৪৫ বছর ধরে পয়সা কুড়িয়েছেন লুইজিয়ানার এই বৃদ্ধ, কত টাকা জমালেন তিনি!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ৪৫ বছর ধরে রাস্তাঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া পয়সা জমিয়ে চলেছেন অথা অ্যান্ডারস, তারপর একদিন  তিনি ঠিক করলেন সেই পয়সাগুলো ব্যাংকে জমা দিয়ে নোট নিয়ে নেবেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা যখন তাকে পয়সাগুলো নিয়ে আসতে বললেন, অ্যান্ডারস নিয়ে এলেন একটি ডলি কার্ট, যেখানে থরে থরে সাজানো পয়সাভর্তি জার। আর তা দেখেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের চোখ ছানাবড়া! কিন্তু কত টকা জমিয়েছিলেন অথা অ্যান্ডারস? তা খুব শীঘ্রই জানা যাবে; তার আগে জেনে নেওয়া যাক তার এই অদ্ভুত শখের উৎপত্তি সম্পর্কে।


৭৩ বছর বয়সী অথা অ্যান্ডারসের কাছে পয়সা জমানো নিছক একটা শখের চাইতেও বেশি কিছু ছিল... তিনি এ কাজটি করতেন অত্যন্ত যত্ন ও ভালোবাসা নিয়ে। যেখানেই পয়সা পেয়েছেন, কুড়িয়ে এনে শুয়েমুছে যত্ন করে রেখে দিয়েছেন বড় বড় খালি জলের জারে। বছরের পর বছর ধরে তিনি শুধু জমিয়েই চলেছেন, কখনো গুণে দেখেননি কত টাকা হলো। তাই ব্যাংক কর্মকর্তা যখন তাকে জিজ্ঞেস করলেন- 'এখানে কত টাকা আছে?', অথা তখন নিরুত্তর দাঁড়িয়ে!



যেভাবে এই শখের শুরু


অথা অ্যান্ডার্স পুরোদস্তুর একজন 'ফ্যামিলি ম্যান'; স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই সংসার তার। জ্যাকসন স্কুল বোর্ডের সদস্য হিসেবে কর্মরত অথার কাজ হচ্ছে, স্কুলের যেসব শিখার্থী ছোটখাট জামেলায় জড়িয়ে পড়ে স্কুল থেকে বরখাস্ত হয়েছে, তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা।


স্কুলের চাকরির পাশাপাশি তার পয়সা কুড়ানোর নেশার কারণে কেউ কেউ তাকে অদ্ভুত লোক ভাবলেও, অথা কিন্তু তার এই শখটিকে ভীষণ উপভোগ করতেন।  তিনি মনে করতেন, রাস্তাঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া পয়সা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে তার কাছে যতটূকু আছে তা যথেষ্ট এবং তিনি সুখেই আছেন।; যেমন- তার মাথার উপরে ছাদ আছে, একটা সুন্দর পরিবার আছে।



কিন্তু পয়সা কুড়ানোর মতো অদ্ভুত শখ কেন হলো, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে এক সাক্ষাৎকারে অথা বলেন, "আমি বিশ্বাস করি যে, হারিয়ে যাওয়া বা কারো পকেট থেকে পড়ে যাওয়া পয়সা আমার চোখে পড়েছে মানে এটা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে দেওয়া বাড়তি প্রণোদনা, যাতে করে আমি সবসময় ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি।"



তিনি আরও জানান, এমন অনেক দিন গেছে যখন তিনি প্রার্থনা করতে ভুলে গেছেন; কিন্তু ঐ দিনই পথেঘাটে পয়সা কুড়িয়ে পেয়েছেন তিনি, যা তাকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ গিয়েছে তার। তার এ জাতীয় বিশ্বাসগুলো যত দৃঢ় হয়েছে, তত বেশি তিনি পয়সা কুড়িয়ে আনার দিকে মনোযোগী হয়েছেন।


অথা অ্যান্ডার্স সবসময়ই ঈশ্বরে ভক্ত ছিলেন, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার কিছু বিশ্বাস আরও জোরাল হয়েছে। কুড়িয়ে পাওয়া প্রতিটি পয়সাকে তিনি ঈশ্বর-প্রদত্ত আশীর্বাদ মনে করেন। কিন্তু যখন তিনি পয়সাগুলো জমা দিয়ে নগদ টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখনো তিনি জানতেন না সামনে কী অপেক্ষা করছে তার জন্য। যেহেতু অনেকেই তার এই অদ্ভুত শখের কথা জানেন, তাই কেউ কেউ তাকে আরও পয়সা খুঁজতে সাহায্যও করতে চেয়েছিলেন।


দীর্ঘ ৪৫ বছরের যাত্রা


অথা যেদিন প্রথম রাস্তা থেকে পয়সা কুড়িয়ে নিয়েছিলেন, তখন তার ধারণা ছিল না যে পরবর্তী ৪৫ বছর ধরে এটিই তার অভ্যাসে পরিণত হবে। এরপর থেকে তিনি পয়সা জমাতে শুরু করেন; এমনকি টাকা ভাঙানোর পর যেসব পয়সা পেতেন, সেগুলোও খরচ করা বন্ধ করে দেন তিনি। যখন তিনি দোকানে বাজার-সদাই করতেন, তখনো তিনি দোকানদারকে বলতেন ভাংতি হিসেবে যেন অন্তত ৩-৪টি পয়সা দেওয়া হয়! এভাবেই অথার সংগ্রহ বাড়তে থাকে।



জবাবদিহি করতে হয়নি


সময়ের সাথে সাথে অথার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবরাও তার এই অদ্ভুত শখের সাথে বেশ পরিচিত হয়ে যায়। তারা কখনোই এ বিষয়ে আর তাকে প্রশ্ন করেনি,; তারা ধরেই নিত যে বাজার করতে দিলে সেখান থেকে ভাংতি পয়সাগুলো অথার পকেটেই যাবে।



গত ৪৫ বছরে নিজের জমানো পয়সাগুলো থেকে একটি পয়সাও কোনোদিন অপব্যয় করেননি অথা অ্যান্ডার্স। তার পয়সা জমানোর নেশা এতটাই তীব্র ছিল যে, তাকে যদি কেউ এক ডলার এবং এক সেন্টের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বলতো, তাহলে তিনি এক সেন্টকেই বেছে নিতেন। কোনোকিছুই তাকে পয়সা জমানো থেকে বিরত রাখতে পারেনি।


ছাত্রদের সাহায্য


অথার স্কুলের ছাত্ররা যখন তার এই অদ্ভুত শখের কথা জানতে পারলো, তখন তারাও তাকে সাহায্য করতে চাইলো। প্রায়ই ছাত্ররা তাকে রাস্তাঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া পয়সা এনে দিত। ছাত্রদের উদারতায় অথা মুগ্ধ হলেও, তিনি তাদের দেওয়া পয়সা গ্রহণ করতেন না। কারণ অথা জানান, পয়সা জমানোর নেশার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নীতি মেনে চলেন তিনি।


তার ভাষ্যে, "আমি কখনোই কারো কাছ থেকে দান নেইনি। শোধ করার উপায় বিনা আমার স্ত্রী-সন্তানদের কাছ থেকেও কখনো টাকা নেইনি।"


বরং পাঠক জেনে অবাক হবেন যে, যারা তাকে পয়সা দিয়েছে তাদেরকে উল্টো মূল্য পরিশোধ করতেন তিনি!


যে কারণে পয়সা জমানো বন্ধ করলেন


৪৫ বছরে সর্বমোট ১৫টি বিশাল জলের জার ভর্তি পয়সা জমিয়েছেন অথা। তবে তার কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না যে সেখানে কত টাকা আছে। তিনি তার এই শখ আরও অনেকদিন চালিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।



অথা তার পয়সার সংগ্রহের প্রতি এতটাই আসক্ত ছিলেন যে তিনি তার বাড়ির মালিকের ইনস্যুরেন্সের আওতাভুক্ত করতে চেয়েছিলেন তার এই সংগ্রহকে। কিন্তু ইনস্যুরেন্স কোম্পানি তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। এরপরেই অথা বুঝতে পারেন যে এখন তাকে এই পয়সাগুলো জমা দিয়ে নগদ টাকা নিতে হবে।



ব্যাংকে নিয়ে যাওয়া


অথা যদি সময় নিয়ে তার সব কয়েন বা পয়সা খুঁজে দেখতেন, তাহলে হয়তো 'এরর পেনি' পেয়ে যেতেন দুয়েকটা। 'এরর পেনি' হলো যেসব মুদ্রা সাধারণ মুদ্রার মত নয়, মুদ্রায় কোনো ভুল রয়েছে বা খুবই বিরল বা সোনা-রূপার মুদ্রা পাওয়াও অসম্ভব ছিল না। আর সেরকম কিছু পেলে অথা সেটি বিক্রি করে বিপুল টাকার মালিক হতে পারতেন।


কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অথা এ ধরনের কোনো মুদ্রার কথা জানতেনই না। 


শেষ পর্যন্ত অথা অ্যান্ডার্স যখন পয়সা ভর্তি ডলি কার্ট ঠেলে ব্যাংকে নিয়ে গেলেন, বলাই বাহুল্য ব্যাংক কর্মকর্তারা যারপরনাই বিরক্ত হয়েছিলেন। ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন- আপনার ধারণা এগুলো গোণার মতো সময় আমাদের আছে?"


কিন্তু করুণ চোখে অথা উত্তর দিয়েছিলেন- "আমার যদি উপায় থাকতো তাহলে আমি কখনো এগুলো ভাঙাতে নিয়েই আসতাম না! আজীবন নিজের কাছেই রাখতাম।"


এরপর ব্যাংক তাকে সাহায্য করতে রাজি হয়। ব্যাংকের ম্যানেজার এসে জানতে পারেন, অথা সেই ব্যাংকের দীর্ঘদিনের গ্রাহক। কিন্তু ৫০০,০০০ পয়সা হাতে গোনা সম্ভব নয়, তাই কয়েন গোনার মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়।


এরপর কুড়াল দিয়ে জলের জার কেটে পয়সা বের করা হয়। সবগুলো পয়সা মেশিনে ঢোকাতেই অথার ৫ ঘণ্টা লেগেছিল!


অবশেষে জানা যায়, সব মিলিয়ে প্রায় ৫,১৩৬ ডলার জমিয়েছেন অথা। বছরে তার জমা হয়েছিল প্রায় ১১৪ ডলারের মতো।


খরচের খাত


পয়সাগুলো ভাঙিয়ে নগদ টাকা নিয়ে কী করবেন, সেই পরিকল্পনা আগেই করেছিলেন অথা অ্যান্ডার্স। নিজের দাঁতের ডাক্তারের বিল মিটিয়েছেন তিনি এ টাকা থেকে। এরপরে পরিবাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছেন এবং কিছু টাকা দিয়েছেন চার্চকে।


তবে দিনশেষে এতগুলো বছর ধরে পয়সা জমানো যে তার বিফলে যায়নি তা প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রমাণ পাওয়া গেছে অথা অ্যান্ডার্সের ধৈর্য্য ও বিশ্বাসের- যে বিশ্বাসের জোরে এতদূর এসেছেন তিনি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.