শিশু কেন কাঁদে?

ODD বাংলা ডেস্ক: ‘আমার বাচ্চা অনেক কান্না করে। কিছুতেই কান্না থামাতে পারি না’—ডাক্তারের চেম্বারে এসে এই সমস্যার কথা বলেন অনেক মা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়ের ধারণা বুকের দুধে পেট ভরছে না অথবা বাচ্চার পেট ব্যথা হচ্ছে, তাই এই কান্না। আসলে কেবল এ জন্য নয়, বরং বিভিন্ন কারণে শিশু কাঁদতে পারে।
কান্নার কারণ ও তার প্রতিকার 

প্রথমেই বলে রাখা দরকার সবক্ষেত্রেই শিশুর কান্নার কারণ থাকে না। জন্মের পর প্রথম তিন মাস শিশু কোনো কারণ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবেই ২৪ ঘণ্টায় ১-৩ ঘণ্টা কাঁদতে পারে। তবে ৩ মাসের বেশি বয়সী শিশু যদি একটানা এভাবে কাঁদে, সেক্ষেত্রে কিছু না-কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। তার শারীরিক যেকোনো অসুবিধাই হতে পারে।

ইনফ্যান্ট কোলিক : জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইনফ্যান্ট কোলিক শুরু হয়। ৩ মাসের কম বয়সী শিশু এ কারণেই সাধারণত কাঁদে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু সন্ধ্যা বা রাতের বেলায় কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে লাল হয়ে যায়। কান্নার সময় হাঁটু ভাঁজ করে রাখে। শিশুর মাথার নিচে হাত রেখে দোল দিলে কিংবা পেটের ওপর শুইয়ে রাখলে অনেক সময় কান্না থেমে যায়। এই কান্না খুবই স্বাভাবিক কান্না, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শিশুর বয়স ৩ মাস পার হলেই এই কান্নাও কমে যাবে।

নাক বন্ধ : শিশুর সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় বলেই শিশু কাঁদতে থাকে। নরসল বা সোলো নামে নাকে ব্যবহারের যে স্যালাইন ড্রপ পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করলে শিশু শ্বাস নিতে পারবে। কান্নাও থামবে।

কানে ব্যথা : অনেক ক্ষেত্রে কানে ব্যথা শিশুর কান্নার কারণ হতে পারে। কাঁদতে কাঁদতে শিশু যদি কানের কাছে তার হাত রাখে বা কান দেখায় তাহলে কানে ব্যথাই কান্নার কারণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অনেক সময় কান থেকে পানি বা পুঁজও বের হতে পারে। এরকম হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

মুখে ঘা : শিশু কিছুই খেতে চায় না। খাওয়ার সময় বেশি কাঁদে। জিভ সাদা হয়ে যায়, অনেক সময় মুখের ভেতর ঘা দেখাও যায়। যদি বাচ্চা খেতে না চায় বা খাবার দেখলে কাঁদতে থাকে তাহলে খুব ভালো করে বাচ্চার মুখের ভেতরটা খেয়াল করতে হবে।

পেটের সমস্যা : শিশুর মল যদি খুব শক্ত হয় তাহলে পেটে ব্যথা হতে পারে। গরুর দুধ খাওয়ালে এক্ষেত্রে মল শক্ত হতে পারে। বাচ্চার খাবারের ধরনটা বদলে ফেললে এ সমস্যা দূর হয়ে যায়। পেটের কোনো ইনফেকশনের কারণে যদি পাতলা পায়খানা হয়, তাহলে পেটে ব্যথা থেকেও শিশু কাঁদতে পারে।

মলদ্বারে ঘা : পায়খানা শক্ত হয়ে ওরাল ফিশার হয়। শিশু পায়খানা করার সময় কাঁদে। পায়খানার সঙ্গে রক্ত লেগে থাকে। এরকম হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রস্রাবে ইনফেকশন : কান্নার সঙ্গে বার বার প্রস্রাব করবে। জ্বরও হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়ান।

ন্যাপি ভিজে যাওয়া : পায়খানা বা প্রস্রাব করে ন্যাপি ভিজিয়ে ফেলে বাচ্চা কাঁদতে পারে। ভেজা ন্যাপি বদলে দিলেই কান্না থেমে যাবে।  

দিনে ঘুমায়, রাতে কাঁদে : যখন শিশু মায়ের পেটে থাকে, তখন দিনের বেলায় মা জেগে থাকে, হাঁটাচলা করে, যার ফলে শিশুর দোলা লাগে আর ঘুমিয়ে পড়ে। আবার মা যখন রাতে ঘুমায় তখন শিশু জেগে থেকে খেলা করে। পেটের ভেতরের এই অভ্যাস জন্মের পরও বেশ কয়েক মাস থেকে যায়। রাতে যখন শিশু জেগে থেকে খেলা করে তখন মা যদি ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে সে কাঁদতে থাকে। আবার তার সঙ্গে খেলা করলে কান্না থেমে যায়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুর কান্না সামান্য অসুবিধার জন্যই হয়। তাই আপনার শিশু কাঁদলেই আপনি ভেঙে পড়বেন না। নিজেই কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.