নীরব ঘাতক ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ, যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না

ODD বাংলা ডেস্ক: ফ্যাটি লিভার রোগটি বিশ্বজনীন। সারা বিশ্বেই এর দেখা মেলে। যকৃতে চর্বি জমাকে ফ্যাটি লিভার বলে। মানুষ বুঝতেই পারেন না যে লিভারে ফ্যাট জমলে তা গুরুতর আকার নেয়। ফ্যাটি লিভার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে—অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ও নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ মদ-বিয়ার পান করার ফলে হয়ে থাকে। নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ওজন বেশি থাকা, ডায়াবেটিস, বাইরের খাবার বেশি খাওয়া, ব্যায়াম না করার কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের মানুষের নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার প্রবণতা বেশি। এই দুই ফ্যাটি লিভার থেকে প্রথমে হেপাটাইটিস বা লিভারে প্রদাহ হয়। তারপর তা সিরোসিসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রথমেই ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ জানতে পারলে অনেক গুরুতর সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
ফ্যাটি লিভার থেকে একবার লিভার সিরোসিস হলে, শতকরা ১৫ ভাগ রোগী সাত বছরের মধ্যে আর শতকরা ২৫ ভাগ দশ বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণের ঝুঁকিতে থাকেন।

ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কম গুড কোলেস্টেরল বা এইচডিএল, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, কার্বোহাইড্রেট ও চর্বির বিপাকে সমস্যার কারণে যকৃতে চর্বি জমে। সঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ না করলে ধীরে ধীরে লিভারের কার্যক্ষমতা লোপ পায় যা লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যানসারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। এই তিনটির মধ্যে সঠিক খাদ্যাভ্যাসই সবচেয়ে জরুরি।

ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ

অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া হলে লিভারে চাপ পড়ে। হজমের সমস্যা হয়। খাবারে অরুচি থাকে। বিলিরুবিনের পরিমাণ অজান্তে বেড়ে গেলে এই সমস্যা হয়। যে কারণে বছরে একবার বিভিন্ন পরীক্ষা এবং লিভার ফাংশন টেস্ট করে নেওয়া জরুরি।

ভুঁড়ি যদি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে তাহলে অবধারিত আপনি ফ্যাটি লিভার বাঁধিয়ে বসেছেন।

লিভারে চর্বি জমলে খাওয়ার রুচি থাকে না। সঙ্গে বমি বমি ভাব, কখনো বমি, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, দুর্বল লাগা এসব থাকে। আর তাই কোনো কাজ করতেও ইচ্ছে করে না।

ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হলে মাথাব্যথা, ডিপ্রেশন, মন খারাপ এসবও হতে পারে।

হজমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি সমস্যা হতে পারে।

প্রতিদিন মদ্যপান করলে সেখান থেকেও বাড়ে লিভারের সমস্যা। এছাড়াও হরমোনের ওষুধ, ব্যথার ওষুধ অ্যান্টিবায়োটিক খেলে লিভারের সমস্যা হয়।


ফ্যাটি লিভারে যে সব খাবার খাবেন

সবুজ শাক-সবজি

ব্রোকলি লিভারে চর্বি জমতে বাধা দেয়। পালং শাকসহ সবুজ শাক-সবজি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

প্রদাহ কমায় ও চর্বির মাত্রা ঠিক রাখে মাছ

স্যামন, সার্ডিন, টুনা এবং ট্রাউটের মতো মাছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড বেশি থাকে। ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড লিভারে ফ্যাটের মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমিয়ে আনে।

রসুন

খাবারের স্বাদ বাড়াতে খাবারে রসুন ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ভেষজটি ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত মানুষের শরীরের ওজন এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

দুধ এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার

দুধ থেকে তৈরি ছানা, মাঠা বা ঘোলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। এটি লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। ২০১১ সালে ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে এমন যুক্তির পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন

আখরোট

আখরোটে প্রচুর পরিমাণে থাকে ওমেগা থ্রি। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত যারা আখরোট খেয়েছেন তাদের লিভার ফাংশনের আরও উন্নতি হয়েছে।

তেঁতুল

তেঁতুল খেলে দূর হয় ফ্যাটি লিভার। শুধু ফ্যাটি লিভার নয়, যে কোন ধরনের লিভারের সমস্যা থাকলে তেঁতুল সব থেকে উপকারি। তেঁতুল আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে সঠিক রাখে। এছাড়াও খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করে।

অ্যাভোকাডো

অ্যাভোকাডোতে স্বাস্থ্যকর চর্বি বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যাভোকাডোতে থাকা রাসায়নিক লিভারের ক্ষয় ধীর করে দিতে পারে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ, যা ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।

সূর্যমুখী বীজ

সূর্যমুখী বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই রয়েছে। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা লিভারকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

গ্রিন টি

গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদিও গবেষণার ফলাফল এখনো চূড়ান্ত নয়। গবেষকরা দেখেছেন যে, গ্রিন টি লিভারে চর্বি সঞ্চয় কমাতে পারে এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। এছাড়াও গ্রিন টিতে আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে।

কফি

গবেষণায় দেখা গেছে যে ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্তদের মধ্যে যারা কফি পান করেন তাদের লিভারের ক্ষতি কম হয়েছে। আর যারা কফি পান করেন না তাদের ক্ষতি বেশি হয়েছে। কফিতে থাকে ক্যাফেইন। ক্যাফেইন অস্বাভাবিক লিভার এনজাইমের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

অলিভ অয়েল

স্বাস্থ্যকর অলিভ ওয়েলে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, অলিভ অয়েল লিভারের এনজাইমের মাত্রা কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

ফ্যাটি লিভারে যে সব খাবার খাবেন না

ঘি: যাদের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ঘি, মাখন একরকম বিষ। এর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। যা রক্তে সরাসরি জমতে পারে। সেখান থেকে লিভার, হার্টের সমস্যা হতে পারে। তাই ঘি, মাখন, ডালডা একদম নয়।

কোল্ড ড্রিংক: কোল্ড ড্রিংক বা যে কোনও মিষ্টি কার্বোনেটেড ড্রিমক শরীরের জন্য একেবারেই ভাল নয়। কোল্ড ড্রিংকের মধ্যেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ মিষ্টি। আর তাই শরীরের জন্য কোল্ডড্রিংক একেবারেই ভাল নয়। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা যেমন বাড়ে তেমনই ওজনও বাড়ে।

ভাজা মিষ্টি: ছানার ভাজা মিষ্টি যেমন পান্তুয়া, ল্যাংচা, লেডিকেনি এসব খেতে ভাল লাগে ঠিকই তবে তা শরীরের জন্য একেবারেই ভাল নয়। এর চেয়ে গরম রসগোল্লা কিংবা ফ্রেশ সন্দেশ খেতে পারেন। ঘিয়ে ভাজা মিষ্টি একদমই ছোঁবেন না।

মদ্যপান: মদ্যপান লিভারের জন্য একরকম বিষ। ভুলেও কিন্তু মদ মুখে ছোঁবেন না যদি এই সমস্যা থাকে। এখান থেকে বাড়াবাড়ি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত ক্যালোরি লিভারে জমা হলে শরীরে সমস্যা হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে প্রদাহ জনিত অস্বস্তিও।

চিকিৎসকের মতে, প্রথমে তো সুগার, প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তারপর খাওয়া যাবে না বাইরের খাবার, তেল, বনস্পতি, মাখন ইত্যাদি স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এছাড়া এড়িয়ে যেতে হবে নানা খাবার। তারপর ব্যায়াম করুন দিনে অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট। তবেই ভালো থাকতে পারবেন। অন্যথায় সমস্যা বাড়বে। এছাড়া এখন কিছু ওষুধও এসেছে। জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসই এখানে প্রধান।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.