৫০ বছরে বারকোড, তবে কে উদ্ভাবক বিতর্ক ফুরোয়নি এখনও

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বারকোড। প্যাকেটজাত খাবার, ওষুধের বোতল, ইলেকট্রনিক পণ্যের বক্স কিংবা লাগেজ- এসবের গায়ে ছাপানো সমান্তরাল রেখার আয়তক্ষেত্রটি কারো অজানা নয়। এবার অর্ধশত বর্ষে পা রাখলো বারকোড।  


উদ্ভাবনের পর থেকে এই ইউনিভার্সাল প্রোডাক্ট কোডটি সারাবিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত ট্র্যাকিং টুল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে, বারকোডের ধারণা আসলে কার কাছ থেকে এসেছে, তা নিয়ে রয়েছে বিরোধ।


এয়ারলাইনস থেকে শুরু করে ফার্মেসি, এমনকি মুভি থিয়েটার ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিদিন কোটি কোটি পণ্য স্ক্যান করা হয়। লেজার-চালিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইউনিভার্সাল প্রোডাক্ট কোড দিয়ে সহজেই পণ্য স্ক্যান করা যায়। এটি মূলত বিশ্বের রিটেইল শিল্পে এনেছে অভাবনীয় পরিবর্তন।


তাছাড়া, সহজে পণ্য ফেরত দেওয়া, সেলফ চেক আউট (দোকানে নিজে নিজেই পণ্য স্ক্যান করে চেক আউট করা) এর মতো বিষয়গুলোকে সম্ভব করেছে বারকোড।


গ্লোবালডেটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিল সন্ডার্স বলেন, "বারকোডের প্রভাব আসলে 'রেভলিউশনারি'। খুচরা বিক্রেতাদের ব্যবহারের জন্য একটি 'দক্ষ এবং সাশ্রয়ী' বিকল্প এটি। বর্তমানে বারকোড ব্যবহার করেনা এমন কোনো পণ্য বাজারে নেই।"


বারকোডের উদ্ভাবক কে?


বিশ্বের বেশকিছু দুর্দান্ত আবিষ্কারের মতো বারকোডের উৎসও বিতর্কিত। শুরুতে বারকোড ব্যবহারের বিরোধিতা করেছিল বিভিন্ন শিল্প। কিন্তু পরবর্তীতে এর চূড়ান্ত সাফল্যের কৃতিত্ব দাবি করে অনেকেই।


তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যখন বাজারে নতুন নতুন পণ্য আসে, তখন কাউন্টারে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করা আমেরিকানদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৪০ এর গোড়ার দিকে সুপারমার্কেটের গতি বাড়াতে নতুন এক পদ্ধতি চালু করা হয়।


ফিলাডেলফিয়ার ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটির স্নাতকের দুই শিক্ষার্থী বার্নার্ড সিলভার ও নরম্যান জোসেফ উডল্যান্ড ১৯৫২ সালে প্রাথমিক বারকোড সিস্টেমের একটি পেটেন্ট বানান। উডল্যান্ড পরে বলেছিলেন, বয় স্কাউটে শেখা মোর্স কোড থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্যাটার্নটি বানান তিনি।


মজার বিষয় হলো, তাদের প্রোটোটাইপটি বর্তমান বারকোডের মতো আয়তাকার ছিলোনা। সিলভার ও উডল্যান্ডের প্রোটোটাইপ ছিল গোলাকৃতির! এখনকার বারকোডে লাইনগুলো যেমন সমান্তরালভাবে ছাপানো থাকে, তাদের বারকোডে লাইনগুলো ছিল বৃত্তের কেন্দ্রমুখী গোলাকৃতির।


তবে, প্রাথমিক এ প্রোটোটাইপ জটিল হওয়ার কারণে এটি পড়াও ছিল কঠিন। লেজার-চালিত অপটিক্যাল স্ক্যানিং ধরতে এবং বারকোডগুলোকে বড় পরিসরে প্রায় সবরকমের পণ্যে ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে বেশ সময় লেগেছে।


প্রাথমিক বাধা


এদিকে, সুপারমার্কেট চেইন ক্রোগার, ফুড ফেয়ার এবং ইউকে-ভিত্তিক সেনসবারি'স (প্লাস আরসিএ এবং আইবিএম) প্রোটোটাইপ বা এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করলেও প্রথমে বাধার মুখে পড়েছিল। ২০১৫ সালের স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনে বারকোডের ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, প্রাথমিকভাবে গ্রোসারি শপগুলো এ ধরনের সার্বজনীন ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিল; আর তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল ক্যান প্রস্ততকারক কোম্পানিগুলোও। তারা এই সম্পূর্ণ ধারণা এবং এর পিছনে হতে যাওয়া সম্ভাব্য অতিরিক্ত খরচ উভয়কেই অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।


কিন্তু এই প্রযুক্তির গতি এবং সুবিধা শেষ পর্যন্ত সকল বাধা-বিপত্তিকে জয় করে নিজের অবস্থান তৈরি করে নেয়। 


তবে ১৯৬০ সালের আগ পর্যন্ত বারকোড কার্যত বাস্তবায়িত হয়নি। সিলভানিয়া ইলেক্ট্রিকস ল্যাবের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ডেভিড জে. কলিন্স, সর্বপ্রথম আলোর ঝলকানি দিয়ে বারকোড স্ক্যান করার পথ দেখান। প্রাথমিকভাবে, বারকোড ব্যবহার করে রেলগাড়িগুলোকে বিভিন্ন রঙের বার-প্যাটার্নে চিহ্নিত করে ট্র্যাক করা হতো। ২০২২ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক অবিচুয়ারিতে তাকে বারকোড আবিষ্কারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।


বারকোডের শুরু ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল। কারণ এ দিনেই সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার জর্জ লররের তৈরি আইবিএম সংস্করণটি যথাযথ শিল্পমানের অনুমোদন পায়। তাই ৩ এপ্রিলই পালিত হয় বারকোডের জন্মদিন।


২০১৯ সালের নিউইয়র্ক টাইমসের এক অবিচুয়ারিতে লররকে বারকোডের ডিজাইনার এবং বিকাশকারী হিসাবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। যদিও এর জন্য লরর কোনো রয়্যালটি পাননি বলেও উল্লেখ করা হয় সেখানে।


১৯৭৪ সালের গ্রীষ্মের প্রথম দিকে ওহাইও'র মার্শ সুপারমার্কেটে বারকোডযুক্ত প্রথম পণ্যটির ঠাই হয়; এরপরই বিশ্বব্যাপী এই প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটতে থাকে। প্রথম যে আইটেমটি স্ক্যান করা হয়, সেটি ছিল রিগলি'স জুসি ফ্রুট চুইংগামের ১০ প্যাকের একটি ব্যাগ। সে সময়ে এর মূল্য ছিল ১.৩৯ ডলার।


বহু বছর পর, বারকোডের ইতিহাস সম্পর্কিত এক জাদুঘর প্রদর্শনীতে সেই রিগলি'স গামের একটি রেপ্লিকা স্থাপন করেছিল স্মিথসোনিয়ান। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.