জাদুঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ১৮ শতকের 'আইরিশ দৈত্যে'র কঙ্কাল



 ODD বাংলা ডেস্ক: ব্রিটেনের হান্টারিয়ান জাদুঘর থেকে অবশেষে সরিয়ে নেওয়া হবে আঠারো শতকে মৃত্যুবরণ করা এক 'অস্বাভাবিক লম্বা' ব্যক্তির কঙ্কাল। 'আইরিশ দৈত্য' নামে পরিচিত ওই ব্যক্তির কঙ্কালটি ছিল এ জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা সবচেয়ে বিখ্যাত নিদর্শন।


লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস অব ইংল্যান্ড (আরসিএস) ভবনে অবস্থিত হান্টারিয়ান মিউজিয়ামের সংগ্রহে রয়েছে কয়েক হাজার শারীরবৃত্তীয় নমুনা। গত পাঁচ বছর যাবত সংস্কার কাজের জন্য জাদুঘরটি বন্ধ ছিল। কিন্তু গত বছরের মার্চে এটি পুনরায় চালু হওয়ার পর জানা যায়- জাদুঘরের ৩০০০ নিদর্শনের মধ্যে চার্লস বার্নের কঙ্কালটি আর প্রদর্শনের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।


হ্যাঁ, চার্লস বার্নই ছিল 'আইরিশ দৈত্য' বলে পরিচিত সেই মানুষটির আসল নাম। বার্নের পিটুইটারি গ্রন্থির মধ্যে তার অজ্ঞাতে একটি টিউমার বেড়ে উঠেছিল, যে কারণে তার শরীরে গ্রোথ হরমোনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ফলে তিনি 'অ্যাক্রোমেগ্যালি' ও 'অতিবৃদ্ধি'র সমস্যায় ভোগেন- অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশিমাত্রায় তার শরীরের বিকাশ ঘটে এবং তার উচ্চতা গিয়ে ঠেকে ৭ ফুট ৭ ইঞ্চিতে।


জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে বার্ন নিজেই নিজেকে 'আইরিশ দৈত্য' হিসেবে প্রদর্শন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু মৃত্যুর পরেও তাকে দেখিয়ে অন্যরা ফায়দা লুটে নিক সেটা চাননি বার্ন। তিনি ১৭৮৩ সালে মারা যান এবং আরসিএস জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকে যেন সমুদ্রগর্ভে সমাধিস্থ করা হয়। অর্থাৎ, তিনি চাননি তার মৃতদেহ অ্যানাটমিস্টদের হাতে পড়ুক এবং সেটি নিয়ে কাটাছেঁড়া চলুক!



কিন্তু হান্টারিয়ান জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা, সার্জন (শল্যচিকিৎসক) ও অ্যানাটমিস্ট জন হান্টার ঠিক সেটাই করেছিলেন। চার্লস বার্নের বন্ধুদের ঘুষ দিয়ে তিনি তার মৃতদেহ নিয়ে নেন এবং বছর তিনেক পরে তার কঙ্কালটিকে তৎকালীন লন্ডনের লেস্টার স্কয়ারে অবস্থিত নিজের জাদুঘরে প্রদর্শন করেন।


কিন্তু এবার ২০০ বছরেরও বেশি সময় পরে কঙ্কালের স্থলে বিখ্যাত শিল্পী জশুয়া রেনল্ডসের আঁকা হান্টারের একটি পোট্রেইট প্রদর্শিত হবে নতুন জাদুঘরে।


আরসিএস এর পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে চার্লস বার্নের কঙ্কাল সরিয়ে ফেলার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। কঙ্কালটির সাথে সার্জিকাল ইনস্ট্রুমেন্ট, মডেল এবং আর্কাইভের জিনিসপত্রও ছিল; যেগুলোর মাধ্যমে প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যাবে।


বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, "জাদুঘরটি যখন বন্ধ ছিল তখন হান্টারিয়ান কালেকশনের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চার্লস বার্নের কঙ্কালটি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা ও ভিন্নমতের কথা বিবেচনা করেছে। এরপরেই ট্রাস্টিরা ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন যে এই কঙ্কালটি আর জাদুঘরে প্রদর্শিত হবে না; তবে পিটুইটারি অ্যাক্রোমেগ্যালি ও জায়গেন্টিজম (অস্বাভাবিক বিশালত্ব) সংক্রান্ত প্রকৃত চিকিৎসা গবেষণার জন্য এটি ব্যবহার করা যাবে।"



এর আগে ২০১১ সালে নীতিশাস্ত্রজ্ঞ লেন ডয়েল ও আইনজীবী থমাস মেনজার এ বিষয়ে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। সেখানে তারা জাদুঘর থেকে বার্নের কঙ্কাল সরিয়ে ফেলার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন।


তারা লিখেছিলেন, "চার্লস বার্ন আগে থেকেই হান্টারের ভয়ে কুঁকড়ে ছিলেন, কারণ হান্টার অবৈধভাবে গোরখোদকদের দিয়ে অনেক মানুষের মৃতদেহ তুলে আনতেন। হান্টারের ব্যক্তিগত জাদুঘরের জন্য নমুনা সংগ্রহের নেশার কারণে বার্ন নিজেকে নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। তিনি চাননি যে তার দেহ নিয়ে কাটাছেঁড়া করা হোক কিংবা পরে তার কঙ্কাল প্রদর্শিত হোক। বার্ন তার বন্ধুদের এও বলেছিলেন- যেন তার দেহ কফিনে ভরে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়।


একথা যখন হান্টার জানতে পারেন তখন তিনি এদের একজনকে ঘুষ দেন। বার্নের বন্ধুরা তার লাশ ইংলিশ চ্যানেলে সমাধিস্থ করার জন্য যাত্রা আরম্ভ করে এবং পথিমধ্যে তারা বিশ্রাম নেওয়ার সময় কফিন থেকে লাশ সরিয়ে এতে ভারি বস্তু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই বার্নের মৃতদেহ নিজের কাছে নিয়ে আসেন হান্টার।" 



জাদুঘরের দেওয়া বিবৃতিতে ট্রাস্টিদের একজন তাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন, "জন হান্টার (১৭২৮-১৭৯৩) এবং আঠারো ও উনিশ শতকের অন্যান্য অ্যানাটমিস্ট ও সার্জনরা মিলে বিভিন্ন উপায়ে অনেক মৃতদেহের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এসব উপায় যে সবসময়ই বৈধ ছিল তা নয়। সে কারণেই আজ আমরা এগুলোকে পুনরায় পর্যালোচনা করছি এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।"


আরসিএস জানিয়েছে, কয়েক মাসের মধ্যেই 'হান্টারিয়ান প্রভোকেশনস' নামক নতুন একটি প্রোগ্রাম চালু করা হবে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে মৃতদেহের নমুনা সংগ্রহ এবং মানব শরীরের কোনো অংশ প্রদর্শন বিষয়ক বিতর্কগুলো নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে এই প্রোগ্রাম।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.