কলকাতার আকাশে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ, সেরা ১২টি ছবি, একনজরে দেখে নিন মহাজাগতিক এই ঘটনার পরিপূর্ণ চিত্র

 


ODD বাংলা ডেস্ক: সারাক্ষণই ছিল এক উন্মাদনা। বিশেষ করে দিন কয়েক আগেই সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। কিন্তু কলকাতা থেকে তা সেভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়নি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ৮ নভেম্বরের পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ কলকাতা শহর এবং তার শহরতলি থেকে দেখা যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন বিভিন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। এমনকী কীভাবে এই গ্রহণ কলকাতার আকাশ থেকে প্রত্যক্ষ করা যাবে সে কথাও জানিয়েছিলেন তাঁরা। 


চাঁদ-পৃথিবী এবং সূর্য যখন একই সরলরেখায় থাকে তখনই এই গ্রহণ হয়। সূর্যের আলোয় পৃথিবীর আলোকিত হলেও, পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় চাঁদ। আর সেই জন্যই চাঁদের উপরে আলো পড়ে না। এর ফলে চাঁদকে আমরা আকাশে দেখতে পাই না। চাঁদ যদি পুরোপুরি সূর্যের আলো না পায় তাহলে হয় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। আর চাঁদ যদি আঁশিকভাবে সূর্যের আলো থেকে কিছু সময়ের জন্য বঞ্চিত থাকে তাহলে সেটিকে আর পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ বলা হয় না। 



মূলত ৩ ধরনের চন্দ্রগ্রহণ রয়েছে। এদের একটি হল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ, একটি আংশিক চন্দ্রগ্রহণ এবং পেনামব্রাল চন্দ্রগ্রহণ বা উপচ্ছায়া চন্দ্রগ্রহণ। পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণে চাঁদ-পৃথিবী ও সূর্য যখন একই সরলরেখায় থাকে এবং সূর্যের আলো পৃথিবীর আড়াল করে দেয়, যার ফলে পৃথিবীর কালো ছায়া গিয়ে পড়ে চন্দ্রের উপরে। এর ফলে হয় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। 


চাঁদের কিছুটা অংশ হয়তো পৃথিবীর সরলরেখায় এল। আর এর জন্য সূর্যের আলো পৃথিবী দ্বারা আটকে গিয়ে চাঁদের ওই অংশে তা পড়ল না। এতে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ হয়। এতে চাঁদকে দেখে আধ খাওয়া আপেলের মতো মনে হয়। 



পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণে সূর্যের লাল আলো আরও গাঢ় হয়ে চাঁদের উপরে গিয়ে পড়ে। আর এই সময়ে চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছে থাকে। যার জন্য অন্য সময় চাঁদকে হলুদ দেখালেও এই সময় লাল বর্ণের ছটা বেশি হয়। এই প্রবল রক্তাভ চাঁদকেই ব্লাডি মুন বলে চিহ্নিত করা হয়।


জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় সূর্যের যে ৭ রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ঢুকে আসে, তারমধ্যে নীল আলোর তরঙ্গ মাত্রা সবচেয়ে কম। যার জন্য বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পরই নীল আলোর প্রতিফলন চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। এই আলোর আলোকিত হয় আকাশ। যার জন্য আকাশকে নীল দেখি আমরা। ঠিক একইভাবে সূর্যের বাকি রশ্মিদের মধ্যে লাল আলো তরঙ্গমাত্রা সবচেয়ে বেশি। এটি অনেকদূর পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। চাঁদের উপরে এই সূর্যের এই লাল আলো গিয়েই পড়ে। পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছে থাকায় লাল আলোর তরঙ্গমাত্রার গাঢ়ত্ব আরও গাঢ় হয়ে যায়। যা দেখতে লাগে লাল বলের মতো। এই জন্য পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণে ব্লাডি মুন শব্দের উৎপত্তি। 



পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণে চাঁদকে কতটা লালাভ দেখা যাবে তা কিন্তু নির্ভর করছে দূষণের মাত্রার উপরেও। বায়ুমণ্ডলে কতটা ধূলিকণা, জলকণা রয়েছে তার উপরে। এই জিনিসগুলোর মাত্রা বায়ুমণ্ডলে যত বেশি থাকবে চাঁদ তার লালাভ রঙ ততটাই হারাবে। তবে, আপেক্ষিক আদ্রতা এবং তাপমাত্রাও অনেকাংশে চাঁদের এই রক্ত বর্ণকে নিয়ন্ত্রণ করে। 


পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়ে গিয়েছিল বিকেল ৩.২৭ মিনিটে। কলকাতায় তা প্রত্যক্ষ হওয়ার ছিল পৌঁনে চারটা নাগাদ। স্বাভাবিকভাবেই এই সময় দিনের আলো থাকে। ফলে খালি চোখে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ প্রত্যক্ষ করার কথা ছিল না। বাইনোকুলার এবং শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহণ প্রত্যক্ষ করা যাবে বলে বলা হয়েছিল। 



আস্তে আস্তে আলো কমে এলে খালি চোখে প্রতিভাত হয় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। বহু মানুষ এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণকে ভিডিওবন্দি করে সোশ্যাল মিডিয়াতেও শেয়ার করেন। ব্লাডি মুন মানে লাল রঙের চাঁদ কলকাতার আকাশে সেভাবে দেখা দেয়নি। এর জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূষণ এবং ধোঁয়াশা-কেই দায়ী করেছেন। 


কলকাতায় মূলত গ্রহণ শেষ হয়ে যায় সন্ধে সাড়ে ছটা নাগাদ। কলকাতা ছাড়াও আগরতলা,গুয়াহাটি, কোহিমা,  ভূবনেশ্বর, পাটনা, শ্রীনগর  দিল্লি, গুরুগ্রাম, নয়ডা, চণ্ডীগড়,মুম্বই, নাগপুর, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু এবং চেন্নাই থেকে এই চন্দ্রগ্রহণ দেখা গিয়েছে। 


২০২২ সালের এটাই শেষ পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। এরপর ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ফের চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। তবে, এদিনের এই চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে মানুষের মধ্যে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। বছরের শেষ চন্দ্রগ্রহণকে প্রত্যক্ষ করার আনন্দটা চেটেপুটে খেয়ে নিতে চেয়েছিল তামাম কলকাতাবাসী। 


পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণে একাধিক লোককথা চলিত রয়েছে। কেউ বলেন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের আগেই খাওয়া-দাওয়া এবং পূজো আর্চা সেরে নিতে। এমনকি পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শেষ হওয়ার পর আগে থেকে তৈরি করে রাখা খাবার শাস্ত্রমতে গ্রহণ করা উচিত নয় বলেও উল্লেখ রয়েছে বিভিন্ন পুরাণ শাস্ত্রে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.