করতে ভালোবাসতেন দুই জন। অস্বাভাবিক মাত্রায় ধূমপান করতেন দুই জনই। একই মডেলের গাড়িও ছিল দুই জনের কাছে। তারা দুই জন শেভ্রলে মডেলের গাড়ি চালাতেন।

তাদের বৈবাহিক সম্পর্কেও সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। তারা দুই জনেই যাদের বিয়ে করেছিলেন, তাদের নাম ছিল একই। লিন্ডা নামের দুই নারীকে বিয়ে করেন দুই জন। দুই জনেরই প্রথম বিয়ে ভেঙে যায়। তারপর আবার তারা বিয়ে করেন। কাকতালীয় ভাবে, তাদের দ্বিতীয় স্ত্রীয়ের নামও একই। দুই জনেরই নাম ছিল বেটি। দুই জিমই পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। এমনকি, তাদের সন্তানদের নামও ছিল এক। দুই জন তাদের পুত্রসন্তানের নাম রেখেছিলেন জেমস অ্যালান।

পেশাগত দিক থেকেও মিল ছিল দুই ভাইয়ের। দুই জনেই নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। জিম (স্প্রিঙ্গার) কাজ করতেন ডেপুটি শেরিফ পদে। জিম (লেওয়িস) কাজ করতেন নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে। এমনকি, ছুটি কাটানোর জন্য দুই জনেরই প্রিয় জায়গা ফ্লোরিডার সমুদ্রসৈকত। জিমের (লেওয়িস) বয়স যখন ৩৭, তখন তার যমজ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে ওহায়ো কোর্টহাউস থেকে জিমের (স্প্রিঙ্গার) ফোন নাম্বার পান। ফোনে যোগাযোগ করার পর তারা জানতে পারেন, তাদের বাড়ির দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার।

অবশেষে ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেখা করেন দুই ভাই। বহু ক্ষণ বার্তালাপও চলে তাদের মধ্যে। তাদের এই অদ্ভুত মিলের কথা জানাজানি হলে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটার গবেষক থমাস বোকার্ড তাদের ডিএনএ থেকে শুরু করে মস্তিষ্ক-তরঙ্গের পরীক্ষা করেন। পরীক্ষার ফলাফল দেখে অবাক হয়ে যান থমাস। দেখেন, সব কিছু একদম একই। এমনকি, ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা করেও দুইজনের একই ফল পাওয়া যায়। তাদের উপর এই গবেষণা ‘জিম টুইনস কেস’ নামে পরিচিত। যমজ সন্তানদের মধ্যে যে অদ্ভুত রকমের টেলিপ্যাথির যোগ রয়েছে, এই দুই ভাইই তার প্রমাণ। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.