নিলামে ওঠে নাম, সৌদিতে বেড়ে ওঠা তরুণী এখন ভারতের দাপুটে পাইলট

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ভারতীয় হলেও হানা বড় হয়েছেন সৌদি আরবে। বছর চারেক আগেও সেখানে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল না। রক্ষণশীলতার সেই আঁতুড়ঘরে বিমান নামিয়েছেন হানা।

কখনো পরির মতো ডানা মেলে, কখনো বাহারি ফুলে চুল সাজিয়ে যেন অপ্সরা সেজেছেন তিনি। নিজের রূপে নিজেই গিয়েছেন মজে। টুইটারে সে সব ছবি দেখার পর যেন চোখ ফেরানো দায়। বলছি, হানা মহসিন খানকে নিয়ে। এই ভারতীয় রমণী পেশায় পাইলট। গত কয়েক বছর ধরে বিমান চালাচ্ছেন তিনি।


ভারতে নারী পাইলটের সংখ্যা হাতে গোনা। তাদের মাঝে অন্যতম পরিচিত মুখ হানা। টুইটারে তার কয়েকটি ছবি সম্প্রতি নতুন করে শিরোনামে উঠে এসেছে।  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই) মাধ্যমে নিজের কিছু ছবি তৈরি করেছেন হানা। যা তার বাস্তবের রূপে দিয়েছে স্বর্গীয় ছোঁয়া। সমাজমাধ্যমে তাকে নিয়ে চর্চা থামছে না। ৩২ বছর বয়সি হানার পেশা তার জীবনে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ তিনি এমন একটি দেশে বড় হয়েছেন, যেখানে বিমান ওড়ানো তো দূর, গাড়ি চালানোও ছিল গর্হিত অপরাধ। 



ভারতীয় হলেও বাবার কাজের সূত্রে সৌদি আরবে থাকতেন হানা। সেখানের কাটিয়েছেন জীবনের দীর্ঘ সময়। মেয়েদের জন্য কড়া নিয়ম চালু ছিল সে দেশে। বছর চারেক আগেও সৌদি আরবে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল না। গাড়ি চালাতে পারতেন কেবল পুরুষরাই। ছোটবেলা থেকে তেমনটাই দেখে এসেছেন হানা। ২০১৮ সালে সৌদি আরবে কয়েক দশক পুরনো এই নিয়ম তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানে মেয়েরাও পারেন স্টিয়ারিং হাতে গাড়ি চালানোর স্বাধীনতার স্বাদ চেখে দেখতে। 



চলতি বছরের শুরুর দিকে বিমান নিয়ে একবার সৌদি আরবে যেতে হয়েছিল হানাকে। যে দেশে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল না, সেখানে আস্ত একটি বিমান নামিয়েছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে তখনই ভাগ করে নিয়েছিলেন নিজের অনুভূতি। সৌদিতে বিমান নামিয়ে হানা টুইটারে লিখেছিলেন, 'শেষ বার আমি যখন এখানে ছিলাম, মেয়েরা গাড়ি চালাতে পারত না! এটা একটা স্বর্গীয় অনুভূতি। বিমান নিয়ে এখানে নামতে পেরে খুব ভালো লাগছে।'


আদ্যোপান্ত নারীবাদী হানা বরাবর মেয়েদের অধিকারের দাবিতে সরব হয়েছেন। সক্রিয় সমাজকর্মী হিসাবে তাকে বারবার নারী, শিশু এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণির সপক্ষে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। সমাজমাধ্যমে বরাবর সক্রিয় হানা। নানা সময়ে নানা খবরাখবর, নিজের অনুভূতি কিংবা ছবি ও ভিডিও ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে পোস্ট করেন তিনি। 



‘সুল্লি’ বিতর্কে একবার নাম জড়িয়েছিল হানার। সে বিতর্কে বিস্তর জলঘোলা হয়। বিশেষত মুসলমান সমাজে সুল্লি বিতর্ক অসন্তোষের জন্ম দিয়েছিল। ‘গিট হাব’ নামের একটি অ্যাপকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। অভিযোগ, এই অ্যাপটিতে ৮০ জন মুসলিম নারীর মুখের ছবি তুলে ধরে নিলামে বিক্রির ডাক দেওয়া হয়েছিল। ৮০ জনের মধ্যে ছিলেন হানাও। মুসলমান সমাজে ‘সুল্লি’ শব্দটি মেয়েদের প্রতি অসম্মানজনক। ৮০ নারীকে নিলামে তুলে সেই ব্যবসায়িক প্রস্তাবের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সুল্লি ডিল অফ দ্য ডে’।


বিতর্ক যখন মধ্যগগনে, একাধিক সংবাদমাধ্যমে কলম ধরেছিলেন হানা। খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করেছিলেন ‘সুল্লি’দের, তাদের নিলামে তোলা এই অ্যাপের। নিজের পেশা নিয়ে হানা বলেন, ভারতে যতো নারী বিমানচালক রয়েছেন, পৃথিবীর আর কোনো দেশে ততো নেই। আমরা সত্যিই ভালো কাজ করছি। তবে আরো ভালো করার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.