তিনমাস পর পর রক্তদান করেন রোনালদো, বহু চ্যারিটির সঙ্গে জড়িত তিনি

 


ODD বাংলা ডেস্ক: পর্তুগালের ফুটবল মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। প্রয়াত পপস্টার মাইকেল জ্যাকসনের বাড়ি দেখিয়ে তার বাবাকে বলেছিলেন তাদেরও একদিন এমন একটি বাড়ি হবে। তবে রোনালদোর বাবা হেসে সে কথা উড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন,‘আকাশকুসুম স্বপ্ন না দেখতে’।

বর্তমান সময়ের স্টাইলিশ ড্যাশিং ফুটবলারই শুধু নন সবচেয়ে ধনী ফুটবলারদের তালিকায় নাম রয়েছে তার। সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যমে তার জনপ্রিয়তা ঈর্ষনীয়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আলোকিত জীবনের অনেক গল্প তার ভক্তদের অজানা। 


বন্যার্তদের জন্য রোনালদোর অনন্য উদ্যোগ

সময়টা ২০০৫ সাল। সেই সময় রোনালদো টিভিতে সুনামি থেকে বেঁচে যাওয়া ইন্দোনেশিয়ান এক বালককে তার জার্সি পরিহিত অবস্থায় দেখে দুঃখ পান। তিনি সেই বালকের নাম জোগাড় করেন। মার্তুনিস নামক সেই বালক ও তার বাবাকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন রোনালদো। ইন্দোনেশিয়ায় গিয়েছিলেন সেখানকার সুনামিদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করতে। নিজেস্ব খেলার সরঞ্জামাদি নিলাম করে ৬৬ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করে অর্থ সাহায্য তুলতে অংশ নেন। ইসরাইল ফিলিস্তিনের শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করায় রোনালদো ইসরাইলি খেলোয়াড়দের সাথে জার্সি বিনিময় করতে রাজি হননি। দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত পোলিশ এক শিশুর চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় ভারও বহন করেছেন রোনালদো। আর্তমানতার সেবায় এমন বহু চ্যারিটির সাথে জড়িত ফুটবল জিনিয়াস। 



নিয়মিত রক্তদান করেন রোনালদো

রোনালদোর সবচাইতে বড় মানবিকতার উদাহরণ হল তার রক্তদান। প্রতি তিনমাস পর পর রক্তদান করেন তিনি। এই কারণে তার শরীরে কখনো ট্যাটু করেন না।


ভালো পিতা

রোনালদোর সন্তানদের তার পাঁচ সন্তানের জনক। এরা হচ্ছে- জুনিয়র ক্রিশ্চিয়ানো, দুই যমজ মেয়ে ইভা,মাতেও, এবং অ্যালানা। জুনিয়র ক্রিশ্চিয়ানোর জন্ম হয়েছে সারোগেসির মাধ্যমে।  মার্কিন যুক্তরাট্রের এক মহিলার গর্ভ ভাড়া করে প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। ফলে জুনিয়রের মায়ের পরিচয় গোপন আছে রোনালদোর দুইমেয়ে ইভা, মাতেও-এর জন্মও সারোগেসির মাধ্যমে হয়েছিল। তবে রোনালদোর প্রেমিকা আর্জেন্টাইন- স্প্যানিশ মডেল জর্জিনা রড্রিগেজের গর্ভেও যমজ সন্তান এসেছিল। যমজ ছেলেটির মৃত্যু হয় জন্মের পরপরই। বেঁচে যায় অ্যালানা। তবে নবজাতক ছেলের মৃত্যুর শোকে মুষড়ে পড়েন রোনালদো। সন্তানের শোক কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগেছে তার। লিওনেল মেসি, সুয়ারেজের মত তারকারা সে সময় রোনালদোর শোকে শোকাচ্ছন্ন হয়ে বন্ধুকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। 



ছেলে জুনিয়র ক্রিশ্চিয়ানোর স্কুলে একদিন হঠাৎ করে প্যারেন্ট মিটিংয়ে উপস্থিত হন। রোনালদোকে দেখে শিক্ষক কর্মচারীর অভিভাবকরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। শেষে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেয়। রোনালদোর বাবার মদ্যপানের অভ্যাস এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তাকে একজন আদর্শ বাবা হওয়ার জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে বলে জানা যায়। তিনি চান সন্তানরা সুশিক্ষিত হয়ে উঠুক। 


মাদকাসক্ত ভাইকে সাধারণ জীবনে ফিরিয়েছেন

পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে অর্জিত ব্যক্তিগত সব পুরুষ্কার এবং দলগত শিরোপা নিয়ে রোনালদো পর্তুগালে “CR7 Musesu” নামে একটি যাদুঘর খুলেছেন। তার একমাত্র বড়ভাই হুগো সেটা দেখাশোনা করেন। ভাই হুগো ছিলেন  মাদকাসক্ত। ভাইকে মাদকাসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনার জন্যই মিউজিয়াম খোলেন এই তারকা ফুটবলার। হুগো এখন সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত। আদরের একমাত্র ছোটভাই রোনালদো তার জীবনধারাকেই বদলে দিয়েছেন। 


রোনালদোর আয়ের উৎস প্রচুর। রিয়াল মাদ্রিদ এবং নাইকির সাথে চুক্তি ছাড়াও রোনালদোর আয়ের বড় একটি উৎস বিজ্ঞাপন। বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিশ্বজুড়ে নামকরা সব ব্র্যান্ড তাদের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত করেছে রোনালদোকে। এই তারকার সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণ ছিল নাইকির সাথে। বহুজাতিক এই সংস্থাটি মূলত পরিধেয় সামগ্রী তৈরি করে থাকে। রোনালদোর সঙ্গে তারা এক বিলিয়ন ডলারের আজীবনের চুক্তি করেছে। নাইকি বাদেও রোনালদো আরমানি, ক্যাস্ট্রল, কোকাকোলা, কেএফসি, কোনামি ও এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন।


কিশোর বয়স থেকেই রোনালদো স্বপ্ন দেখতেন, একদিন তাদের অনেক বড় একটি বাড়ি থাকবে। যেখানে থাকবেনা কোন অভাব অনটন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকবেন। বাবাকে একদিন তার সেই স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন।  আজ এত বছর পর শুধু একটি বড় বাড়ি কেন, রোনালদোর বহু বাড়ি কেনার সামর্থ্য রয়েছে। তবে ঘুরেফিরে বাবার জন্যই তার মন কাঁদে। নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে দূর করে দেন লাখো মানুষের দুঃখ দুর্দশা। কিন্তু তার একটি আফসোস রয়েই গেছে, বাবা বড় বাড়িটা দেখাতে পারেননি রোনালদো।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.