রক্তবমি ও কালো পায়খানা হলে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বেশ কয়েকটি কারণে পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ হয়। যেমন-ডুইডেনাল আলসার, গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং ননষ্টরয়েডজনিত ঔষধ (অ্যাসপিরিন, ডাক্লেফোনাক জাতীয়)। এ ছাড়া ব্যথা নিরাময়কারী ঔষধ সেবনে পাকস্থলীর ছোট ও বড় ঘা সৃষ্টি করে। ইসোফোজিয়াল ভ্যারিকস, লিভার সিরোসিস অসুখের ফলে খাদ্যনালীর রক্তনালী ফুলে ওঠা, পাকস্থলীর ক্যান্সার ও ম্যালরিওয়েস টেয়ার (বার বার বমির কারণে খাদ্যনালীর নিচের অংশে ঝিল্লি ছিঁড়ে যাওয়া) কারণগুলোও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।  রক্তবমি ও কালো পায়খানার জন্য পাকস্থলীর আলসারজনিত প্রথম ২টি কারণই অতি দায়ী।  যেসব রোগী পাকস্থলীর উপরিভাগের রক্তক্ষরণ নিয়ে  চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন  তাদের একাংশের রক্তক্ষরণটি ননষ্টরয়েড জাতীয় ব্যথা নিরাময়কারী ওষুধ সেবনের ফলেই হয়ে থাকে। অন্যান্য কারণের মধ্যে লিভার রোগীদের একাংশ যারা রক্তবমি নিয়ে আসে তাদের অধিকাংশ খাদ্যনালীর ভ্যারিকস থেকে রক্তক্ষরণ হয়। 

উপসর্গ

রক্তক্ষরণের বমির রং কালচে অথবা কফি গোলা জলের মতো  হতে পারে। অতিরিক্ত ক্ষরণে বমির সঙ্গে জমাট বাঁধা রক্ত দেখা দিতে পারে। আর পায়খানার  রং সাধারণ আলকাতরার রংয়ের মতো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সব সময় রোগীকে আয়রন ও  চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনের কথা আমরা জেনে থাকি।


কেননা, উপরোক্ত দুইটি ঔষধ সেবনে কাল রং-এর পায়খানা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণে পায়খানার সঙ্গে টাটকা অথবা জমাট রক্ত পড়তে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে রোগীর রক্তবমি ও কালো পায়খানা হওয়া ছাড়া রক্তক্ষরণ হতে পারে। এক্ষেত্রে পায়খানার পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তক্ষরণ উপস্থিতি ধরা পড়ে। কিছু রোগী মাথা ঘোরা ও বুকের ব্যথা করা বিশেষ করে হৃৎপি-ে রক্ত চলাচলের ব্যাঘাতের কারণে ও শ্বাসকষ্ট অনুভূত হতে পারে। কালো পায়খানা ও রক্তবমি ছাড়াও রোগী অন্যান্য লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারে। অনেকে মাথা ঘুরে বা ঘুরে পড়ে যাওয়া, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, বুকে ও দ্রুত হৃৎস্পন্দনজনিত সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের রক্তচাপ কমে যায়। এমনকি অনেকে অতিরিক্ত রক্তচাপ কমার ফলে জ্ঞান হারাতে পারেন। রক্তক্ষরণের ফলে চোখ-মুখ ফ্যাকাশে দেখায়। 

নির্ণয় পদ্ধতি

পরিপাকতন্ত্রের উপরের অংশ এনডোসকপি পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তবমি ও কালো পায়খানার কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্ণয় করা সম্ভব। এ ছাড়াও এই পদ্ধতিতে রক্ত ক্ষরণের স্থান নির্ণয় করা হয়। সর্বোপরি এনডোসকপির মাধ্যমে পাকস্থলীর রক্তক্ষরণের চিকিৎসা করা হয়। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। বাকি ২০ ভাগ চিকিৎসা ছাড়া ভালো হয় না, এমনকি  মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকে। যদি রোগ ও রোগীর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে অনুমান করা যায় যে পুনঃরক্তক্ষরণ ও মারাত্মক কিছু ঘটার সম্ভাবনা কতোটুকু। গবেষণায়  দেখা যায় যেসব রোগী বৃদ্ধ এবং যাদের অন্য কোনো বড় ধরনের রোগে ভুগছে এবং রক্ষক্ষরণের জন্য যারা ৫ ব্যাগের বেশি রক্ত গ্রহণ করেছে তাদের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া পাকস্থলীর ক্ষতের বৈশিষ্ট্য পুনঃরক্তক্ষরণ ও মৃত্যু ঘটনাও ঘটতে পারে।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন

রক্তবমি ও কালো পায়খানা হলে বসে বসে অবহেলা নয়। এধরনের রোগীদের জরুরি ভাবে হাসপাতালে পরিপাকতন্ত্র, কলোরেক্টাল ও লিভার বিশেষজ্ঞের অধীনে ভর্তি করতে হবে।  মনে রাখতে হবে অবহেলার কারণে অনেক রোগী  এ রোগে মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে থাকে। বিশ্বের উন্নত দেশেও শতকরা ৫-১০ ভাগ রোগী পাকস্থলীর রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যু হয়।  বর্তমানে নিজে নিজে ব্যথার ওষুধ খাওয়ার ফলে  আমাদের দেশে এ রোগের হার মারাত্মক হারে বাড়ছে। তাই নিজে থেকে ওষুধ নয়, যেকোনো অসুখ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেলে এ রোগ থেকে বাঁচতে পারি। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.