টানা ৩০০০ দিন ডিজনিল্যান্ডে ভ্রমণ করে গিনেস রেকর্ড গড়লেন মার্কিন নাগরিক!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: প্রতিদিন নিয়ম করে পার্কে বেড়াতে আসেন কিংবা ব্যায়াম করতে আসেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু কোনো মানুষের কি টানা আট বছর প্রতিদিন একই পার্কে বেড়াতে আসার অভিজ্ঞতা আছে? উত্তরটা 'না'-বোধক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা, ৫০ বছর বয়সী জেফ রিটজ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা ২৯৯৫ দিন ডিজনিল্যান্ডে বেড়াতে এসে থিম পার্কে একটানা সবচেয়ে বেশিদিন ভ্রমণের গিনেস রেকর্ড গড়েছেন তিনি, খবর সিএনএন এর।


এক দশক আগে ডিজনিল্যান্ডের একটা 'অ্যানুয়াল পাস' পাওয়ার পর এই মজার ভ্রমণ শুরু করেন রিটজ। সেই সঙ্গে বেকার থাকায় তার হাতে অফুরন্ত সময়ও ছিল। প্রথমে একদিন-দুদিন, তারপর রোজ ডিজনিল্যান্ডে যাওয়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়। শীঘ্রই তিনি তার রোজকার ভ্রমণের ভিডিওচিত্র ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে পোস্ট করতে শুরু করেন। ডিজনি৩৬৬ নামক একাউন্ট থেকে তিনি এসব ভিডিও পোস্ট করে তার হাজার হাজার অনুসারীদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পান।


তবে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে জেফের ভ্রমণ থামিয়ে দিতে হয়। কিন্তু তার আগেই ইতিহাস গড়ে ফেলেছিলেন জেফ। আর গিনেস রেকর্ডসের গবেষকরাও তার সন্ধান পেয়ে যায় এবং সম্প্রতি এই রেকর্ডের দাবিদার হওয়ার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।



সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে রিটজ জানিয়েছেন পার্কে তার প্রিয় মুহূর্তগুলোর কথা এবং কেন দিনের পর দিন তিনি একই জায়গায় ফিরে ফিরে এসেছেন।


যে কারণে ডিজনিল্যান্ডে আসা শুরু করেছিলেন


২০১২ সালে ডিজনিল্যান্ডে আসতে শুরু করার পরপরই জায়গাটি তার ভীষণ ভালো লেগে যায়। তার ভাষ্যে, এই পার্ক তার কাছে খুব আপন হয়ে ওঠে। "আমি হান্টিংটন বিচ এলাকায় বেড়ে উঠেছি এবং আমার পরিবার বছরে কয়েকবার আসতো। হেঁটে বেড়ানো এবং মানুষের সাথে গল্প করার জন্য এটা (ডিজনিল্যান্ড) একটা দারুণ জায়গা", বলেন রিটজ।


অনেকের ধারণা, প্রতিদিন ডিজনিল্যান্ডে ঘুরতে নিশ্চয়ই কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ হয়েছে রিটজের! কিন্তু রিটজ জানালেন বিষয়টা মোটেও তা নয়- "আমি এখান থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে থাকি, আমার একটা বার্ষিক পাস আছে, যার মধ্যে পার্কিংটাও কভার হয়ে যায়। এক বছরে প্রতিদিন ঘুরে বেড়াতে ১৪০০ ডলার লাগে। হ্যাঁ, তা বেশ ভালো টাকা, তবে লোকে যত বেশি ভাবে ততটা নয়।"


গত আট বছরে পার্কে নানা রকম মজার কাজ করেছেন জেফ রিটজ। তবে একটি কাজ কখনো বাদ যায়নি তার, তা হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিজনিল্যান্ডে চেক-ইন দেওয়া এবং প্রতিদিন পার্কের একটি করে ছবি পোস্ট দেওয়া।


২০১২ সালের দিকে ইনস্টাগ্রাম অতটা জনপ্রিয় ছিল না এবং দামি স্মার্টফোনও খুব একটা সহজলভ্য ছিল না। তাই প্রথম কয়েক বছর একটা ব্ল্যাকবেরি বোল্ড ৯৭০০ দিয়ে নিজের ভ্রমণের ছবি তুলে রাখতেন রিটজ।



পার্কে রিটজের প্রিয় জায়গা ও প্রিয় খাবার


ডিজনিল্যান্ডে রিটজের প্রিয় জায়গা হলো ম্যাটারহর্ন ববস্লেডস, যা একজোড়া স্টিলের রোলার কোস্টার। এরপরে তার পছন্দ ২০১৯ সালে চালু হওয়া স্টার ওয়াস: গ্যালাক্সি'স এজ। এটি পার্কের ভেতরে থাকা একটি কমপ্লেক্স যেখানে নানা রকম রাইড রয়েছে। আর কোনো ডিজনিভক্ত মাত্রই জানেন, এখানের কোনোকিছুই শুধুমাত্র মজার জন্য নয়, বরং সারা জীবনের অভিজ্ঞতা।



ডিজনিল্যান্ডের একজন কাস্ট মেম্বারের সাথে সেলফি নিচ্ছেন জেফ রিটজ।

আর খাবারের জন্য ডিজনিল্যান্ড যে সস্তা নয়, তা স্বীকার করতেই হবে। তবে রিটজ নিজের সুবিধামতো টুমরোল্যান্ড সেকশনে পিজ্জা পোর্ট নামক দোকান থেকে সস্তায় পাস্তা খেয়ে নিতেন।


যে কারণে বারবার এসেছেন


জেফ রিটজ জানান, শুধুমাত্র ডিজনিল্যান্ড জায়গাটির জন্য তিনি বছরের পর বছর এখানে ঘুরতে আসতেন না। বরং এখানকার কর্মীদের আচরণ-ভালোবাসাই তাকে ফিরিয়ে আনতো। এখানকার অতি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন রিটজ।


এছাড়াও, পার্কের কর্মীদের কাছ থেকে নানা ধরনের গল্প জোগাড় করতেন তিনি। এদেরকে 'কাস্ট মেম্বারস' নামে অভিহিত করা হয়। পার্কের গাছপালা থেকে শুরু করে নাআন অদ্ভুত জিনিসের পেছনের অজানা গল্প তাদের কাছ থেকে শুনেছেন রিটজ। আর এটাই তাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিত।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.