মাশরুমের যৌগ: সাহায্য করে ক্যান্সার রোগীদের ডিপ্রেশন নিরাময়ে



 ODD বাংলা ডেস্ক: মাশরুমে বিদ্যমান হ্যালুসিনোজেন ক্যান্সারের রোগীদের ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি কমাতে সাহায্য করে বলে জানা গেছে নতুন দুটি গবেষণা প্রতিবেদনে। উভয় গবেষণায় এমনটাই দেখানো হয়েছে যে, নির্দিষ্ট কিছু মাশরুম প্রজাতিতে সিলোসাইবিন (Psilocybin) নামক হ্যালুসিনোজেনিক যৌগ থাকে যার একটি মাত্র ডোজ ক্যান্সার রোগীদের মানসিক যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। এর প্রভাব দ্রুত পড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদী হয়।


গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের সিলোসাইবিন ঔষধ হিসেবে দেয়া হয় তাদের ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটি একদিনেই অনেকটা কমে যায়। উভয় গবেষণাতেই অংশগ্রহণকারী রোগীদের ৮০ শতাংশের মধ্যেই এর একটি ডোজের প্রভাব পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত থাকতে দেখা যায়।


৩০ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী একজন শেরি মার্সি বলেন যে, “মনে হল যেন এক নিমিষেই নিয়তির কালো মেঘ দূর হয়ে গেল”। তিনি আরো বলেন, “আমি আশ্চর্য হয়েছি এবং আমার পরিবার ও বাচ্চাদের সংস্পর্শ ফিরে পেয়েছি”। মার্সির জীবন সংহারি রোগ এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার শনাক্ত হয় ২০১০ সালে। মার্সি বলেন, “এর আগে আমি বাসায় একা বসে থাকতাম এবং নড়াচড়াও করতে পারতাম না। এই গবেষণার ফলে অনেক পার্থক্য তৈরি হয়েছে এবং এটি স্থায়ী হয়েছে”।


গবেষকেরা বলেন, “যদি নতুন এই উদ্ভাবনটি ভবিষ্যতের গবেষণায় আরো অনেকের মধ্যেই ইতিবাচক ফল নিশ্চিত করে তাহলে সিলোসাইবিন থেরাপি ক্যান্সার রোগীদের ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি নিরাময়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে”। ক্যান্সার রোগীদের ৪০ শতাংশই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়।


জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন এর আচরণগত জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ও গবেষক রোল্যান্ড গ্রিফিথ একটি বিবৃতিতে বলেন, “জীবন সংহারি রোগটি নির্ণীত হলে তা মনস্তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে, এর পাশাপাশি বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতায় ভোগা ও খুবই সাধারণ লক্ষণ”। তিনি আরো বলেন, “অস্তিত্ববাদের উদ্বেগে ভোগা এই ধরণের মানুষেরা প্রায়ই আশাহীন বোধ করে এবং জীবনের অর্থ সম্পর্কে এবং মৃত্যুর পরে কী ঘটবে সে বিষয়েও চিন্তিত হন”।


নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ল্যাঙ্গুন মেডিকেল সেন্টারের সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ সেন্টারের ডাইরেক্টর ও সাইকিয়াট্রিস্ট এবং গবেষক ডা. স্টিফেন রোজ বলেন, “নতুন এই গবেষণায় ক্যান্সার সংক্রান্ত মানসিক মর্মপীড়ার যত্নে কার্যকরী রূপান্তরের সম্ভাবনা আছে”।


এটা মনে রাখতে হবে যে, গবেষণায় রোগীদের সিলোসাইবিন ঔষধটি দেয়া হয়েছিলো প্রশিক্ষিত কর্মীদের তত্ত্বাবধানে। এবং তাদের রক্তচাপ ও মেজাজ খুব কাছে থেকেই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিলো। গবেষকেরা কোন এক্সপেরিমেন্টাল সেটিং ছাড়া এই ঔষধ গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন না।


এই ঔষধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে, গবেষণায় চিকিৎসার সময় কিছু রোগীর ক্ষেত্রে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, অস্থায়ী উদ্বিগ্নতা এবং প্যারানয়া হতে দেখা গেছে। তবে নতুন গবেষণায় কোন মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়নি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.