শিশুর সঠিক ‘স্লিপ হ্যাবিট’ যেভাবে গড়ে তুলবেন



 ODD বাংলা ডেস্ক: কোনো কিছুর ওপর নির্ভর না করেই শিশু যাতে নিজের মতো করে ঘুমিয়ে পড়ে-এমন অভ্যাস গড়ে তোলাই হলো সঠিক স্লিপ হ্যাবিটের মূল কথা। এখন থেকেই সে চেষ্টা শুরু করুন। কারণ দোল খেয়ে, গান শুনে বা অন্য কোনোভাবে ঘুমোনোর অভ্যাস হয়ে গেলে, মাঝরাতে যখন ঘুম ভাঙবে, আবার ঘুমিয়ে পড়ার জন্য ঠিক এই জিনিসগুলোরই দরকার হবে তার৷ না পেলে তখন ঘুমোবে না। সকালের দিকে ঘুমিয়ে পড়বে এবং এলোমেলো ঘুমের অভ্যাস তৈরি হবে।

ধরুন, আমাদের মাথায় বালিশ দিয়ে ঘুমোনোর অভ্যাস, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যদি দেখা যায় বালিশটি যথাস্থানে নেই, তাকে খুঁজে পেতে মাথার নিচে না দিলে কি ঘুম আসবে? সময়মতো খুঁজে না পেলে ঘুম কেটে যাবে এবং সারাদিন কাজের মাঝে ঘুম পাবে। এও ঠিক সে রকম ব্যাপার। গান শুনে ঘুমোনোর অভ্যাস হলে, যতক্ষণ সেই গান না বাজবে, ঘুম আসবে না। বা যতক্ষণ না মা-বাবাকোলে নিয়ে হাঁটবেন বা দোল দেবেন, সে ঘুমোবে না। আর এ সব করতে করতে দেরি হয়ে গেলে তখনকার মতো ঘুম কেটে যাবে তার৷ দফারফা হবে মা-বাবার ঘুমেরও। এই বিপদ এড়াতে চাইলে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা দরকার।


বাচ্চাকে সাত-তাড়াতাড়ি বিছানায় শুইয়ে ঘুমের জন্য সাধ্য সাধনা না করে যখন ঘুম পাবে তখন শোওয়ান, যাতে সে নিজে থেকে ঘুমিয়ে পড়তে পারে। এই বয়সে বাচ্চারপ্রচুর এনার্জি থাকে। চারদিকের সব কিছু এত মজাদার লাগে যে ঘুমিয়ে পড়ার চেয়ে সে এসব নিয়ে সে মত্ত থাকতে চায়। এই সমস্যা কাটাতে ঘুমের আগে বাচ্চার পছন্দসই কিছু করুন৷ যেমন, সে কোন জামা পরে শুতে চায়, কোন খেলনা রাখতে চায় পাশে বা কোন গল্প শুনতে চায় তা জেনে সে রকম করুন। ঘুমিয়ে পড়া সহজ হবে। অথচ এমন কোনো অভ্যাস হবে না যা মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে উঠে পূরণ করতে হয়।


ঘুমের সহযোগী পরিবেশ তৈরি করা জরুরি কিনা তা নিয়ে দ্বিমত আছে। কেউ মনে করেন আলো নিভিয়ে ঘর ও বিছানা আরামদায়ক করে দেওয়া ভালো। সে সময় খুব বেশি আওয়াজ হওয়া ঠিক নয় ইত্যাদি।  কেউ মনে করেন তার দরকার নেই। বরং ঘরের স্বাভাবিক পরিবেশে বাচ্চা যাতে ঘুমোতে পারে, সেই অভ্যাস হওয়াই জরুরি। তাই আপনার যেটা ঠিক মনে হয়, সহজ বা কার্যকর মনে হয় সেটা করুন। তবে ঘুমের পরিবেশ যাতে নিরাপদ থাকে সেদিকে বিশেষ করে নজর দিন।


একদম ছোট থেকে বাচ্চাকে বাবা-মায়ের সঙ্গে না শুইয়ে বেবিকটে শোওয়াতে বলেন বিশেষজ্ঞরা, বিশেষ করে খাট ছোট হলে বা বাবা-মায়ের শোওয়ার অভ্যাস খারাপ হলে৷ এতে আচমকা চোট লাগা, বালিশ চাপা পড়া, বিছানা থেকে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি বিপদের আশঙ্কা থাকে না।

তবে একটু বড় হলে, দেড়-দু বছর বয়স হয়ে গেলে বাচ্চারা অনেক সময় বেবি কটে শুতে চায় না, রেলিং ধরে উঠে পড়তে চায়৷ ফলে বিশেষ সতর্ক না থাকলে কিছু ক্ষেত্রে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার কটের মধ্যে বেশ কিছু বালিশ, চাদর ও খেলনা রাখা থাকলেও সমস্যা হতে পারে৷ এই সব বিপদ এড়াতে কয়েকটি পথের হদিশ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


অ্যাডজাস্টেবল বেবি কট হলে কটের গদিটাকে একেবারে তলায় করে দিন যাতে কটের উচ্চতা এমন হয় যে সে রেলিং বেয়ে উঠে পড়তে না পারে৷ তবে বাচ্চা আরও বড় হয়ে গেলে এ নিয়ম খাটবে না, বুঝতেই পারছেন। তখন বড় খাটের ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব হলে আরেকটু বড় না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তার খাতিরে সব রকম সাবধানতা নিয়ে নিজেদের সঙ্গেই শোওয়াতে হতে পারে। সফ্ট টয়, অতিরিক্ত বালিশ-বিছানা ইত্যাদি সব বাচ্চার কট থেকে সরিয়ে দিন। নাহলে এসবের ওপর দাঁড়িয়ে সে রেলিং টপকানোর চেষ্টা করতে পারে।


কটের উপর দাঁড়িয়ে লাফালাফি করার অভ্যাস বদলাতে হবে৷ সে শুরু করলে উত্তেজিত হবেন না বা গুরুত্ব দেবেন না। বেশি নজর দিলে, বকলে, হাসলে বা চেচালে, সে বেশি বাড়াবাড়ি করবে ও লাফানো অভ্যাস হয়ে যাবে। তার চেয়ে গম্ভীরভাবে দুই-একবার বলুন চুপ করে বসে থাকতে, চোখে চোখ রেখে, যাতে সে বোঝে এ রকম করলে আপনি আরও রেগে যাবেন।


এসব করেও যদি লাফানো বন্ধ করতে না পারেন, পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, কটের চারপাশে মাটিতে বালিশ বা নরম গদি বিছিয়ে রাখুন, আঘাত লাগতে পারে এমন কোনও কিছু যেন চারপাশে না থাকে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.