তিনি ছিলেন ‘যৌনতার প্রতীক’

 


ODD বাংলা ডেস্ক: তার নাম জিনা লোলোব্রিজিদা। ইউরোপীয় চলচ্চিত্র জগতে জিনা নয়, ‘লোলা’ নামে বেশি পরিচিত তিনি। পর পর সফল ছবিতে অভিনয়ের পরেও কিন্তু তার খ্যাতি দক্ষ অভিনেত্রী হিসাবে নয়। ইউরোপ, বিশেষত আমেরিকার বিনোদন জগতে ‘যৌনতার প্রতীক’, ‘যৌন উদ্দীপক নায়িকা’ হিসাবেই প্রচার করা হতো জিনার নাম। রূপ আর আবেদনের ঝলকানিতে তার অভিনয় প্রতিভা চাপা পড়ে গিয়েছিল।

এক সময় শুধু ইতালি নয়, পুরো ইউরোপের হৃদয়ের রানি হয়ে উঠেছিলেন জিনা। তার অভিনয়, ক্যামেরার সামনে শরীরী আবেদন ঝড় তুলত অনুরাগীদের মনে।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ইটালীয় চলচ্চিত্রে জিনার আবির্ভাব যেন এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। তাকে কামনার প্রতিমূর্তি হিসাবে বর্ণনা করতে শুরু করে তৎকালীন গণমাধ্যাম।


বড়-বড় ইউরোপীয় সংবাদপত্রে জায়গা করে নিয়েছিলেন জিনা। বিনোদনের পৃষ্ঠায় তার একচেটিয়া রাজত্ব কায়েম হয়েছিল সহজেই। পাঁচ এবং ছয়-এর দশকে ইউরোপের বিনোদন পত্রিকাগুলো জিনাকে ‘সুন্দরীশ্রেষ্ঠা’ বলে উল্লেখ করত। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন এক জন দক্ষ নৃত্যশিল্পী।


১৯৫৩ সালে জন হুস্টনের পরিচালনায় প্রথম হলিউডে পা রাখেন জিনা। তার প্রথম ইংরেজি ছবি ‘বিট দ্য ডেভিল’। সেখানে তিনি হামফ্রে বোগার্টের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। ঐ বছরেই আমেরিকায় মুক্তি পায় ইটালীয়-ফ্রেঞ্চ ছবি ‘ফাফান লা টিউলিপে’। সেখানেও অভিনয় করেন জিনা। এর পর ১৯৫৪ সালে ‘টাইম ম্যাগাজিন’-এর কভারপেজে ছাপা হয় তার ছবি।



একের পর এক আমেরিকান এবং ইউরোপীয় বড় বাজেটের ছবিতে কাজ করেছেন জিনা। প্রতি ক্ষেত্রেই যৌনতার মায়া ছড়িয়ে দিতেন চলচ্চিত্রের পর্দায়। তা-ই তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। জিনা অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘ট্র্যাপিজ়’ (১৯৫৬), ‘কাম সেপ্টেম্বর’ (১৯৬১), ‘বুয়োনা সেরা, মিসেস ক্যাম্পবেল’ (১৯৬৮)-র মতো জনপ্রিয় কিছু ছবি। ‘কাম সেপ্টেম্বর’ ছবিতে তার কাজ সকলকে মুগ্ধ করেছিল।


১৯৫৫ সালে ‘লা ডনা পিউ বেলা ডেল মন্ডো’ (পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী) ছবির জন্য জীবনের প্রথম অভিনয় সংক্রান্ত পুরস্কারটি পান জিনা। তাকে দেওয়া হয় ‘ডেভিড ডি ডোনাটেলো’, ইতালিতে যা অস্কারের সমান। একই পুরস্কার এর পর আরো দুইবার পান জিনা। এছাড়া, বাফতা পুরস্কারের জন্যেও মনোনীত হয়েছিলেন জিনা। ১৯৬৯ সালে পেয়েছিলেন ‘গোল্ডেন গ্লাব’-এর মনোনয়নও। চিত্রগ্রাহক হিসাবেও দক্ষতা ছিল জিনার। অভিনেত্রী এবং নৃত্যশিল্পী হিসাবে কেরিয়ার যখন মধ্যগগনে, তিনি চিত্রসাংবাদিক হিসাবে কাজ শুরু করেন। খ্যাতি আসে তাতেও।


কিউবার বামপন্থী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সাক্ষাৎকার নিয়ে চার দিকে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন জিনা। তার উপর ভিত্তি করে বানিয়েছিলেন ‘রিট্রাটো ডি ফিদেল’ নামের তথ্যচিত্র। ১৯৭৫ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে তা প্রদর্শিত হয়।



জিনার সঙ্গে ভারতের যোগও রয়েছে। সাতের দশকে মুম্বইতে এসেছিলেন তিনি। ‘শালিমার’ ছবির প্রচারের জন্য ভারতে তাকে আনা হয়েছিল। ধর্মেন্দ্র, জিনাত আমনদের মতো ভারতীয় তারকাদের কাজ করার কথা ছিল তার। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ছবিটিতে জিনা কাজ করেননি। ভারতীয় অভিনেতা কবির বেদীকে নিজের রোমের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জিনা। ‘সান্দোকন’ ধারাবাহিকে তার কাজ দেখে মুগ্ধ হন ইউরোপের ‘সুন্দরীশ্রেষ্ঠা’। কবিরের আত্মজীবনীতে সেই সাক্ষাতের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। কবিরের সঙ্গে গিয়েছিলেন তার প্রেমিকা পরভীন বাবিও।


কিন্তু জিনার বাড়ি থেকে না খেয়েই ফিরতে হয় কবিরকে। অভিযোগ, প্রেমিকা পরভীনকে অপমান করেছিলেন জিনা। রাগ করে সেখান থেকে চলে যান পরভীন। বেরিয়ে আসতে হয় কবিরকেও। রাজনীতিতেও এসেছিলেন জিনা। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ডেমোক্রাট প্রার্থী হিসাবে লডে়ছিলেন ১৯৯৯ সালে। কিন্তু জিততে পারেননি। এরপর ২০২২ সালে ৯৫ বছর বয়সে ইতালির সাধারণ নির্বাচনে নতুন একটি দলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। জিততে পারেননি তাতেও।


ইতালির সংবাদপত্র ‘কোরিয়ার ডেলা সেরা’য় একটি সাক্ষাৎকারে জিনা জানিয়েছিলেন, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ এবং কর্মপদ্ধতির দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে দাবি করেন কেউ কেউ। ১৯৪৯ সালে নিজের চিকিৎসককে বিয়ে করেন জিনা। ১৯৭১ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এর পর ২০০৬ সালে ৭৯ বছর বয়সে তিনি ঘোষণা করেছিলেন স্পেনের এক ৪৫ বছর বয়সি ব্যবসায়ীকে তিনি বিয়ে করতে চলেছেন। পরে অজ্ঞাত কারণে সেই বিয়ে বাতিল করেন।


১৬ জানুয়ারি, ২০২৩-তারিখে প্রয়াত হয়েছেন বর্ষীয়ান এই ইতালীয় অভিনত্রী। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.