চিন্তাবিদ! রবি ঠাকুরের অজানা কথা
ODD বাংলা ডেস্ক: বাঙালির বিশ্বসেরা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি একাধারে সংগীতশিল্পী, লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, দার্শনিকও। বহুগুণে গুণান্বিত তিনি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সব স্থানেই তাঁর বিচরণ। তিনি নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম এশিয়ান। তাঁর সৃষ্টিতে রয়েছে প্রচুর কবিতা, গল্প, নাটক ও উপন্যাস এবং ২ হাজারের বেশি গান। তাঁর সৃষ্টি “গীতাঞ্জলি” ও “জীবন স্মৃতি” বাঙালির কাছে আজও স্মরণীয়।
প্রিয় কবির জীবন নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। তাঁর খাওয়াদাওয়া, পোশাক, চালচলন, শখের কথা বিস্তর আলোচিত রয়েছে। সবকিছুতেই ছিল সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া। নতুনত্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হতো সব আয়োজন। প্রিয় কবির জন্মদিনে প্রতিবারই তাঁকে স্মরণ করেন ভক্তরা।
প্রিয় কবির জন্মদিন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৮৬১ সালে ৭ মে। বাংলা দিনপঞ্জিকা অনুসারে, ২৫শে বৈশাখ। বাংলা আর ইংরেজি সালের তারিখ জটিলতার কারণে প্রতিবছর ২৫শে বৈশাখ, মে মাসের ৭ তারিখে পড়ে না। তবে বাঙালির প্রিয় কবি বলে বাংলা সনের ২৫শে বৈশাখেই উদ্যাপন হয় জন্মদিনটি।
প্রিয় কবির জন্মদিনে তার কিছু অজানা কথা জানাব ভক্তদের
• ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বভারতীয় সেফটি ভল্টে রাখা ছিল সেই অনন্য সম্মাননা। কিন্তু ২০০৪ সালে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারটি চুরি হয়ে যায়। পরে সুইডিশ একাডেমি নোবেলের দুটি রেপ্লিকা ভারতে পাঠায়। যার একটি সোনা দিয়ে তৈরি করা ছিল। অন্যটি ছিল তামার তৈরি।
• রবীন্দ্রনাথের বাবা মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইচ্ছা ছিলে তাঁর ছেলে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করবেন। ইংল্যান্ডের ব্রিংটন পাবলিক স্কুলে ভর্তিও হন রবীন্দ্রনাথ। তবে স্কুলে যেতেন না তিনি। কারণ, তাঁর মন বসত না লেখাপড়ায়। ওই সময় পাঠ্যবইয়ের চেয়ে শেকসপিয়ারের নাটক নিয়ে চর্চাই ছিল তাঁর মূল আগ্রহ।
• রবিঠাকুর চিন্তাবিদ ছিলেন। বিশ্বের নানা প্রতিষ্ঠানে এখনো পড়ানো হয় তাঁর দর্শন। তাঁর সেই সময়ের চিন্তাভাবনা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
• রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের। দীর্ঘ সময় আলাপ হয়েছিল তাঁদের। ঈশ্বর, মনুষ্যত্ব, বিজ্ঞান, সত্য ও সৌন্দর্য নিয়ে তাঁদের বিস্তর আলাপ হয়। তাঁদের সেই কথোপকথন নিয়ে অনেক প্রতিবেদনও প্রকাশ পেয়েছে পরবর্তী সময়ে।
• ১৯১৫ সালে ব্রিটিশরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করে। কয়েক বছর পর জালিয়ানওয়ালাবাগ কাণ্ডে ভারতের বুক রক্তাক্ত হয়। ব্রিটিশদের গুলিতে প্রাণ হারান অসংখ্য নিরীহ মানুষ। সেই ভয়াবহ ও পাশবিক ঘটনার প্রতিবাদে ‘নাইট’, অর্থাৎ ‘স্যার’ উপাধি ত্যাগ করেছিলেন কবিগুরু।
• রবিঠাকুরের ৮টি মিউজিয়াম রয়েছে। ৩টি ভারতে এবং ৫টি রয়েছে বাংলাদেশে। ভারতে মিউজিয়াম রয়েছে রবিঠাকুরের জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। সেটি রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়াম নামে পরিচিত। এ ছাড়া শান্তিনিকেতনে রয়েছে রবীন্দ্রভবন মিউজিয়াম। কালিম্পঙের কাছে মংপু নামের একটি জায়গায় রয়েছে রবীন্দ্র মিউজিয়াম।
• রবীন্দ্রনাথের হঠাৎ শখ হয় আঁকাআঁকি করার। তখন তাঁর বয়স অনেক। শখের বশেই রংতুলি হাতে নিয়ে শুরু করে দিলেন আঁকাআঁকি। তাঁর সৃষ্টিশীলতা ফুটে উঠে সেই ছবিতে। ছবির প্রদর্শনীও হয়। ওই সময় অনেকটাই আত্মতৃপ্ত হন প্রিয় কবি। ছোট বয়সেও ছবি আঁকার চেষ্টা করেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু তা ছিল কাঁচা হাতের আঁকুনি। নিজেরই তা পছন্দ হয়নি। নিজের ছবি আঁকার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে জগদীশচন্দ্র বসুকে চিঠি লিখেছিলেন। ১৯০০ সালের সেই চিঠিতে লেখা ছিল, “পেনসিলের চেয়ে তাঁকে ইরেজার ব্যবহার করতে হয়েছে বেশি।”
• রবীন্দ্রনাথ একটি সম্পূর্ণ ঘরানার গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। তিনি দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা প্রচলিত শিক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করে গড়ে উঠেছিল মুক্ত প্রকৃতিতে। আবদ্ধ ঘরে যে প্রকৃত শিক্ষা হয় না, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন প্রিয় কবি।
• ১৯১২ সালে বাংলার বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে শুরু হয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে প্রাপ্ত নগদ অর্থ বিশ্বভারতীকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করেন। এর জন্য বিশ্বজুড়ে অর্থও সংগ্রহ করেন তিনি।
• ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত যথা ‘জন গণ মন’ এবং ‘আমার সোনার বাংলা’ দুটোই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। এছাড়া শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত ১৯৩৮ সালে মূলত রবীন্দ্রনাথের লেখা একটি বাংলা গানের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়। এটি সিংহলিতে অনুবাদ হয়। পরে ১৯৫১ সালে এটি শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়।
Post a Comment