গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত আবিষ্কার এআই: বিল গেটস

 


ODD বাংলা ডেস্ক: মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের মতে, গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত আবিষ্কার হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের উন্নয়ন।


গত মঙ্গলবার এক ব্লগ পোস্টে বিল গেটস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মাইক্রোপ্রসেসর, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন আবিষ্কারের মতোই প্রযুক্তিগত ভিত্তি হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, "মানুষের কাজ করা, শেখা, ভ্রমণ করা, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া থেকে শুরু করে যোগাযোগ করা পর্যন্ত সবকিছুই পরিবর্তন করে ফেলবে এটি।"


চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল ব্যবহার করা প্রযুক্তিগুলোকে নিয়েও লিখেছেন তিনি। 


ওপেনএআইয়ের উদ্ভাবন করা চ্যাটজিপিটি এমন এক প্রযুক্তি, যেটি স্বাভাবিক মানুষের ভাষায় প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। এ বছরেরই জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠানটি মাইক্রোসফটের কাছ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে, যেখানে বিল গেটস একজন উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করবেন। 


তবে এটিই একমাত্র এআই-চালিত চ্যাটবট নয়। এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গুগলও তাদের নিজস্ব বার্ড চ্যাটবট এনেছে। চ্যাটজিপিটি সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে না জানলেও বার্ডের এই সক্ষমতা রয়েছে। চ্যাটজিপিটি কেবল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেটা সম্পর্কে জানে। 


বিল গেটস জানিয়েছেন তিনি ২০১৬ সাল থেকেই চ্যাটজিপিটির পেছনে থাকা ওপেনএআইয়ের দলের সাথে বৈঠক করে আসছেন। গেটস তার ব্লগে জানান, তিনি ২০২২ সালে ওপেনএআইয়ের দলকে চ্যালেঞ্জ জানান যে তাদের চ্যাটবটটিকে এ-লেভেল পরীক্ষার সমান অ্যাডভান্সড প্লেসমেন্ট (এপি) বায়োলজি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। শর্ত হলো: চ্যাটবটটিকে জীববিজ্ঞানের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে না। 


কয়েক মাস পর চ্যাটবটটি কেবল পাশই করেনি, উত্তরও দিয়েছেন প্রায় নিখুঁত। পূর্ণ ৫০ মার্কস থেকে মাত্র ১ কম পেয়েছে। পরীক্ষায় পাশ করার পর গেটস এআইকে এক অসুস্থ বাচ্চার বাবার কাছে সংবাদের প্রত্যুত্তর লিখে দিতে বলেন। গেটস জানান, "এটির উত্তর এতটাই চিত্তাকর্ষক যে আমার মনে হয় এই রুমে থাকা বেশিরভাগ লোকের চেয়ে চ্যাটবটটির উত্তর আরও ভালো ছিল।"


"আমি বুঝতে পেরেছিলাম, গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (জিইউআই)-এর পর হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারকে আমি মাত্র দেখে ফেলেছি।"


জিইউআই হলো এমন ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে, যেটি কেবল টেক্সট কমান্ডের মাধ্যমে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের বদলে ব্যক্তিকে ছবি এবং আইকন দেখিয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের সুবিধা দেয়। এটি আবিষ্কারের পরই আশির দশকে দুই অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এবং ম্যাকওএসের জন্ম হয় এবং আধুনিক কম্পিউটিং-এর ভিত্তিইই দাঁড়িয়ে আছে এর ওপর। 


গেটস মনে করেন এআই প্রযুক্তিও একইভাবে আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। 


এআইয়ের ভবিষ্যৎ


দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-মালিক সরকারগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন এআইয়ের ফলে ঝুঁকিতে পড়ে যাওয়া ইন্ডাস্ট্রিগুলোর ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করতে। তবে তিনি বলেছেন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবন বাঁচানোও সম্ভব।


"এআইভিত্তিক উন্নয়নগুলো দরিদ্র দেশগুলোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে, যেখানে পাঁচ বছরের বয়সের আগেই মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখানে থাকা ব্যক্তিদের অনেকেই কখনো ডাক্তার দেখানোর সুযোগ পায় না। ফলে এখানে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা এআই ব্যবহার করে আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারবে।" গেটস উদাহরণ হিসেবে বীমা দাবি করা, পেপারওয়ার্ক করা, নোট টেকিংয়ের মতো বিষয় উল্লেখ করেন। 


তবে এটি হওয়ার জন্য গেটস ভবিষ্যতের এআই প্রযুক্তিগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, "বৈশ্বিক বাজার ব্যবস্থায় সাধারণত এমন কোনো এআই পণ্য বা সেবা উৎপাদিত হবে না যা দরিদ্রকে সাহায্য করবে। বরং এর উল্টোটাই ঘটার সম্ভাবনা বেশি।" 


তিনি বলেন, "নির্ভরযোগ্য অর্থায়ন আর সঠিক নীতিমালা থাকলে, সরকার আর দাতারা মিলে নিশ্চিত করতে পারবে যে এআই বৈষম্য দূর করতে ব্যবহার হচ্ছে।"


"পৃথিবীর বড় বড় সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের যেমন সবচেয়ে বড় মানুষদের প্রয়োজন হয়, তেমনি আমরাও এসব সমস্যর সমাধান করতে সবচেয়ে সেরা এআইয়ের প্রয়োজন হবে।"

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.