হিমালয়ে পাওয়া বিড়ালই কি বিরল ‘গ্র্যাম্পি ক্যাট'!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: প্যালাস'স ক্যাট নামে পরিচিত বিরল এবং স্বল্পপরিচিত বিড়ালটির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন মাইল উপরে মাউন্ট এভারেস্ট পর্বতে বাস করে।


পরিবেশের বিভিন্ন প্রজাতির নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যে নেপালের মাউন্ট এভারেস্টের দক্ষিণ পাশে থাকা সাগরমাথা জাতীয় উদ্যানে একটি এক মাসব্যাপী অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানের সময়ে খুঁজে পাওয়া যায় এই বিরল বিড়ালটিকে।


সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যথাক্রমে ১৬,৭৬৫ ফুট এবং ১৭,০২৭ ফুট উপরে থাকা দুইটি পৃথক জায়গা থেকে বিড়াল উদ্ধার করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এলাকাটিতে প্যালাস'স ক্যাট রয়েছে।


বিখ্যাত ইন্টারনেট মিম 'গ্রাম্পি ক্যাট'-এরও আগে 'অরিজিনাল গ্র্যাম্পি ক্যাট' হিসেবে পরিচিত এই বিড়ালের বৈজ্ঞানিক নাম ওটোকোলোবাস মানুল। পৃথিবীর বুনো বিড়ালগুলোর মধ্যে অন্যতম সুন্দর হিসেবে ধরা হয় এটিকে। পর্বতে তুখোড়ভাবে টিকে থাকা এই বিড়ালগুলোকে মূলত এশিয়ার উঁচু অঞ্চলগুলোতে পাওয়া যায়। বেঁচে থাকার জন্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে এটি।



প্রাণীটির ওপর গবেষণায় দেখা যায়, এটি পাইকা (ইঁদুরাকৃতির ছোট প্রাণী) এবং মাউন্টেইন উইজেল খেয়ে বেঁচে থাকে। এটি বিজ্ঞানীদেরকে আনন্দিত করে তোলে, কারণ এই দুইটি প্রাণীও যে ইউনেস্কো ঘোষিত প্রাকৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানটিতে থাকে, তা অজানা ছিল।


ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির জুওলজিক্যাল হেলথ প্রোগ্রামের ড. ট্রেসি সিমন ২০১৯ সালে হওয়া অভিযানটির নেতা ছিলেন। তিনি জানান, "পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু জায়গায় এই বিরল এবং অসাধারণ প্রজাতিকে আবিষ্কার করা অসাধারণ একটি ব্যাপার। প্রায় চার সপ্তাহের অভিযানটি কেবল আমাদের দলের জন্যই নয়, বরং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের জন্যও অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল। এভারেস্টে প্যালাস বিড়ালের আবিষ্কার এই উঁচু আলপাইন বাস্তুতন্ত্রের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আমাদেরকে জানিয়েছে। তাছাড়া নেপালের পূর্ব অংশেও যে প্রজাতিটি টিকে রয়েছে তাও জানা যায়।"



২০১৯ সাল পর্যন্ত এই উদ্যানটিতে প্যালাস'স ক্যাটের অস্তিত্ব আবিষ্কার করা যায়নি। তবে নতুন গবেষণা থেকে দেখা যায়, কীভাবে কনজার্ভেশন জেনেটিক্স এবং এনভায়রনমেন্টাল স্যামপ্লিং প্যালাস ক্যাটের মতো বিরল প্রজাতি আবিষ্কার ও গবেষণার একটি শক্তিশালী পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।



আইইউসিএন এই প্রজাতিটিকে তেমন বিলুপ্তের আশঙ্কা নেই এমন প্রজাতি হিসেবেই শ্রেণীবদ্ধ করেছে। ছোট বুনো বিড়াল প্রজাতির হাতেগোনা কিছু প্রজাতির মধ্যে এটি একটি, যেটির বিলুপ্তির আশঙ্কা নেই। বুনো বিড়াল সংরক্ষণের জন্য অর্থের সামান্য অংশই ছোট বুনো বিড়ালগুলো পায়, যেখানে চিতা, বাঘ বা সিংহের মতো বিগ ক্যাটগুলো বিশাল অংশ পেয়ে থাকে। 


ক্যামেরা ট্র্যাপ জরিপ এবং স্ক্যাট নমুনার মাধ্যমে করা ভবিষ্যৎ গবেষণা সাগরমাথা জাতীয় উদ্যানে প্যালাস'স ক্যাটের জনসংখ্যা, পরিসর, ঘনত্ব এবং খাবারকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।


ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গবেষণা দলটিতে আটটি দেশের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও ১৭ জন নেপালি বিজ্ঞানী তাদের দেশের উঁচু পরিবেশের পরিবর্তনকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য জীববিজ্ঞান, আবহাওয়াবিদ্যা, ভূতত্ত্ব, ম্যাপিং এবং  গ্লেসিওলজি সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনা করেছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.