মানুষের মতো কেন কথা বলে ময়না-টিয়া?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: মানুষের কথা হুবহু নকল করতে পারার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত ময়না ও টিয়া পাখি। পাখিপ্রেমীদের কাছে দুইটি পাখিই বেশ কাঙ্ক্ষিত। সহজে পোষ মানিয়ে এদের ভালো-মন্দ, যা শেখানো হয়, তাই চটপট শিখে ফেলে। এই বিশেষ গুণের কারণে তাদের নিয়ে কৌতুহলেরও শেষ নেই। আর এই কৌতূহল থেকেই তোতাপাখি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। জানিয়েছেন ময়না, টিয়ার কথা শেখার রহস্য সম্পর্কে।

মূলত সিরিনক্স ও ব্রেইনের বিশেষ অ্যাক্টিভিটির কারণেই এই পাখিগুলো কথা বলতে পারে। টিয়া কিংবা ময়নার মানুষের মতো ভোকাল কর্ড কিংবা ল্যারিনক্স নেই। তবে তাদের গলায় ভোকাল কর্ডের বদলে ট্রাকিয়ার নিচে রয়েছে সিরিনক্স। এটি শ্বাসনালির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি প্রত্যঙ্গ। টিয়া কিংবা ময়না শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যবহৃত শ্বাসনালি দিয়ে বাতাস বের করার সময় নালির পেশিগুলোকে প্রয়োজন অনুযায়ী সংকুচিত ও প্রসারিত করে মানুষের কথার মতো শব্দ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে এরা নিজেদের ফ্লেক্সিবল টাং এবং ঠোঁটও ব্যবহার কর। আর কথা বলার সময় খানিকটা মাথা বাঁকা করতেও দেখা যায়।


এ পাখিগুলোর ব্রেনে রয়েছে একটি বিশেষ অঞ্চল, যা  পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রেইনের ইন্টারকানক্টেড রিজিয়নের কারণে শুধু নকলই নয়, শব্দ শুনে তা মনে রাখতে ও নিজের ইচ্ছে মতো মডিফাই করতে পারে ময়না, টিয়া। অন্যান্য পাখি নিজেদের মধ্যে কল দিতে পারলেও মানুষের কথা নকল করতে পারে না। 


মজার ব্যাপার হলো, অন্যান্য পাখিদের ক্ষেত্রে মাত্র একটি সং সিস্টেম থাকলেও অলমোস্ট সব প্যারাকিটে এই সং সিস্টেমের বাইরে আরো একটি নার্ভ বা সার্কিট রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে এটি টিয়া পাখিকে এক্সট্রা ফ্লেক্সিবিলিটি দেয় যার কারণে এরা কথা শিখতে, মনে রাখতে ও বলতে পারে। এই ধরণের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই টিয়া পাখি চিৎকার-চেঁচামেচি, আবৃত্তি করতে এমনি বকা দিতেও পারে!


ময়না, টিয়ার এতো এতো পজিটিভ কথা শুনে প্রথমেই যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হলো, এরা যা বলে তা কি বুঝে বলে নাকি সবই মুখস্ত বুলি? জানা গেছে, নিজেদের প্রজাতির মধ্যে বিভিন্ন কল ও গানের মাধ্যমে তারা একে অপরের সঙ্গে কমিউনিকেট করে, নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে জানান দেয়। আর এভাবে তারা নিজস্ব গোত্রের মধ্যে সোশ্যাল বন্ড ক্রিয়েট করে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে এরা নিজেদের প্রজননের ক্ষেত্রে সঙ্গীকে আকর্ষণ করারও চেষ্টা করে।


অন্যদিকে, যখন বন্য ময়না, টিয়াকে ক্যাপ্টিভেট করা হয়, তখন তারা কথা বলার মাধ্যমে মূলত স্বজাতির অনুপস্থিতিতে মানুষের সঙ্গে সামাজিক বন্ধন স্থাপন করার চেষ্টা করে। আর এ কারণেই সহজে পোষ মানিয়ে এদের কথা শেখানো যায়।


তবে সবচেয়ে ভালো ও সুন্দরভাবে কথা বলে ‘কঙ্গো আফ্রিকান গ্রে প্যারট’ নামে পরিচিত একজাতীয় আফ্রিকান তোতাপাখি। ময়না, টিয়ার বাইরে কাকতাড়ুয়াও কথা বলতে পারে। অর্থ পুরোপুরি না বুঝলেও মানুষের ঠোঁট নাড়ানো দেখে সেটাই নকল করে মানুষকে সঙ্গ দিতে পারে এরা। আর এ কারণেই বিশ্বব্যাপী পাখিপ্রেমীদের কাছে ‌এরা বেশ কাঙ্ক্ষিত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.