নবগঙ্গার তীরেই ছিল সন্ন্যাসীদের আবাস, ইতিহাসের সাক্ষী সিদ্ধেশ্বরী মঠ
ODD বাংলা ডেস্ক: নদীর নাম নবগঙ্গা। স্বকীয় স্রোতে আবহমান এই নদীর তীরেই কালিকাতলা শ্মশানের অবস্থান। যা সিদ্ধেশ্বরী মঠ ও মন্দির নামেও পরিচিত। গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই স্থানটি এক সময় ছিল সন্ন্যাসীদের তপস্যা স্থল। কাল-যুগ ভেদে জায়গাটি বদলে গেছে অনেকখানি।
মাগুরা জেলা শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার আঠারখাদা গ্রামে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী মঠ ও মন্দির। প্রাচীনকাল থেকেই এই শ্মশানে একটি মঠ এবং সিদ্ধেশরী মাতার মন্ত্রে-মন্ত্রাঙ্কিত শিলাখন্ড ও কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল।
সপ্তদশ শতকে এবং তার আগেও এখান থেকে নবগঙ্গা ধরে পূর্ন্যাত্না ব্যক্তিরা তীর্থে যেতেন। সে কারণে ওই সময় স্থানটিতে বহু সাধুজনদের সমাগম ঘটতো। এক সময়ে রঙ্গমাচার্য নামে বর্তমান চট্রগ্রাম অঞ্চলের এক সন্যাসী সিদ্ধেশ্বরী মঠের মঠ-স্বামী ছিলেন। বহুকাল পরে যখন ব্রহ্মান্ডগিরি বা ব্রহ্মানন্দগিরি নলডাঙ্গার অধিশ্বর শ্রীমন্ত রায় বা রনবীর খাকে দীক্ষিত করেন, সেই সময় থেকে তিনি এই কালিকাপুর সিদ্ধেশরী মঠে এসে বসবাস শুরু করেন।
ওই সময়ে মঠে সন্ন্যাসীদের বাস করার মতো তেমন কোনো আশ্রয়স্থল ছিল না। তখন নলডাঙ্গার অধিশ্বর শ্রীমন্তরায় দীক্ষা গুরু ব্রহ্মান্ডগিরির আদেশে পূর্ববর্তী মঠে সাধুগণের বাসোপযোগী আশ্রম নির্মাণ করেন।
সিদ্ধেশ্বরী মঠ ও মন্দিরের পুরোহিত সুশান্ত ব্যানার্জী বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরের পেছনে পুরাতন একটি ঢিবি ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে নতুন একটি মন্দির নির্মানের জন্য ঢিবিটি খনন কাজ শুরু করা হয়। খননের এক পর্যায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে প্রচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের কিছু নিদর্শন।
সিদ্ধেশ্বরী মঠ ও মন্দিরের সভাপতি হাসি কুরি বলেন, কয়েক বছর আগে মন্দিরের যেটুকু অংশ খনন করা হয়ে ছিল; সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কারুকার্যময় নানা রকমের ইট। যার মধ্যে রয়েছে দেবতাদের বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের নকশা, ফুল, গহনার নিদর্শন। ধারনা করা গেছে নিদর্শনগুলো পাঁচ’শ বছর আগের পুরাকির্তী। সে সময় পুরাতন এ নিদর্শন দেখতে সিদ্ধেশ্বরী মঠে ভিড় করেছিলেন শত শত নারী পুরুষ।
ওই খনন কাজে অংশগ্রহণকারীদের একজন ছিলেন জগদিশ চন্দ্র। তিনি জানান, নানা নকশা খচিত ইটগুলো প্রায় হাজার বছর আগেকার হবে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর বলতে পারবে এটি আসালে কত বছর আগের ইট। প্রতিটি ইটই টেরাকুটা পুড়ামাটির নানা কারুকার্জময় নকশায় তৈরি। তাছাড়াও এখান থেকে নকশা, ফুল, গহনার নিদর্শন পাওয়া গেছে।
মাগুরা জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ডা. কাজী তাসুকুজ্জামান বলেন, মোঘল আমলে ব্রহ্মানন্ড গিরি নামে একজন সেবায়েত এখানে বসবাস করতেন। সে সময়ে নলডাঙ্গার জোতদার সুর নারায়ণসহ তার পরিবারের সদস্যরা ওই সেবায়েতের কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেন। দীক্ষা গ্রহণের পর সুর নারায়ন নলডাঙ্গার রাজা হন। সুর নারায়ন রাজা হওয়ার পর খুশি হয়ে সেখানে ২৫০ বিঘা জমি দান করেন। পাশাপাশি পূজা অর্চনা ও সন্নাসীদের বসবাসের জন্য মন্দির ও ঘর নির্মাণ করেন। সিদ্ধেশ্বরী মঠ ও মন্দির একটি ঐতিহাসিক স্থান।
Post a Comment