Christmas 2023: কে এই সান্তা ক্লজ? এর নেপথ্যে রয়েছে এক অজানা ইতিহাস

ODD বাংলা ডেস্ক: বছর শেষ হতে হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। আর তার আগেই রয়েছে আরও এক বিশেষ উৎসব, বড়দিন। আর বড়দিন মানেই কেক, উপহার, সুন্দর করে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো আরও অনেক কিছু। খ্রীষ্ট ধর্মের এক বিরাট উৎসব হলেও ক্রিসমাস কিন্তু দেশ-কাল-সীমানা-ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এক বিশে উৎসবে পরিণত হয়েছে। 

আর এই ক্রিসমাসের রাতেই সান্তা ক্লজ আসে ছোটদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে, আর তাই ক্রিসমাসের আগের রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছোটদের ঝোলানো মোজায় রেখে আসে উপহার। আর ক্রিসমাসের এই অন্যতম আকর্ষণ হল এই সান্তা বুড়ো। কিন্তু জানেন কি, কে এই সান্তা ক্লজ আর কোথা থেকেই বা উৎপত্তি হল এই সান্তা ক্লজের। 

সান্তা ক্লজের উৎপত্তির নেপথ্যে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। লাল পোশাক, লাল টুপি পরা সাদা ধবধবে দাড়ি-ভ্রু-ওয়ালা এই ব্যক্তির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় খ্রিষ্টীয় ৩ শতকে। সান্তা ক্লজের শুরু হয় সেন্ট নিকোলাস নামে এক সন্ন্যাসীকে ঘিরে। ২৮০ নাগাদ এশিয়া মাইন যা, বর্তমানে তুরস্কের পাতারা-এ তাঁর জন্ম হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তাঁর অসম্ভব সততা এবং দয়াশীলতার জন্য সবাই তাঁকে পছন্দ করত। বিপুল সম্পদের অধিকারী এই ব্যক্তি সবসময় গরীব ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করতেন। 

কথিত আছে, একবার তিনি ৩টি মেয়েকে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং তাদের বিয়ের যাবতীয় খরচ বহন করেছিলেন। সেন্ট নিকোলাসের এইরূপ দানশীল-মহানুভবতার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে তিনি মানুষের রক্ষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে থাকেন। রেনেসাঁ পর্যন্ত ইউরোপে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন সেন্ট নিকোলাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঠারোশো শতকের শেষের দিকে পরিচিতি পেতে শুরু করেন সেন্ট নিকোলাস। 

ডাচ ভাষায় সেন্ট নিকোলাসকে ডাকা হতো সিন্টার ক্লাস (সেন্টনিকোলাসের সংক্ষিপ্ত রূপ) নামে। এই সিন্টার ক্লাস থেকেই সান্তা ক্লজ নামটির উৎপত্তি হয়েছে। ক্রিসমাসে বিশেষ করে কচিকাচাদেরকে উপহার দেওয়ার রীতি শুরু হয় উনিশশো শতকের গোড়ার দিকে। ১৮২০ সাল থেকে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দোকানে দেওয়া হত বিজ্ঞাপন, পত্রিকায় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হত যেখানে সান্তা ক্লজের ছবিও ছাপা হতো। এরপর ১৮৪১ সালে ফিলাডেলফিয়ার একটি দোকানে একটি মানুষরূপী সান্তা ক্লজ তৈরি করা হয় যা দেখতে ভিড় জমিয়েছিল কয়েক হাজার শিশু। আর এরপর থেকেই শিশু এবং তাদের বাবা-মায়েদের আকৃষ্ট করতে দোকানে দোকানে জীবন্ত সান্তা ক্লজ সাজানো হয়।

প্রসঙ্গত, আজকের সান্তা ক্লজের যে রূপ চোখে পড়ে, তা কিন্তু এসেছে, An Account of a Visit from St. Nicholas- শীর্ষক একটি কবিতা থেকে। ১৮২২ সালে ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুর নামে একজন ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে এই কবিতাটি লেখেন। লাল পোশাক, কালো বেল্ট সাদা বর্ডার দেওয়া লাল টুপি পরা সাদা দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি ৮টি হরিণ টানা স্লেজ গাড়িতে উড়ে উড়ে ছোটদের বাড়ি গিয়ে উপহার বিতরণ করছে- এমনই এক চিত্র ফুটে উঠেছিল তার সেই কবিতায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই কবিতা খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। 

তবে সান্তা ক্লজের কাছ থেকে শুধু গিফ্ট পাওয়াই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিশুরা সান্তার জন্যে এক গ্লাস দুধ ও প্লেটে বিস্কুট সাজিয়ে আলাদা করে রেখে দেয়। ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ায় সান্তা ক্লজকে দেওয়া হয় বিয়ার অথবা মিষ্টি পিঠে। ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেনে দেওয়া হয় পায়েস ও দারুচিনি। আয়ারল্যান্ডে সান্তার জন্যে রাখা হয় ক্রিসমাসের বিশেষ পুডিং ও দুধ। এইভাবে সারা বিশ্ব জুড়ে ক্রিসমাসের আগের রাতে বাচ্চাদের ঝোলানো মোজা রংবেরঙের উপহারে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে- যা আজকের দিনে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় রীতি। তবে এটি গল্প-কাহিনি হলেও শিসুদের বিশ্বাস যে, সত্যিই ক্রিসমাসের আগের রাতে সান্তা আসেন এবং তাদের উপহার দেয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.