প্রচণ্ড তাপদাহে যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন



 ODD বাংলা ডেস্ক: চেহারা ক্রমেই ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছাটাও যেন চলে যাচ্ছে। অফিস যাতায়াতের ধকল যেন আর বইতে পারছেন না। প্রবল গরমে এগুলোকে শুধুই ‘সামার এফেক্ট’ বলে অবহেলা করলে মস্ত ভুল করবেন। বরং এই লক্ষণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছেন মানে আপনার শরীরে থাবা বসাচ্ছে রক্তাল্পতা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় অ্যানিমিয়া।


এই রোগকে বাড়তে দেওয়া মানে শরীরকে ক্রমেই প্রতিযোগিতার ময়দানের বাইরে নিয়ে যাওয়া। শুধু তাই নয়, আধুনিক গবেষণা বলছে, এই রোগ শরীরে বাসা বেঁধে ডেকে আনছে অন্য হাজার উপসর্গ। কাজেই আজই সতর্ক না হলে বিপদ।


অনেকেই ভাবেন চোখের পল্লবের ভিতরের মাংসল অংশটুকু সাদাটে দেখালেই অনেকে ধরে নেন রক্তাল্পতার শিকরা হয়েছেন। কিন্তু সেটা সবসময় ঠিক ধারণা নয়। কী ভাবে রোগ ধরবেন, প্রতিকারই বা কী? রইল রক্তাল্পতার সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য।

রক্তাল্পতার লক্ষণ:


১। ক্লান্তি বা দুর্বলতা হল রক্তাল্পতার সাধারণ লক্ষণ।


২। শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বল্পতা, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। ফ্যাকাসে চামড়া, বুকে ব্যথাও রক্তাল্পতার উপসর্গ।


৩। রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তির অনেক সময় চুল ঝরতে পারে। মূলত আয়রনের অভাবে এমনটা হয়।


৪। রক্তাশূন্যতার ফলে অনেক সময় অবসাদ তৈরি হয়। অনেকের হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যায় এই অসুখে।


কেন হয় এই অসুখ:


মূলত রক্তে রক্তকণিকার উপাদান কমে গেলে, বা রক্তের লোহিতকণিকা নষ্ট হয়ে হলে রক্তাশূন্যতা হয়। চিকিৎসকের মতে, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, অর্শ্ব ইত্যাদি সমস্যায় ভুগলেও রক্তাল্পতা দেখা যায়। ম্যালেরিয়া, যক্ষা, যকৃত বা কিডনির সমস্যাও এই রোগকে বয়ে আনে। আবার ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি থেকেও এই রোগ হতে পারে। ছোটদের ক্ষেত্রে কৃমি এর বড় কারণ। এই বিষয়ে সতর্ক না হলে শিশুদের শরীর ক্রমেই দুর্বল হবে।’’


সম্প্রতি ‘আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’-এর ‘অটোলারিঙ্গোলোজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’ নামক জার্নালে একটি গবেষণার এসব জানানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৩ লক্ষ পাঁচ হাজার ৩৯৯ জনের উপর গবেষণা চালিয়ে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন রক্তাশূন্যতায় ভোগা মানুষ অনেক বেশি শ্রবণের সমস্যায় আক্রান্ত হন।


রোগ নির্ণয়:

রক্তাল্পতা নির্ণয়ের সহজ উপায় রক্তপরীক্ষা করানো। মূলত, রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করে লোহিত কণিকা, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা জেনে নেওয়া হয়। তারপর চলতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। খেতে হবে আয়রন সাপ্লিমেন্ট।


ঘরোয়া উপায়:

‘আমেরিকান সোসাইটি অফ হেমাটোলজি’-র গবেষণা বলছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাদ্যাভাসের কারণেই শরীরে আয়রন ঘাটতি হয়। অথচ অনেকেরই জানা নেই যে, প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষের দৈনিক ৮ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন। আর মহিলাদের প্রয়োজন দৈনিক ১৮ মিলিগ্রাম। গর্ভবতী মহিলার দৈনিক ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন।


শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে অ্যানিমিয়া ছাড়াও নানা অসুখ হতে পারে। পুষ্টিবিদের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে রক্তাল্পতা লাইফস্টাইল জনিত রোগ। ঘরোয়া কয়েকটি খাবার প্রতিদিন ডায়েটে রাখলেই অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দূরে থাকতে পারে। মুসুর ডাল, শাক, পালং শাক, আলু, কাজুবাদাম এর মধ্যে প্রধান। এ ছাড়াও কিশমিশ, টোমাটো, মটরশুঁটি, শিমের বীজ ইত্যাদি অত্যন্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। এই খাবারগুলি প্রতিদিন ডায়েটে থাকলে রক্তাল্পতাকে দূরে রাখা যায় অনেকটাই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.