শরীর ডিটক্স করে এই প্রাণায়াম, জেনে নিন সঠিক পদ্ধতি
ODD বাংলা ডেস্ক: এই পন্থাটি সঠিক ভাবে মেনে চললেই সমস্ত শারীরিক সমস্যার সমাধান আপনার হাতের মুঠোয় থাকবে। বাবা রামদেবের দৌলতে প্রাণায়াম এখন সকলের পরিচিত। তবে বিভিন্ন ধরনের প্রাণায়ামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনই একটি প্রাণায়াম হল ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম। লোহারেরা যে ভাবে তীব্র গতির হাওয়ার মাধ্যমে উষ্ণতা সৃষ্টি করে লোহাকে শুদ্ধ করে, ভস্ত্রিকা প্রাণায়ামের মাধ্যমে ঠিক সে ভাবেই মন শুদ্ধ হয় ও শারীরিক অসুস্থতার বাধা দূর হয়। যোগাসনের গ্রন্থেও ভস্ত্রিকা প্রাণায়ামের উল্লেখ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ভস্ত্রিকা প্রাণায়ামের অভ্যাস করার সময় অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের সাহায্য নিতে ভুলবেন না। এই প্রাণায়ামের তীব্রতা এত বেশি, যদি সঠিক ভাবে না-করা হয়, তা হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে প্রশিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করে এই প্রাণায়াম করবেন।
ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করার পদ্ধতি
১. শান্ত পরিবেশে সিদ্ধাসন, বজ্রাসন বা পদ্মাসনের মতো আসনে বসুন।
২. চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণের জন্য শরীর শীথিল করুন। মুখ বন্ধ রাখুন।
৩. হাত থাকবে জ্ঞান মুদ্রায়।
৪. এবার ধীর গতিতে শ্বাস গ্রহণ করুন ও জোরে শ্বাস ছাড়ুন।
৫. এর পর তীব্র গতিতে শ্বাস গ্রহণ করে তীব্র গতিতেই শ্বাস ছাড়তে হবে।
৬. ভস্ত্রিকা প্রাণায়ামের সময় নিজের বুক জোরে জোরে ফোলাতে ও সংকুচিত করতে হবে।
৭. তিনটি পৃথক গতির শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে এই যোগাভ্যাস করা যেতে পারেন। প্রথম ক্ষেত্রে ২ সেকেন্ডে ১ বার শ্বাস গ্রহণ করুন, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ১ সেকেন্ডে ১ বার শ্বাস গ্রহণ করুন, তৃতীয় ক্ষেত্রে ১ সেকেন্ডে ২ বার শ্বাস গ্রহণ করতে হয়।
৮. ধীরগতিতে প্রাণায়াম শুরু করবেন। প্রতিদিন ৩০ বার শ্বাস-প্রশ্বাস চালাবেন।
৯. চার থেকে পাঁচ বার এই প্রক্রিয়া করুন।
১০. প্রথম প্রথম এই প্রাণায়ামে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ১৫ বার করে বেশি শ্বাস-প্রশ্বাস চালান।
এই প্রাণায়ামের সময় যে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে
১. উচ্চরক্তচাপের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই প্রাণায়াম করুন।
২. ভস্ত্রিকা প্রাণায়ামের আধ ঘণ্টা আগে ও পরে জল পান করবেন না।
৩. অতিরিক্ত জল তৃষ্ণা পেলে ২ ঢোক ঈষদুষ্ণ জল পান করতে পারেন।
৪. সকালে এই প্রাণায়াম করা উচিত। সন্ধ্যা বেলা করার জন্য ৪-৫ ঘণ্টা আগে খাবার খেতে হবে।
৫. এই প্রাণায়ামের সময় মাথা ঘোরা শুরু করলে থেমে যান এবং শবাসন করুন।
৬. হৃদরোগ, মাথাঘোরা, মস্তিষ্কে টিউমার, চোখে ছানি, অন্ত্র বা পেটে আলসার থাকলে ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করবেন না।
৭. গরমকালে ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করার পর সিথলী বা সিতকারী প্রাণায়াম করা উচিত, যাতে শরীর খুব বেশি গরম না-হয়।
ভস্ত্রিকা প্রাণায়ামের উপকারিতা
১. এই প্রাণায়াম করলে শরীরের সমস্ত বিষাক্ত পদার্থ শেষ হয়ে যায়। কফ, পিত্ত ও বাত দোষের মধ্যেও ভারসাম্য বজায় থাকে। ফুসফুসে দ্রুত গতিতে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রবাহ হওয়ায় রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিবর্তনও দ্রুত হয়। এ কারণে হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, শরীর গরম হয় এবং বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। পাচনতন্ত্রও টোন হয়।
২. ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম ফুসফুসের কার্বন-ডাই-অক্সাইজের পরিমাণ কম করে। অ্যাস্থমা বা ফুসফুসের অন্যান্য সমস্যা থাকলে এই প্রাণায়াম অভ্যাস করতে পারেন। তবে অ্যাস্থমার রোগীরা প্রশিক্ষকের রক্ষণাবেক্ষণে ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করবেন।
৩. ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম গলা ফোলা কমায় এবং কফ জমতে দেয় না।
৪. এই প্রাণায়াম লাগাতার অভ্যাস করে গেলে পেটের চর্বি কম করা যায়। আবার প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করলে ওজন কম করতে পারনে।
৫. খিদে বাড়াতে সাহায্য করে এই প্রাণায়াম।
৬. নাড়ী প্রবাহকে শুদ্ধ করে এবং স্নায়ু তন্ত্রের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম।
Post a Comment