রেলপথের ওপর বিশ্বের প্রথম সৌর প্যানেলের ‘কার্পেট’ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ইউরোপীয় স্টার্টআপ কোম্পানি সান-ওয়েজ এক নতুন ধরনের মেকানিকাল ডিভাইস তৈরির পরিকল্পনা করেছে, যার মাধ্যমে রেলপথের ওপর খুলে আনা যায় এমন সৌরপ্যানেল বসানো যাবে। সুইটজারল্যান্ডভিত্তিক এই এনার্জি স্টার্টআপের তথ্যানুযায়ী, সারাবিশ্বের অর্ধেক রেলপথের ওপর এই নব্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব।


'রেললাইনের মাঝখানে যথেষ্ট ফাঁকা অংশ রয়েছে, যেখানে ট্রেনের চলাচলকে ব্যাহত না করেই স্বাভাবিক আকারের সৌরপ্যানেল বসানো সম্ভব,' বলে দাবি করেছেন সান-ওয়েজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্যাপ্টিস্ট ড্যানিশার্ট। তিনি বলেন, "এর মাধ্যমে আমরা [সুইজারল্যান্ড] আমাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারবো। বিশাল ফাঁকা জায়গার অভাবের কারণে বড় সৌরপ্যানেল বসানো সম্ভব হয় না। তবে যদি রেলপথের ওপর আমরা সৌরপ্যানেল বসাতে পারি, তবে পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না, এমনকি আলাদা করে চোখেও পড়ে না।"


সৌরপ্যানেল বসানোর পদ্ধতি কী?


সান-ওয়েজ সুইটজারল্যান্ডের কারখানা থেকে অ্যাসেম্বল করা এক-মিটার চওড়া প্যানেলগুলো সরাসরি রেললাইনের ফাঁকে বসিয়ে দেওয়া হয়। রেললাইনের পাতগুলোর ওপর পিস্টন ব্যবহার করে সেগুলো লাগিয়ে দেওয়া হবে। সুইস কোম্পানি শয়েশজারের তৈরি একটি ট্রেনের মাধ্যমে ম্যানুয়ালি প্যানেলগুলো পাতের ওপর বসানো হবে। সান-ওয়েজের মতে কার্পেট যেভাবে খোলা হয়, ঠিক সেভাবে মুড়িয়ে রাখা প্যানেলগুলো খুলে রেললাইনের পাতের ওপর বসিয়ে দেওয়ার কাজ করে ট্রেনটি।


রেললাইনের ওপর সৌরপ্যানেল বসানোর আইডিয়াটি অভিনব কিছু নয়। এর আগে ইতালির গ্রিন রেইল এবং ইংল্যান্ডের ব্যাংকসেট এনার্জি নামের দুইটি প্রতিষ্ঠানও পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে। তবে সুইস ফেডারেল টেকনোলজি ইনিস্টিউট এবং ইপিএফএল-এর সহযোগিতায় সান-ওয়েজের এই প্রকল্পের নতুনত্ব হলো এর প্যানেল আলাদা করার ব্যবস্থা, যেটিকে তারা পেটেন্ট করে নিয়েছে। 


ড্যানিশার্ট জানান, 'এটাই ইনোভেশন।' তার মতে, রেল গ্রাইন্ডিং করার মতো মেইনটিন্যান্স কাজ করার জন্য প্যানেল খোলা প্রয়োজন। ট্রেনগুলো রেললাইনের ওপর দিয়ে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই চলতে পারে রেল গ্রাইন্ডিং করার কারণেই। 


সৌরপ্যানেল থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ পাওয়ার গ্রিডের মাধ্যমে পাঠিয়ে আবাসিক কাজে ব্যবহার করা হবে। তবে ট্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন আরও জটিল এবং আরও বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ড্যানিশার্ট। 


তবে সান-ওয়েজের এই প্রযুক্তি এখনো নিশ্ছিদ্র নয়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ রেইলওয়েজের আশঙ্কা প্যানেলগুলো রেললাইনে ক্ষুদ্রাকার ফাটল তৈরি করতে পারে, বনে আগুন ধরে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, এমনকি সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে রেলচালককে সমস্যাতেও ফেলতে পারে। 


তাদের সৌরপ্যানেল সূর্যের আলো যেন প্রতিফলিত না করতে পারে সেজন্য সাধারণ সৌরপ্যানেলের চেয়ে ভিন্নভাবে তাদের প্যানেল তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সান-ওয়েজ। 


বিশ্বের ৫০ শতাংশ রেলপথ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে


সুইটজারল্যান্ডের রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৫,৩১৭ কিলোমিটার এবং এর প্রায় সব অংশেই সৌরপ্যানেল বসানো সম্ভব। টানেল এবং কম সূর্যের আলো পৌঁছায় এমন জায়গা বাদ দিয়েও পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া এমন রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৬০টি ফুটবল মাঠে সমান। সানওয়েজের মতে, রেলপথে সৌরপ্যানেল লাগানো হলে বছরে ১ টেরাওয়াট-ঘণ্টা বা সুইটজারল্যান্ডের বিদ্যুৎ চাহিদার দুই শতাংশ উৎপাদন করা সম্ভব। 


তবে স্টার্টআপটির লক্ষ্য কেবল আলপাইন অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাই নয়, সান-ওয়ের লক্ষ্য ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও তাদের প্রকল্প ছড়িয়ে দেওয়া, যার মধ্যে রয়েছে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়াও। 


ড্যানিশার্ট জানান, "পৃথিবীজুড়ে দশ লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি রেলপথ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এর অর্ধেক পথে আমাদের প্রযুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব।"


পাইলট প্রকল্পটি পশ্চিম সুইটজারল্যান্ডের বুটেস ট্রেন স্টেশনের কাছ থেকে শুরু হবে। এই প্রকল্পের ব্যয় শরা হয়েছে ৪ লক্ষ সুইস ফ্রাঁ বা ৪,৩৭,২৪০ মার্কিন ডলার। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.