কাদের চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা বেশি? জানালেন সাবেক মাইক্রোসফট কর্তা
ODD বাংলা ডেস্ক: সম্প্রতি অনেক কর্মী ছাঁটাই করছে নামীদামি বহুজাতিক সংস্থাগুলো। তার মধ্যে বেশি ছাঁটাই হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোতে। কিন্তু সংস্থার কোন কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে? কোন কর্মীরাই বা ছাঁটাইয়ের মুখে পড়তে পারেন? জানালেন মাইক্রোসফটেরই মানবসম্পদ বিভাগ (এইচআর)-এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস উইলিয়ামস।
এই ‘ছাঁটাই অভিযানের’ সূত্রপাত হয়েছিল গত বছর। আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্ক মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার অধিগ্রহণের পর রাতারাতি সেই সংস্থার অনেক কর্মী ছাঁটাই করা হয়। পরে একই পথেই হেঁটেছে অ্যামাজ়ন, মাইক্রেোসফট এবং গুগলের মতো বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোও।
গত ১৮ জানুয়ারি একসঙ্গে ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে মাইক্রোসফট। যা এই সংস্থার মোট কর্মীসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ। মনে করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরো কর্মী ছাঁটাই করতে পারে এই সংস্থা। ছাঁটাই হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোর কর্মীরাও।
এই আবহে মাইক্রোসফটের মানবসম্পদ বিভাগের সাবেক কর্তা ক্রিস জানালেন, কোনো সংস্থার কোন কর্মচারীদের মাথার উপর ঝুলছে ‘ছাঁটাই-খড়্গ’। পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছেন, কোন কর্মীরা রয়েছেন নিরাপদে।
সংবাদমাধ্যম ‘বিজনেস ইনসাইডার’কে ক্রিস বলেছেন, ‘প্রতিটি শিল্প, সংস্থা, এমনকি সেই সংস্থার বিভাগগুলোর আলাদা আলাদা ঝুঁকি রয়েছে। তবে কিছু বিভাগ এবং কর্মীদের ঝুঁকি অন্যান্যদের থেকে বেশি।’একই সঙ্গে ঝুঁকির মুখে থাকা কোনো সংস্থার তিনটি সবচেয়ে অনিরাপদ বিভাগকে আলাদা করে চিহ্নিত করেছেন ক্রিস।
চুক্তিভিত্তিক কর্মী: বিপদ-তালিকায় ক্রিস প্রথমেই যে কর্মীদের কথা উল্লেখ করেছেন, তারা হলেন সংস্থার চুক্তিভিত্তিক কর্মী। ক্রিসের কথায়, ‘ছাঁটাইয়ের আশঙ্কার একেবারে চরম প্রান্তে রয়েছেন চুক্তি কর্মচারীরা। বিভিন্ন সংস্থাগুলোর অস্থায়ী বা চুক্তি কর্মীদের নিয়োগের অন্যতম কারণ বিপদের মোকাবিলা করা। মন্দার সময় এই কর্মীদের সবার প্রথমে ছাঁটাই করা যায়।’
নতুন কোনো উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা: কোনো সংস্থার নেয়া নতুন কোনো উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত কর্মীরাও ঝুঁকির মুখে রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন ক্রিস। তার দাবি, মূল সংস্থার নাম আরো ছড়িয়ে দিতে এবং উপভোক্তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে নামী অনেক সংস্থাই উদ্যোগী হয়। কিন্তু সংস্থায় কোনো রকম অনিশ্চয়তা দেখা দিলে বা মন্দার বাজারে সেই উদ্যোগগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। নজরের কেন্দ্রে থাকে কেবল মূল সংস্থা। তাই বিপদের মুখে পড়লে সংস্থার নতুন উদ্যোগে থাকা কর্মীদের সবার আগে ছাঁটাই করা হয় বলে ক্রিস জানিয়েছেন।
ক্রিস বলেন, ‘সংস্থার পক্ষে নতুন ক্ষেত্রগুলোতে অন্বেষণ করার জন্য অনেক কাজ করা হয়। কিন্তু এই ধরনের উদ্যোগগুলো বিপদের মুখে সচল থাকে না। কর্মীরাও ছাঁটাইয়ের মুখে পড়েন।’
ক্রিসের দাবি, কোনো সংস্থার ইভেন্ট পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাও আকছার মন্দার সময় ছাঁটাইয়ের মুখে পড়েন। ক্রিসের মতে, মন্দা বা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ার পর সংস্থাগুলো যেকোনো ধরনের ইভেন্ট বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা বন্ধ করে দেয়। ক্রিস বলেন, ‘কোনো কর্মী যদি ইভেন্টের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাদের ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা অনেক বেশি হয়। ফলে তাদের বেশি সাবধান থাকা উচিত।’
যাদের ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা খুবই কম: বিপদের মুখে থাকা তিনটি বিভাগ চিহ্নিত করার পাশাপাশি প্রাক্তন মাইক্রোসফট কর্তার কথায় উঠে এসেছে সংস্থার দুইটি নিরাপদ বিভাগের কথাও। তিনি জানিয়েছেন সংস্থার কোন কর্মীদের ছাঁটাই হওয়ার আশঙ্কা কম। ক্রিস বলেন, ‘কেউ যদি কোনো সংস্থার সবচেয়ে বেশি লাভ এনে দেওয়া বিভাগের কর্মী হন তা হলে তার ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা খুব কম। আর যদি কেউ সেই বিভাগের বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাহলে তো আর কথাই নেই। কারণ প্রতিষ্ঠান জানে এই ধরনের কর্মীদের বরখাস্ত করা হলে সংস্থা আরও বিপদের মুখে পড়বে।’
ক্রিসের দাবি, মূল ব্যবসা পিছিয়ে পড়লে সংস্থাগুলো লাভ করা বিভাগগুলোর দিক বেশি নজর রাখে। কোনো কর্মচারীরা ঐ বিভাগের অপরিহার্য কর্মী হলে তার ছাঁটাইয়ের বিশেষ আশঙ্কা থাকে না। ক্রিসের দাবি, কোনো সংস্থা মন্দার মুখে পড়লেও সেই সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মীরা সুরক্ষিত থাকেন। তিনি বলেন, ‘ছাঁটাই প্রক্রিয়া চালানোর জন্য সব সময়ই মানবসম্পদ বিভাগের প্রয়োজন। তাদের কাছে সংস্থার কর্মীদের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য থাকে। প্রতিটি বিভাগ সম্পর্কে তারা অবগত। তাই ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’
পাশাপাশি মানবসম্পদ বিভাগে কর্মীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম বলেও তারা ছাঁটাই থেকে রক্ষা পেতে পারেন বলেও জানিয়েছেনক্রিস। ক্রিস মাইক্রোসফট সংস্থা থেকে অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি এক জন পডকাস্টার। সমাজমাধ্যম ‘টিকটক’-এ তিনি নিয়ম করে ভিডিও বানান। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগের পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করেন ক্রিস।
Post a Comment