ভালোবাসা যদি দূর দেশে থাকে
ODD বাংলা ডেস্ক: পেট বড় দায়। কোন মানুষই স্বেচ্ছায় প্রবাসী হতে চায় না। কিন্তু কর্মসূত্রের কারণে এখন অনেক মানুষই প্রবাসী জীবন যাপন করতে একরকম বাধ্য হচ্ছে বলা চলে। যারা পরিবার পরিজন ছেড়ে বাইরে দিন কাটায় তারাই একমাত্র এ যন্ত্রণার জ্বালা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু দূরে থেকেও আমরা আমাদের সম্পর্ককে সুন্দর রাখতে পারি। ‘লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ’ মজবুত রাখতে পারি। ভালোবাসার মানুষটা যখন দূর দেশে থাকে তখন মন টা পড়ে থাকে তাঁর কাছে, তাঁর অতি নিকটে।
এখন চারিদিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, উঠতি বয়সের যুবক সম্প্রদায় বেশিরভাগ ই সদ্য বিবাহ করে কর্মের তাগিদে চলে যেতে হচ্ছে বাইরে। এই সব মানুষগুলোর অবস্থা কতটা শোচনীয় সেটা ভাবলেই কষ্ট হয়। কত মানুষের শুধুমাত্র অর্থের প্রয়োজন জীবনের সুন্দর সুন্দর মূহুর্ত গুলো নীরবে নিভৃতে পার হয়ে যায়।
যেদিন আজ চলে যায় সেদিন আর কখনোই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কোন উপায় ও থাকে না। কারণ খালি পকেটে প্রেম খুব বেশি দিন সুস্থ থাকে না। তবে আমরা আমাদের সম্পর্কগুলোকে দূরে থাকার সত্ত্বেও সুন্দর রাখতে পারি,ভালো রাখতে পারি, যত্ন নিতে পারি। তার জন্য চাই শুধুমাত্র মানসিক ইচ্ছার।
দূরে থেকেও কীভাবে একটি সম্পর্ক ঠিক রাখা যায় তার ১০টি টিপস:
প্রতিদিন নিয়ম করে যোগাযোগ রাখা:
বর্তমানে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা খুবই সহজ সরল একটি ব্যাপার। একটা ফোন করলেই দূর এখন ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। টেলিফোন সত্যিই একটি চমৎকার আবিষ্কার। অবশ্য টেলিফোন আবিষ্কারের মূলেই ছিল দূরের মানুষকে কাছে অনুভব করানোর একটি পন্থা হিসাবে। যত কাজই থাক,যতই ব্যস্ত থাকো না কেন প্রতিদিন কিছুটা সময় অতিবাহিত করতে হবে ফোনে কথা বলার মাধ্যমে। যাঁরা দূরে থাকে তাঁদের মনটা সব সময় বাড়ির মানুষের কাছে থাকে। তাই তাঁরা নিয়ম করে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ভালোবাসে। এতে তাঁদের মনটা ভালো থাকে।
বিশ্বাসের মর্যাদা রাখা:
বিশেষ করে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসের মূল্য সর্বাঙ্গে। অনেকটা বিশ্বাস করে, তাঁর সঙ্গীনির উপর নির্ভর করে একজন মানুষ তাঁকে দেশে রেখে অন্য দেশে কর্মক্ষেত্রে যেতে সাহস পায়। তাই প্রাণ থাকতে এ বিশ্বাসের মর্যাদা ক্ষুন্ন করা উচিত নয়।
একে অপরের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার দায়িত্ব নেওয়া:
এক্ষেত্রে দুজনেরই উচিত একে অপরের সুখ দুঃখের খোঁজ নেওয়া। একটা সংসারে শুধু অর্থ দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। বাড়িতে যে মানুষ টা আছে সে সব কিছু কতটা সামলাতে পারছে, তাঁর কখন কোন কাজটা করা উচিত, কি করলে সে সব কিছু সুন্দর করে পরিচালনা করতে পারবে,এই সব কিছু আলোচনার মাধ্যমে করলে মনে একটা ভরসা পাওয়া যায়। এছাড়া সে কতটা মানসিক দিক দিয়ে খুশি আছে,তাঁর বিশেষ কিছু প্রয়োজন কিনা।তাঁর কোন কিছুতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা, কারো ব্যবহারে সে কষ্ট পাচ্ছে কিনা, এগুলো ও জানা উচিত। অপরদিকে যে মানুষটা বাইরে কাজ করছে তাঁর উপরেও অনেক প্রেশার থাকে, অনেক সময় কাজের চাপ থাকে, বাড়ির জন্য মন খারাপ লাগে, নিজের জন্মভূমির কথা মনে পড়লে কষ্ট হয়, এতে করে একটা মানসিক চাপ মনের মধ্যে কাজ করে।
প্রতিদিনকার ঘটনা শেয়ার করা:
এমন প্রচুর মানুষ আছে যাঁরা সারাদিনের সমস্ত ঘটনা পাশের মানুষের সঙ্গে বলতে পছন্দ করে। ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা মনে রেখে দিনের শেষে বলতে বেশ লাগে। এতে করে সম্পর্কের বন্ধনটা সুন্দর হয়। একে অপরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মন খারাপে সঙ্গ দেওয়া:
‘লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ’ মধ্যে মন খারাপ হওয়াটই স্বাভাবিক।এমন অনেক মূহুর্ত উপস্থিত হয় যখন কাছের মানুষ টাকে খুব কাছে, একান্ত করে পেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু কোন মূল্যেই তখন কাছে যাওয়াা সম্ভব নয়।এমন অবস্থায় মন হঠাৎ করে খুুুব খারাপ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় পাশের মানুষটার সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করে, অনেক টা সময় ধরে মনের সব কষ্ট প্রকাশ করতে ইচ্ছে করে।তখন পাশের মানুষ টা র উচিত একটু ধৈর্য্য ধরে তাঁর মন যাতে ভালো হয়।সে যাতে আবার একটু হাসে সেই চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে কথা বলাটা ভীষণ জরুরী। ঠিক এই সময় ই যদি সে এমন কাউকে পাশে পায় যে তাঁর কষ্টের কথা শুনছে এবং তাঁর কষ্ট বুঝে তাঁকে একটু হাসানোর চেষ্টা করছে, বা তাঁর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তাহলে সে ক্ষেত্রে এই মানুষটার টাল খাওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। আর যত অবৈধ সম্পর্ক গুলো তৈরি হয়, সব গুলোই এই শুন্যস্থান পূরণের জন্য। যদিও এটা কখনোই উচিত নয়, এতে করে কখনো ভালো থাকা যায় না। এতে আরো জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। জীবনের সব শান্তি চিরতরে চলে যায়। কারণ আপনার মন কখনো আপনাকে ছাড়বে না, সে আপনাকে আত্মগিলানী তে জর্জরিত করে ফেলবে। তাই এমন রাস্তায় পা না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
মাঝে মাঝে না জানিয়ে উপহার পাঠানো:
বাচ্চা থেকে বড় প্রত্যেকেই যদি হঠাৎ কোন উপহার পায় তাহলে তাঁর খুশির আর শেষ থাকে না। আর উপহার টা যদি পার্সেল হয়ে আসে তাহলে তো কোন কথায় নেই।তখন যেন আরো মন খুলে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, প্রাণ খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করে। এ খুশির রেশ যেন সহজে যেতে চায় না।
নিয়ম করে খেয়েছে কি না খোঁজ নেওয়া:
এটা কিন্তু একটি সম্পর্কের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। খাওয়ার খোঁজ নেওয়াটা একটা আদর, মোহব্বত এর মধ্যে পড়ে। এটা খুব মিষ্টি একটা অনুভূতি।
একে অপরের প্রশংসা করা:
যখন একজন মানুষ তাঁর সঙ্গী কে রেখে বাইরের কাজে যায় তখন সেই মাানুষটির উপরে অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে।আর যে কাজ করে তার অনেক ভুল ও হয়। কিন্তু সেই ভুল নিয়ে তাঁকে কখনোই কথা শোনানো উচিত নয়। বরং তাঁকে প্রশংসা করা উচিত। সে যে সব দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছে তার জন্য তাঁকে বাহবা দেওয়া প্রয়োজন।
পুরানো রোমান্টিক স্মৃতি মনে করে দু`জনে মন খুলে হাসা:
পুরানো স্মৃতি মনে পড়লে সকলের ই ভালো লাগে। আর সেই স্মৃতি যদি হয় প্রেমের তাহলে তো কোন কথায় নেই। আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজের চাপে বর্তমানে একটু মিষ্টি করে, হেসে কথা বলতেই যেন কষ্ট বোধ করি।যার ফল স্বরূপ জীবন টা,কেবল কর্তব্য পালন করে চলেছে মনে হয়। সব রোমান্টিকতা বাক্স বন্দী হয়ে জীবন যেন কোন মতে বয়ে চলেছে।
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি সেটা মুখে উচ্চারণ করে বলা:
দুটি মানুষ অনেক টা সময় একসঙ্গে আছে মানে অবশ্যই তাঁদের মধ্যে ভালোবাসা টা আছে।কিন্তু আমরা সেই ভালোবাসার কথাটা মুখে জানাতে চাই না। এই সমস্যা টা সব থেকে বেশি দেখা যায় যাদের সমন্ধ করে বিয়ে হয় তাঁদের মধ্যে। তাঁরা কোন দিনও একে অপরকে ভালোবাসি বলে কিনা সন্দেহ আছে। একটা সম্পর্ক কখনোই দায়িত্ব আর কিছু কর্তব্য পালন করলেই সুস্থ থাকে না। এখানে ছোট্ট ছোট্ট অনেক ভালো লাগাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
Post a Comment