শিক্ষিকার জন্য হুইলচেয়ারে ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেন যুবক

 


ODD বাংলা ডেস্ক: মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধন দৃঢ় হয় ভালোবাসার জন্য। ভালোবাসাই মানুষের ধর্ম। ঘৃণার চাষ করে কতিপতি স্বার্থপর। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান নিয়ে হইচই করে তারা। ভাতের বদলে অভুক্তের হাতে ধর্মের আফিম ধরায়। কেরালার বিশেষ ভাবে সক্ষম যুবক কান্নানের মতো সহজ মানুষরাই ছড়িয়ে আছেন ভারতজুড়ে। হুইলচেয়ারে ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছেন কান্নান। যাচ্ছেন বিখ্যাত শবরীমালা মন্দিরে। বিপদের দিনে পাশে থাকা মুসলিম শিক্ষিকা শমিরার জন্য দেবতা আয়াপ্পার আশীর্বাদ আনতে চলেছেন।


আমগাত্তুচালিল কান্নানের মতো মানুষের কাছে আজও ধর্মের চেয়ে বড় মনুষ্যত্ব, কৃতজ্ঞতা, দায়িত্ব বোধ। সেই কারণেই এই কঠিন যাত্রা। কেরলের মাল্লাপুরম জেলা থেকে শবরীমালা মন্দির, ৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে ঠিক ১২ দিন। পামপা নদী তীরে পৌঁছানোর পর কাজে আসবে না হুইলচেয়ার। এরপর পাহাড় চড়ে দেবতার আয়াপ্পার মন্দির পৌঁছাবেন বিশেষ ভাবে সক্ষম কান্নান। প্রশ্ন হচ্ছে, শমিরার জন্য এত কষ্ট কেন করছেন যুবক?


উত্তর পেতে ফিরতে হবে ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বরে। সেদিন লরি থেকে ভারী গাছের গুড়ি নামাতে গিয়ে অন্ধকার ঘনায় পেশায় দিনমজুর কান্নানের জীবনে। দুর্ঘটনায় একটি পা বাদ যায়। অন্য পা প্যারালাইজ হয়। মুহূর্তে বদলে যায় কর্মঠ মানুষটার জীবনের গ্রাফ। এরপর থেকে ভরসা হয় হুইলচেয়ার। কাজকর্ম বন্ধ হয়। এই অবস্থায় তিন মেয়ে ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তখনই পাশে দাঁড়ান ভারতের কনডোট্টির সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপিকা শমিরা। যিনি জাতীয় সার্ভিস স্কিমের কো-অর্ডিনেটরও। শমিরার উদ্যোগেই মাথার উপর ছাদ তৈরি হয়। বাড়ি হয় যুবকের। 


এবার তাই শিক্ষিকা শমিরার মঙ্গলকামনায় হুইলচেয়ারে শবরীমালায় পাড়ি দিয়েছেন বিশেষ ভাবে সক্ষম কান্নান। যুবক জানিয়েছেন, বারো দিন সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত যাত্রা করবেন। এরপর বিশ্রাম নেবেন কোনো মন্দিরে অথবা বিশ্রামালয়ে। ফের সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত যাত্রা করবেন। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পৌঁছাবেন নদী তীরে। তারপর হুইলচেয়ার থেকে নেমে পাহাড় চড়ার পালা।


বর্তমানে কান্নানের স্ত্রী একটি হোটেলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন, মেয়ে প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী। দুর্ঘটনার পর দীর্ঘদিন কিছুই করে উঠতে পারছিলেন না তিনি নিজে। তবে সম্প্রতি লটারির টিকিট বিক্রি করা শুরু করেছেন। মোটের উপর চলে যাচ্ছে জীবন। যার জন্য অধ্যাপক শমিরার প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি।


সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কান্নানের কথায়, ‘শিক্ষিকার জন্যই তার জীবনে পরিবর্তন হয়েছে। উনি আমার ও পরিবারের কাছে ঈশ্বরের সমান। আমি আয়াপ্পার একনিষ্ঠ ভক্ত। এই যাত্রা শিক্ষিকার জন্যই। আমার স্থির বিশ্বাস প্রার্থনায় আয়াপ্পা সাড়া দেবেন, শিক্ষিকাকে আশীর্বাদ করবেন।’ অন্যদিকে অধ্যাপিকা শমিরা বলেন, ‘চার বছর আগে তাকে বাড়ি তৈরিতে সাহায্য করেছিলাম। এখনো বৃষ্টি হলেই আমাকে ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানান।’

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.