যে কেউ চাইলে এখন শার্লক হোমসের গল্প লিখতে পারে!



 ODD বাংলা ডেস্ক: গোয়েন্দা উপন্যাসের ধারা ১৮৪০-এর দশকে আবিষ্কৃত হলেও এর শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছেছিল ১৮৮৭ সালে যখন আর্থার কোনান ডয়েল তার আ স্টাডি ইন স্কারলেট উপন্যাসের গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমসকে পরিচয় করিয়ে দেন। পরবর্তী চার দশকে চারটি উপন্যাস এবং অর্ধশতাধিকেরও বেশি গল্প লিখে এই অতিমাত্রিক প্রতিভাবান গোয়েন্দাকে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত গোয়েন্দা হিসেবে স্থায়ি করেছেন ডয়েল।


মঞ্চ ও পর্দায় ২৫০ বারেরও বেশি চিত্রায়িত হওয়া হোমস বুদ্ধিমান হলেও একেবারেই অসামাজিক এবং বিচ্ছিন্ন হিসাবে চিত্রিত করা হয় তাকে, যার সাথে থাকেন তার অবিচল সঙ্গী, জন ওয়াটসন। এখন ১৩০ বছরেরও বেশি সময় এবং অসংখ্য জটিল মামলার পরে হোমস নিশ্চিতভাবেই পাবলিক ডোমেইনে প্রবেশ করেছেন। যার অর্থ যে কেউ এখন হোমস চরিত্রকে নিয়ে কাজ করতে পারবেন। এবং ডয়েল এস্টেটের প্রতিবাদ সত্ত্বেও এটি একটি ভালো ব্যাপার।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কপিরাইট আইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৭৯০ সালে। সেই আইন অনুযায়ী একটি কাজ ২৮ বছর পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকতে পারবে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান আইন অনুযায়ী, ১৯২৪ সালের আগে প্রকাশিত যেকোনো কাজ পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, অন্যদিকে ১৯২৪ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে প্রকাশিত যেকোনো কাজ ৯৫ বছর পর্যন্ত কপিরাইটের আওতায় থাকবে। ডয়েলের বেশিরভাগ কাজ ১৯২৪ সালের আগে প্রকাশিত হলেও হোমসের গল্পের চূড়ান্ত সংকলন 'দ্য কেস বুক অফ শার্লক হোমস' ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়, যা ২০২২ সাল পর্যন্ত হোমস চরিত্রকে চূড়ান্ত সুরক্ষা দিয়েছিল। 


এর অর্থ হলো হোমসের বেশিরভাগ গল্প ইতিমধ্যেই পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে এবং কয়েক দশক ধরে রয়েছে। তারপরেও বছরের পর বছর ধরে ডয়েল এস্টেট দাবি করেছিল যে, যতক্ষণ পর্যন্ত হোমসের কোনও কাজ কপিরাইট সুরক্ষার আওতায় থাকবে, তার চরিত্রগুলোও একইভাবে থাকবে।


২০১৪ সালে আপিলের ৭ম সার্কিট কোর্ট অবশ্য শার্লক হোমস চরিত্রটিকে পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত বলেই রায় দেয়, যেখানে কেস বুকের ১০টি গল্প কপিরাইটের অধীনে থেকে যায়। উদাহরণস্বরূপ: হোমস এবং ওয়াটসন চরিত্র দুইটিকে ব্যবহার করা গেলেও পরবর্তী গল্পগুলোতে চরিত্রের কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন: হোমসের কুকুরের প্রতি ভালবাসা এবং ওয়াটসনের দ্বিতীয় বিয়ে কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত থেকে যাবে।



২০২০ সালে ডয়েল এস্টেট নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে তাদের চলচ্চিত্র এনোলা হোমসের বিরুদ্ধে মামলা করে, যেটি শার্লকের কিশোরী বোনকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। যদিও হোমস চরিত্রটি ব্যবহার করার জন্য স্বাধীনতা রয়েছে, এবং তার বোন এনোলার চরিত্র সম্পূর্ণ আসল চরিত্র, এস্টেট দাবি করে যে চলচ্চিত্রটি (এবং উপন্যাসগুলো যার উপর ভিত্তি করে কাহিনী সাজানো হয়েছে) হোমসের কেসবুক থেকে নেওয়া বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার করেছে। 


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তার ছেলে এবং ভাইকে হারানোর পর ডয়েল তার শেষ হোমসের গল্পগুলোতে হোমসের চরিত্রকে আরেকটু মানবিক করে তুলেছিলেন। তাদের মামলায়, ডয়েল এস্টেট দাবি করেছে, "হোমস আরও বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সে আবেগ প্রকাশ করতে পারে। সে নারীদের সম্মান করতে শুরু করে।" 


জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে হোমসের শেষ গল্পগুলোও পাবলিক ডোমেইনে প্রবেশ করেছে, চরিত্রগুলোও এখন যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে। ফলে একটি অপ্রয়োজনীয় জটিল আইনি কাঠামোর অবসান হলো।


গত বছরের ৩১ দিসেম্বর পর্যন্তও যদি কেউ শার্লক হোমস সম্পর্কে এমন গল্প লিখতো বা এমন কিছু প্রকাশ করতো, যেখানে হোমসকে একজন সহানুভূতিশীল কুকুর প্রেমিক হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে, তাহলে এটি কপিরাইটকে অমান্য করতো। তবে এই সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় সব ধরনের বাধার অবসান হয়েছে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.