প্রেমিকার দেখা পেতে সাইকেল চালিয়ে নয়াদিল্লী থেকে সুইডেনে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ভাবা যায়, সাইকেল চালিয়ে নয়াদিল্লি থেকে সুইডেন পৌঁছানোর কথা! একে একে পারি দিতে হয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক, বুলগেরিয়া, যুগোস্লাভিয়া, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক-সহ মোট আটটি দেশ। আট দেশের কত নাম না পথ আর আর কত শহর! পথের দূরত্ব প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার। আর সময় লেগেছিল ৪ মাস ৩ সপ্তাহ। এই সময় খরচ করে সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ পারি দিয়েছেন প্রদ্যুম্ন। 

প্রদুম্ন কুমার মহানন্দিয়া একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুইডিশ চিত্রশিল্পী। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সাইকেল চালিয়ে যে ইতিহাস তৈরি করেছেন, তা তাকে বিশেষ আলোচনায় নিয়ে আসে। তিনি তার চার মাস তিন সপ্তাহ সাইকেল-ভ্রমণের জন্য বিখ্যাত। ১৯৭৭ সালে তার প্রেমিকা শারলট ভন শেডভিন-এর সঙ্গে দেখা করতে নতুন দিল্লি থেকে সুইডেনের গোথেনবার্গ যাওয়ার জন্য তিনি তার এক বন্ধুর নিকট থেকে সাইকেলটি ক্রয় করেন।


প্রদুম্ন কুমার বা পি.কে. মহানন্দিয়া ১৯৪৯ সালে উড়িষ্যার আঙুল জেলার আথমাল্লিক থানায় কান্দাপাড়া গ্রামে একটি তাঁতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে আথমাল্লিকের মহেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে এরপর বিশ্বভারতীতে আর্ট বিভাগে সিলেক্ট হলেও ফিস পূরণ করার মতো অর্থ না থাকায় বাড়িতে ফিরে আসেন। তারপর তিনি সেখান থেকে সরকারি কলেজ অব আর্ট এন্ড ক্রাফটস, উড়িষ্যায় ভর্তি হন।


যেভাবে প্রেমের শুরু


পি.কে দিল্লি আর্ট কলেজে পড়াকালীন ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন এবং প্রশংসিত হন। উৎসাহ পেয়ে বাড়তি আয়ের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কন্নাউট প্লেসের পবিত্র ঝর্ণার পাশে মানুষের প্রতিকৃতি অঙ্কন করতে শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের ১৭ই ডিসেম্বর শারলটের সঙ্গে পিকের প্রথম দেখা হয় । শারলট লন্ডনের ছাত্রী ছিলেন এবং তিনি ভারতের সংস্কৃতি জানার জন্য ২২ দিনের ছুটিতে ভারত এসেছিলেন। তখন তিনি স্মৃতিস্বরুপ নিজের একটি প্রতিকৃতি বানাতে মহানন্দিয়ার কাছে গিয়েছলেন। এই প্রতিকৃতি তাদের জীবন বদলে দেয়। তারা একে অপরের প্রেমে পরে যান। কিন্তু শারলটের সুইডেন ফেরত যাওয়ার সময় হয়ে যায়, যদিও তিনি পিকেকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক ছিলেন না। শারলট পিকেকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চান, কিন্তু পিকে নিজ উপার্জনের অর্থে যাবেন বলে জানান। শারলট চলে গেলেও চিঠির মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ চলতে থাকে।


পরবর্তী জীবন


এরপর পি.কে অর্থ জোগাড় করতে না পেরে পুরনো একটি সাইকেল ক্রয় করে একশত একচল্লিশ দিন সাইকেল চালিয়ে সুইডেনের গোথেনবার্গ পৌঁছান। এরপর তারা বিবাহ করেন এবং তাদের বর্তমানে সিদ্ধার্থ নামে এক ছেলে এবং এমেলি নামে এক মেয়ে রয়েছে।


প্রদুম্ন তার চিত্রশিল্পের জন্য সুইডেনে প্রসিদ্ধ হন এবং তিনি সেখানে সুইডিশ সরকারের অধীনে শিল্প এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তার চিত্র সারা বিশ্বের বিভিন্ন বৃহৎ শহরে প্রদর্শিত হয়েছে এবং এর জন্য তিনি ইউনিসেফ থেকে পুরষ্কৃত হয়েছেন। ৪ নভেম্বর ২০১২ তে তাকে ঊটকাট ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। ২০১০ সালে বলিউড ফ্লিম মেকার সঞ্জয় লীলা বনশালি প্রদুম্ন এবং শারলটের প্রেম কাহিনী নিয়ে সিনেমা বানানোর ঘোষণা দেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.