পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম পোস্ট অফিস সামলাবেন ও পেঙ্গুইন গুনবেন চার নারী

 


ODD বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম পোস্ট অফিস পরিচালনা ও পেঙ্গুইনের সংখ্যা গণনাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের জন্য অ্যান্টার্কটিকার একটি প্রত্যন্ত দ্বীপে যাবেন চার নারী।


গাউডিয়ার দ্বীপের ইতিহাসসমৃদ্ধ অঞ্চল পোর্ট লকরয়-এর দেখাশোনা করার জন্য রেকর্ড সংখ্যক আবেদনকারীকে পেছনে ফেলে চাকরিগুলো লুফে নিয়েছেন  ক্লেয়ার ব্যালান্টাইন, মারি হিলটন, নাটালি করবেট এবং লুসি ব্রুৎজোনে!  বাড়ির আরাম-আয়েশ ছেড়ে এই চারজনকে যেতে হবে এমন একটি অঞ্চলে যেখানে নেই সর্বক্ষণ জল কিংবা ফ্লাশিং টয়লেটের সুব্যবস্থা।


চাকরিপ্রাপ্তদের একজন, সদ্য বিবাহিত নাটালি করবেট নিজের স্বামীকে ছেড়ে যাবেন এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি গিফট শপের দেখাশোনা করতে। লুসির ভাষ্যে- এটাই তার 'একাকী মধুচন্দ্রিমা'!


শূন্য ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রায় বসবাস এবং সারাক্ষণ দিনের আলোতে কাজ করার পাশাপাশি এই চারজনকে থাকতে হবে জেনটু পেঙ্গুইনে ভর্তি এক দ্বীপে। আর এই পেঙ্গুইনদের পর্যবেক্ষণে রাখার দায়িত্বই নিতে যাচ্ছেন হিলটন।  


স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হিলটন বলেন, "এটাই হবে আমার প্রথম অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণ এবং আমি এই শ্বেতশুভ্র মহাদেশটিকে দেখার জন্য দারুণ উত্তেজিত! আমার আসলে কোনো ধারণাই নেই ওখানে পৌঁছানোর পর কী কী হবে, কেমন ঠান্ডা পড়বে, নিজেদেরই বরফ সরিয়ে পোস্ট অফিসে পৌঁছাতে হবে কিনা! আমি একজন সংরক্ষণবাদী জীববিজ্ঞানী, তাই ব্যক্তিগতভাবে পেঙ্গুইন, তিমি ও সীবার্ডের মতো প্রাণীদের দেখার জন্যও ভীষণ আগ্রহ আমার।"


ইউকে অ্যান্টার্কটিক হেরিটেজ ট্রাস্ট (ইউকেএএইচটি) এর দেওয়া বিজ্ঞাপন দেখে এই পদগুলোর জন্য আবেদন করেছিলেন ৬০০০ ব্যক্তি, তাদের মধ্যে শেষ হাসি হেসেছেন এই চার নারী।  আগামী পাঁচ মাস তারা এই দ্বীপেই থাকবেন; একসঙ্গে  বড়দিনের ছুটি কাটাবেন এবং পোর্ট লকরয়ের দেখাশোনা করবেন, যেখানে কিনা বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম পোস্ট অফিস ও জাদুঘর অবস্থিত।


এদিকে সদ্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থ সায়েন্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করা, নবনিযুক্ত পোস্টমাস্টার ব্যালান্টাইনের দায়িত্ব- এ অঞ্চল থেকে প্রতি বছর বিশ্বের একশোটিরও বেশি দেশে প্রায় ৮০,০০০ কার্ড পাঠানোর কাজ পরিচালনা করা।


লিংকনশায়ার থেকে আগত ২৩ বছর বয়সী এই নারী বলেন, "আমি গাউডিয়ার দ্বীপে পা রাখার জন্য এবং পেঙ্গুইনদের পদচারণার শব্দ শোনা ও তাদের গন্ধ নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি। আগামী কয়েক মাস এই জায়গাকেই নিজেই ঘর হিসেবে আপন করে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি আমি।"


এক দশকেরও বেশি সময় খুচরা ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন করবেট। চলতি বছরের জুনে বিয়ে করেছেন তিনি। অন্যদের মতো করবেটও হিমশীতল এই দ্বীপে কাজ করার জন্য বেশ আগ্রহী।


হ্যাম্পশায়ারের বাসিন্দা, ৩১ বছর বয়সী করবেট  বলেন, "বিশ্বের অন্যতম একটি দুর্গম অঞ্চলে, পেঙ্গুইনে ভরা একটা দ্বীপে আমরা ৫ মাস কাজ করবো... এই সুযোগ কে না নিতে চায়? আমি গত জুনেই মাত্র বিয়ে করেছি, তাও আমার স্বামী জর্জকে রেখে এই চাকরিতে যোগদান করেছি। তাই আমার জন্য এটা অনেকটা একাকী মধুচন্দ্রিমার মতোই!"


এদিকে বেজের মূল নেতা হিসেবে ছোট এই দলটির ব্যবস্থাপনা এবং দ্বীপে আগত সব জাহাজের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করবেন ব্রুৎজোনে। আর্কটিক অভিযানের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই নরওয়েজিয়ান দ্বীপপুঞ্জে তিন মাস কাটিয়ে আসা এই বিজ্ঞানী গাউডিয়ার দ্বীপে চাকরি পাওয়াকে তার 'সারাজীবনের স্বপ্ন' বলে আখ্যা দিয়েছেন।


তবে প্রথম ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত এই চার নারীকে সাহায্য করার জন্য এবং সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সাহায্য করবেন ২০১৯/২০ মৌসুমের সাধারণ সহকারী ভিকি ইংলাইজ।


স্কটল্যান্ড থেকে আগত, ৪২ বছর বয়সী ইংলাইজ বলেন, "পোর্ট লকরয় আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটা জায়গা। মহামারির আগে এখানে ৫ মাস কাটানোর পর আবারও নতুন দলটির সাথে এখানে ফিরে যাওয়া এবং তাদেরকে 'অ্যান্টার্কটিকের জাদু'র সাথে পরিচয় করানোটা দারুণ ব্যাপার হবে! "

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.