একই চেহারার জোড়া-জোড়া মানুষ ঘুরে বেড়ায় যে গ্রামে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: আপনি যদি একটি গ্রামে গিয়ে দেখেন যে, একই চেহারার দুই দুইজন মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে; তাহলে কেমন লাগবে? অবাক হবেন। অথবা তাল-গোল গুলিয়ে ফেলবেন। কিন্তু এমন গ্রাম পৃথিবীতে আছে। চলুন জানা যাক।

পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে নানা বিষ্ময়। রহস্যঘেরা এই সব বিষয়ের উত্তর মেলানো সত্যিই কঠিন। আসলে যা কিছুর ব্যাখ্যা মানুষ দিতে পারে না সেটাই তার কাছে রহস্য। গ্রামটির অবস্থান ভারতের কেরালা রাজ্যে। এই রাজ্যের কোদিনহি গ্রাম বিশ্বজুড়ে ‘টুইন ভিলেজ’ বা ‘যমজ গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।


এই সময়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী,  এই গ্রামে যমজ সন্তানের জন্মহার অস্বাভাবিক রকমের বেশি। বাইরে থেকে দেখলে মালাপ্পুরম গ্রামকে আর পাঁচটা দক্ষিণ ভারতীয় গ্রামের থেকে আলাদা করা যায় না। কিন্তু গ্রামে প্রবেশ করলেই বুঝতে পারবেন এখানে এমন কিছু আছে যা প্রাথমিকভাবে বুঝতে না পারলেও মন অস্থির হচ্ছে। গ্রামের প্রায় ২ হাজার পরিবারে রয়েছে প্রায় চারশো যমজ সন্তান।


আরো অবাক করার বিষয় হচ্ছে, কোনো কোনো পরিবারে রয়েছে ত্রয়ী ভাইবোনও। তাই বলে ভাববেন না গ্রামের পুরুষদের ক্ষেত্রেই এমন হয়, গ্রামে নারীরা যদি বাইরে কোথায় বিয়ে করেন তাহলেও তাদের যমজ বা একসঙ্গে তিনটি সন্তান প্রসব করার ইতিহাস রয়েছে। অনেকে বলেন গ্রামের জলে এক ধরনের প্রাকৃতিক রাসায়নিক থাকায় তার প্রতিক্রিয়ার ফলে যমজ সন্তান হয়ে থাকে। যদিও এ কথা সবাই মানতে নারাজ।


সমীক্ষা বলছে, ভারতে প্রতি হাজারে যমজের সংখ্যা ৯। পুরো পৃথিবীতে সেই সংখ্যাটা প্রতি হাজারে ৬ জন। সেই অনুযায়ী কোদিনহিতে প্রতি হাজারে যমজের সংখ্যা ৪৫। হ্যাঁ, হিসাবটা অস্বাভাবিক। কিন্তু কী কারণে হিসাবটা এরকম হয়েছে তার ব্যখ্যা এখনো পর্যন্ত অধরা।


​গ্রামের প্রবেশ পথে রয়েছে একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা, ‘ওয়েলকাম টু দ্য গডস্ ওন টুইনস ভিলেজ’৷ মানে ঈশ্বরের নিজের যমজ গ্রামে আপনি স্বাগত। কেরলের মালাপ্পুরমের এই গ্রামের আরেক নাম যমজদের গ্রাম। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবারে সাড়ে চারশোরও বেশি যমজ সন্তান রয়েছে। তাই, গ্রামের মাঠে, ঘাটে, স্কুলে, বাড়িতে চোখে পড়বে একই চেহারা দু্ইটি করে মানুষ। 


গ্রামের প্রাচীন মানুষদের কথায়, অতীতে নাকি এই গ্রামেও স্বাভাবিক হারে যমজ সন্তান জন্মাত। কিন্তু গত প্রায় ৬০-৭০ বছর ধরে যমজ সন্তান জন্মের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পুরো বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ২০০৮ সাল নাগাদ। ততদিনে গ্রামে যমজ সন্তানের হয়ে দাঁড়িয়েছিল ২৬৪ জোড়ায়। বর্তমানে সংখ্যাটা ৪৫০ পেরিয়ে ৫০০ জোড়ার দিকে এগোচ্ছে। বর্তমানে গ্রামে প্রতি বছর গড়ে ১৫ জোড়া যমজ সন্তান ভূমিষ্ঠ হচ্ছে। গ্রামের জনসংখ্যার ১০ শতাংশই যমজ ভাই বোন। গ্রামের প্রবীনতম যমজ ভাই-বোনের বয়স ৭০ পেরোতে চলেছে। তাদের বিশ্বাস, গ্রামে যমজ সন্তানের জন্ম আসলে স্রষ্টার আশীর্বাদ।


শোনা যায়, ২০০৮ সাল পর্যন্ত  কোদিনহি গ্রামের একটি স্কুলের ক্লাস এইটের দুই যমজ বোন সামিরা এবং ফামিনা খেয়াল করে যে ক্লাসে তারা ছাড়াও আরো আট জোড়া যমজ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। খুঁজতে গিয়ে তারা দেখে যে স্কুলের অন্যান্য ক্লাসেও অনেক যমজ ছেলে মেয়ে পড়াশোনা করছে। সব মিলিয়ে তাদের স্কুলেই ছিল ২৪ জোড়া যমজ ছাত্র-ছাত্রী। দুই বোনের সেই মজাদার আবিষ্কারের পরই বিষয়টি আলোচনায় আসে। গ্রামবাসীরা খেয়াল করেন যে, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ নির্বিশেষে গ্রামে প্রায় তিন প্রজন্ম ধরে যমজের সংখ্যা অস্বাভাবিক।


কিন্তু এতো বেশি যমজের জন্মের কারণ কী জিনগত? নাকি আবহাওয়ার কারণে? এর সঠিক উত্তর পেতে যমজদের জৈবিক নমুনা সংগ্রহ করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। তালিকায় আছে সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি, ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন, হায়দরাবাদ, কেরালা ইউনিভার্সিটি অফ ফিশারিজ অ্যান্ড ওশান স্টাডিজের মতো নামজাদা প্রতিষ্ঠানগুলো। রহস্য সমাধানের জন্য যমজদের লালা এবং চুলের নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করেন গবেষকরা। যদিও এখনো সঠিক ব্যাখ্যা মেলেনি। বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা, এমন কোনো রাসায়নিক বা জৈব পদার্থ গ্রামের প্রকৃতির সঙ্গে মিশে আছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে ।


এরকম আরো কয়েকটি রহস্যময় স্থান রয়েছে, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়ার গ্রামে। যমজ রহস্য বাড়িয়ে দিয়েছে ব্রাজিলের ক্যানডিডো গোডোই, নাইজেরিয়ার ইগবো-ওরা এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামের হাং হিয়েপ গ্রামগুলো। এই গ্রামগুলোতে যমজ সন্তানের জন্মের হার অত্যাধিক। বিশ্বের এই রহস্যের ব্যাখ্যা এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞান দিতে পারেনি। তাহলে কী যমজ গ্রামের রহস্যভেদ করাও অসম্ভব? বিজ্ঞানীরা তো তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.