কাউকে হাই তুলতে দেখলে নিজেরও হাই ওঠে কেন

 


ODD বাংলা ডেস্ক: দিনে মানুষ কয়বার হাই তোলে? একবার? দুইবার? উত্তরটা হলো দিনে ২০ বার। এটি কিন্তু আবার বেশ সংক্রামক। আপনার সামনে কেউ হাই তুলছে, এটা দেখে আপনি কিন্তু বসে থাকতে পারবেন না। হাই নিজেও দু-একটা তুলে ফেলবেন।


একটু অদ্ভুত হলেও এটিই ঘটে। আবার দেখবেন এই লেখাটি পড়তে পড়তেই আপনার দুই-চারবার হাই তোলা শেষ।  

যাই হোক, আসলে এখানে ঘটনাটা কী? শরীরে বা আমাদের মস্তিষ্কে আসলে কী পরিবর্তন ঘটে, যে কারণে এমনটা হয়? চলুন একনজরে দেখে নিই।  


কেন আমরা হাই তুলি?


** এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা


হাই আসলে আমরা মানুষরাই তুলি না। শিম্পাঞ্জি, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি-সবাই হাই তোলে। যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি বা অলস সময় কাটাই, তখন এটা বেশি হয়। সাধারণত হাই তোলা বিরক্তি, অলসতা বা ক্লান্তির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সেলিব্রিটি হিপনোথেরাপিস্ট এবং হাই বিশেষজ্ঞ দীপ্তি টেইটের মতে, এর পেছনে আরো অন্য কারণ থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘হাই তোলা হলো আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহের একটি পথ। ’


** হাই তুললে মাথা ঠাণ্ড থাকে


যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের অ্যালবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, হাই তোলা মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখার একটি কার্যকর প্রক্রিয়া। আমাদের মস্তিষ্ক এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ক্যালোরি পোড়ায় এবং ফলস্বরূপ প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। এটা অনেকটা কম্পিউটারের মতো। গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের মস্তিষ্ক যখন ঠাণ্ডা থাকে তখন আরো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। শরীরে রক্তপ্রবাহ বাড়ানো এবং শীতল বাতাস গ্রহণের একটি কার্যকর উপায় হলো হাই তোলা।


** এটি আসলে একটি প্রশংসা


এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাই তোলা মানে ঘুম আসা নয়, বরং ঘুমের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করার একটি উপায়। হিপনোথেরাপিস্ট এবং হাই বিশেষজ্ঞ দীপ্তি টেইট এখানে যোগ করেন, ‘যখন আমাদের গ্রাহকরা হাই তোলে তখন এটাকে আমি ভালোভাবে দেখি। কারণ এর মানে হলো, তারা সক্রিয় এবং আমি তাদের যে তথ্য দিচ্ছি তারা সেটা বোঝার চেষ্টা করছে। ’


অন্য কেউ হাই তুললে নিজেরা হাই তুলি কেন?


ঘুম বিশেষজ্ঞ এবং ইজি স্লিপ গাইড ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা পেনি অ্যালব্রাইটের মতে, ‘যখন কেউ হাই তোলেন সেটি একটি ভালো ও স্বাস্থ্যকর লক্ষণ। ’


আমরা হাই কেন তুলি? এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সাইকোথেরাপিস্ট এবং নির্বাহী প্রশিক্ষক ডেসারি সিলভারস্টোন ব্যাখ্যা করে বলেন, এর জন্য আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন দায়ী।  


তিনি বলেন, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে,  মানুষের প্রতিবিম্ব নিউরন আছে। এটি এক ধরনের মস্তিষ্কের কোষ। যা আমাদের বুঝতে এবং অন্যদের আবেগের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করে।


তিনি আরো যোগ করে বলেন, ‘যখন আমরা দেখি অন্য ব্যক্তি কোনো অনুভূতি অনুভব করে বা একটি কাজ করে, তখন আমাদের মস্তিষ্কের প্রতিবিম্ব নিউরনগুলো এমনভাবে জ্বলে ওঠে, তখন মনে হয় ওই একই আবেগ আমরাও অনুভব করছি। ফলে ওই কাজ নিজেরাও করে ফেলি। ’


সহজ কথায়, এই নিউরনগুলো অন্য ব্যক্তির মানসিক অবস্থা বুঝতে এবং ওই ব্যক্তি কী অনুভব করছে তা বুঝতে সাহায্য করে। আমরা যখন কারো সঙ্গে যত বেশি সংযুক্ত থাকি তত বেশি সম্ভাবনা থাকে আমাদের প্রতিবিম্ব নিউরনগুলো এই কাজ করার। এ কারণেই কারো হাই তোলা দেখলে নিজেরও হাই ওঠে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.