অভিশপ্ত রত্ম কিনে নিজের করুণ মৃত্যু ডেকে এনেছিলেন ব্যবসায়ী

 


ODD বাংলা ডেস্ক: হীরা কেন্দ্র করে যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস আছে। আবার হীরাকে কেন্দ্র করে ইতিহাসে জন্ম নিয়ে নানা রকম গল্প। এমন রাচটি রত্নের গল্প জানা যাক, যেগুলো ইতিহাসে অভিশপ্ত হীরা হিসেবে চিহ্নিত।

নীল হীরক খণ্ড বা নীল হীরক অভিশপ্ত রত্নের তালিকার শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। ফরাসি বণিক জ্যঁ-ব্যাপটিস্ট ত্রাভেনিয়ে নীল রঙের হীরাটি কিনেছিলেন  ভারত থেকে। এটি ১৬৬৮ সালের কিছু আগের ঘটনা। কথিত আছে, ত্রাভেনিয়ে নাকি হোপ ডায়মন্ড কেনার কিছুদিন পরেই মারা যান। যদিও এমন কোনো ঘটনা প্রকৃতপক্ষে ঘটেনি। ৮০ বছরেরও বেশি সময় বেঁচে ছিলেন ত্রাভেনিয়ে এবং বিশ্বের নানা প্রান্তে গিয়ে আরো অনেক রত্ন কিনেছিলেন এই ব্যবসায়ী। সত্য কথা হচ্ছে, ফরাসি রাজপরিবারে এই দুর্লভ হীরেটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন ত্রাভেনিয়ে। ফরাসি বিপ্লবের আগপর্যন্ত এই হীরাটি ফ্রান্সের বিভিন্ন রাজপুরুষের মাথার মুকুটে শোভা পেয়েছে। ফরাসি বিপ্লবের পর ফ্রান্সজুড়ে লুটতরাজ হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় ১৭৯২ সালের সেপ্টেম্বরে হীরাটি হারিয়ে যায়।


লন্ডনের ব্যবসায়ী ড্যানিয়েল এলিয়াসন ১৮১২ সালের দিকে এই হীরা আবার প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। তবে ততদিনে নতুন করে কেটে এর জেল্লা আরো বাড়ানো হয়েছে। কয়েক হাত ঘুরে শেষে এটি কিনে নিয়েছিলেন লন্ডনের রত্ন সংগ্রাহক ও ব্যাংকার হেনরি ফিলিপ হোপ। সেই থেকেই এই দুর্লভ হীরের নাম হয়ে যায় ‘হোপ ডায়মন্ড’।


এর রত্ন ঘিরে তৈরি হতে থাকে নতুন আরো গল্প। এভালিন ওয়ালশ ম্যাকলিন হোপ ডায়মন্ড কিনেছিলেন। এরপরেই  নিজের জীবনে ঝড় এসেছিল তার। জানা যায়, এভালিনের করুণ মৃত্যু হয়েছিল।


হোপ পরিবারের দখলে দীর্ঘদিন থাকার পর বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এটি কিনে নিয়েছিলেন পিয়েরে কারতিয়ে। এরপর মার্কিন ধনকুবের এভালিন ওয়ালশ ম্যাকলিনের স্বামী এডওয়ার্ড বিলে ম্যাকলিন হীরকখণ্ডটি কিনে তাকে উপহার দিয়েছিলেন।


ম্যাকলিন এটি কিনেছিলেন ১৯১১ সালের জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে। এর দাম ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ডলার। বর্তমানে  তা প্রায় ৫০ লাখ ডলার মূল্যমানের। কথিত আছে, এভালিনের কাছে হীরাটি বিক্রির জন্যই প্রথম অভিশাপের প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন পিয়েরে কারতিয়ে। এতে এভালিন বেশ আকৃষ্ট হয়েছিলেন।


তবে হোপ ডায়মন্ড এভালিনের জন্য শাপে বর হয়নি। কেনার পর থেকে এভালিনের পরিবারে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। যেমন: এভালিনের এক ছেলে মারা যান গাড়ি দুর্ঘটনায়, তার স্বামী পালিয়ে যান অন্য এক নারীর সঙ্গে এবং পরে তার করুণ মৃত্যু হয়।


এমনকি এভালিনদের পারিবারিক মালিকানাধীন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট দেউলিয়া হয়ে যায়। এর মধ্যেই এভালিনের মেয়ের মৃত্যু হয় অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে। এর ঠিক পরের বছরই মারা যান এভালিন নিজে। পরে ঋণ শোধ করতে গিয়ে বিক্রি হয়ে যায় তার সব রত্ন ও অলংকার।


বর্তমানে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের জাদুঘরে সাজিয়ে রাখা আছে হোপ ডায়মন্ড। ১৯৫৮ সালে এই হীরাটি স্মিথসোনিয়ানে দান করা হয়। প্রতিবছর লাখ লাখ দর্শনার্থী হোপ ডায়মন্ড দেখতে আসেন। জাদুঘরে স্থান পাওয়ার পর থেকে অবশ্য হোপ ডায়মন্ডের ‘অভিশাপ’ নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.