শুরু ইনস্টাগ্রাম ছবির ফোন কাভার দিয়ে, এখন বার্ষিক আয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ২০১১ সালে একদিন ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করতে করতে নতুন এক আইডিয়া আসে ওয়েসলি এনজির মাথায়। তখন সবেমাত্র নেটিজেনদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে ইনস্টাগ্রাম। নিজেদের ফোনের ছবি ইনস্টাগ্রামে আপলোড করার দিকে সবারই ঝোঁক। এমনই এক সময়ে ওয়েসলি ভাবলেন, ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা ছবিই মানুষের ফোনের কেস বা কাভারে সেঁটে দিতে পারলে কেমন হয়?


আর এই ধারণা থেকেই হংকংভিত্তিক টেক অ্যাক্সেসরিজ প্রতিষ্ঠান কেসটিফাই এর পথচলা শুরু। ১২ বছর আগে ইনস্টাগ্রামের ছবি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন ওয়েসলি এনজি এবং তার আরেক সঙ্গী রোনাল্ড ইয়ুং। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ মিলিয়ন ফোনের কেস বিক্রি করেছেন তারা। ওয়েসলি-রোনাল্ড জানিয়েছেন, গত বছর তাদের প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় ছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলার!


সিএনবিসি'কে কেসটিফাই-এর সিইও, ৪২ বছর বয়সী ওয়েসলি বলেন, "আমার মনে হয় আমরাই একেবারে শুরুর দিকের একটি ব্র্যান্ড, যাদের জন্ম হয়েছে ইনস্টাগ্রাম থেকে... আমরা আসলে এই প্ল্যাটফর্ম থেকেই বেড়ে উঠেছি।"


সাধারণ ফোনের কেসের ব্যবসা কেসটিফাইকে মাল্টিমিলিয়ন ডলারের একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করার মানে হলো সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাবকে কাজে লাগানো। শুরুর দিকে ওয়েসলি যেসব একাউন্টেরই দেখতেন অনেক বেশি ফলোয়ার রয়েছে, তাদেরকে ম্যাসেজ পাঠাতেন যে তারা নিজেদের কোনো ছবি দিয়ে কাস্টমাইজড ফোনের কাভার বানাতে চান কিনা।


"আমরা দেখলাম যে এই মানুষগুলো যদি আমাদের পণ্য কেনে এবং পছন্দ করে, তাহলে তারা অবশ্যই সেটা তাদের ফলোয়ারদের সঙ্গে শেয়ার করবে। আমরা একদম প্রথম দিন থেকেই ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার কৌশল অবলম্বন করে আসছি। আর এটা আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ", বলেন ওয়েসলি।


কেসটিফাই এর ব্যবসার আংশিক সফলতা এসেছে 'সময়োপযোগীতা' থেকে। পণ্যের প্রচারণা চালানোর জন্য খুব বেশি বাজেট নেই- এমন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে এখন কেসটিফাই এর ইনফ্লুয়েন্সার কৌশল বেশ জনপ্রিয়।


কেসটিফাই এর দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলা অনেক বিখ্যাত তারকাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কাইলি জেনারের মতো তারকাদের পোস্টেও জায়গা করে নিয়েছে কেসটিফাই। ড্রেক এবং অলিভিয়া রদ্রিগোর করা ডিজাইন বিক্রি করছে কেসটিফাই এবং সেই সঙ্গে ডিজনি, নাসা এবং সেইন্ট লরেন্ট এর মতো গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গেও অংশীদারিত্ব বজায় রেখেছে।


কিন্তু এত বড় বড় সব ব্র্যান্ড ও তারকাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরেও কেসটিফাই'কে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে কেনাবেচার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন উদ্ভাবন ছাড়া এখানে কোনো ব্র্যান্ডের সফলভাবে টিকে থাকা খুবই কঠিন।


তাই সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেমন- ইনস্টাগ্রামের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা কমানো। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নতুন কোনো ট্রেন্ড পাওয়া গেলেই তারা এর সঙ্গে যুক্ত হবে। সে কারণেই 'অ্যাজ সিন অন টিকটক' শিরোনামে নতুন কিছু সংগ্রহ নিয়ে এসেছে তারা।


ওয়েসলি বলেন, "টিকটক আমাদের জন্য স্বভাবতই একটা নতুন সংযোজন।"


এছাড়াও, কেসটিফাই তাদের পণ্যের মধ্যেও বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে। বর্তমানে তারা ফোনের কাভার ছাড়াও আরও অনেক আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বিক্রি করছে। শুধু অনলাইনেই বিক্রি নয়, এর পাশাপাশি তারা সরাসরি দেখে কেনাকাটার ব্যবস্থাও চালু করেছে। ২০১৮ সালে নর্ডস্ট্রম কেসটিফাই এর পণ্য বিক্রি করতো। কিন্তু ২০২০ সালে কেসটিফাই নিজেরাই হংকং এ তাদের প্রথম রিটেইল (খুচরা পণ্য বিক্রির) দোকান চালু করে।



বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কেসটিফাই এর ২৫টি 'ব্রিক-অ্যান্ড মর্টার' স্টোর (অনলাইন ব্যবসার পাশাপাশি ছোট দোকান) রয়েছে। তাদের দোকানগুলোর বেশিরভাগই এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অবস্থিত। কেসটিফাই জানায়, তরুণ-সোশ্যাল মিডিয়াপ্রেমীদের জন্য তাদের ই-কমার্স কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। সেই সঙ্গে দোকান চালু করার মাধ্যমে তারা আরও বড় সংখ্যক গ্রাহককে আকর্ষণ করতে চাইছেন বলেন জানান ওয়েসলি এনজি। তাছাড়া, কেসটিফাই এর পণ্য্যের মান আসলে কেমন তা স্বচক্ষে দেখে-যাচাই করে কেনারও একটি ব্যাপার রয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্রে কেসটিফাই এর প্রথম দোকান চালু হয়েছে গত বছর ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারাতে। এই মুহূর্তে তারা আরও কিছু শহরে 'স্টাইল ল্যাব' এর বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। গত মাসেই নিউইয়র্ক সিটিতে তাদের একটি পপ-আপ চালু হয়েছে। স্টাইল ল্যাবে ক্রেতারা তাদের পছন্দমতো ডিজাইন তৈরি করতে পারেন, যেখানে আধাঘণ্টার মধ্যেই তাদের ডিজাইন অনুযায়ী ফোনের কাভার বা অন্য কোনো পণ্য বানিয়ে দেওয়া হবে। ওয়েসলির ভাষ্যে, 'এটা তাৎক্ষণিক তুষ্টি দেয়'।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.