শতকরা ৯১ ভাগ প্রতিষ্ঠান চ্যাটজিপিটির দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী খুঁজছে!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বর্তমানে গড়ে দশটি প্রতিষ্ঠানের নয়টিই চ্যাটজিপিটির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মী খুঁজছে। দ্রুত বিকাশমান আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) কমিউনিকেশন টুলস বিষয়ক জ্ঞানের চাহিদা চাকরির বাজারে কতখানি, তা নিরুপণে একটি জরিপ করতে গিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে; খবর দ্য হিলের।


চলতি মাসে চাকরির প্ল্যাটফর্ম রেজিউমি বিল্ডার ডটকমের একটি পোলে ১,১৮৭ জন বিজনেস লিডারের দেওয়া তথ্যের মাধ্যমে জরিপটি করা হয়। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, শতকরা ৯১ ভাগ প্রতিষ্ঠান চ্যাটজিপিটির দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী খুঁজছে। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান জরুরী ভিত্তিতে চ্যাটবটের সঙ্গে কথপোকথনে পারদর্শী এমন কর্মীর খোঁজ করছে।


নতুন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমটি তৈরি করেছে ওপেনএআই। ওপেনএআই বলছে, রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং ফ্রম হিউম্যান ফিডব্যাক নামক একটি মেশিন লার্নিং কৌশল ব্যবহার করে চ্যাটজিপিটি মডেলকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এটি কথোপোকথন শুরু, প্রশ্নের উত্তর প্রদান, ভুল স্বীকার, ভুল অনুমান চ্যালেঞ্জ এবং অযাচিত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে সক্ষম। গত বছরের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটি লঞ্চ করা হয়।


এ সম্পর্কে রেজিউমি বিল্ডারের প্রধান ক্যারিয়ার উপদেষ্টা স্ট্যাসি হ্যালার বলেন, "সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, মাত্র ৫ মাস আগে চ্যাটজিপিটি সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। হঠাৎ করেই প্রযুক্তিটির ওপর ভিত্তি করে চাকরির একটা আলাদা বাজার তৈরি হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো চাকরিতে প্রায় দুই লাখ মার্কিন ডলার বেতন দেওয়া হচ্ছে।"


ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে চ্যাটজিপিটি বিশেষজ্ঞদের 'প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার' নামে ডাকা হচ্ছে।  


নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট এর ম্যানেজমেন্ট এন্ড অর্গানাইজেশন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাতিম রহমান বলেন, "চ্যাটবট থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে দক্ষতার প্রয়োজন। নির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন করার জন্য মডেলটিকে যথাযথ নির্দেশনা দিতে হয়। ধরুন আপনি একজন ক্রেতা। এই পণ্যটির বিবরণ জানার পর আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে? এই মডেলটি থেকে অর্থপূর্ণ তথ্যাদি বের করে আনার জন্য এক ধরনের বোঝাপড়ার দরকার হয়।"


প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক বেতন দুই লাখ ডলারেরও বেশি হতে পারে, এবং একজন চ্যাটবট বিশেষজ্ঞ একসঙ্গে একাধিক বিভাগে কাজ করতে পারেন। হ্যালার বলেন, "তারা জব ডেসক্রিপশন (কর্মীকে তার দায়িত্ব-কর্তব্য বুঝিয়ে দেওয়া) এর ক্ষেত্রে এইচআরকে সাহায্য করতে পারে। তারা মার্কেটিং বিভাগকে কপি লিখতে অথবা আইটি বিভাগকে কোডিং এর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। এজন্যেই তাদের বেতন এত বেশি।"


কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের মতে, এতদিন ই-মেইল, বিজনেস প্ল্যান, রচনা লিখন, কোডিং, ক্রেতাদের প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মতো কাজগুলো কর্মীরাই করে আসতো। কিন্তু খুব শীঘ্রই এইআই চ্যাটবট এর দখল নেবে।


রেজিউমি বিল্ডারের জরিপ অনুযায়ী, পোলে অংশ নেওয়া শতকরা ৫৮ ভাগ বিজনেস লিডার চ্যাটজিপিটি-প্রশিক্ষিত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের খোঁজ করছেন।


মোটাদাগে এক-তৃতীয়াংশ লিডার গ্রাহক পরিষেবা, মার্কেটিং ও জনসংযোগ বিভাগে চ্যাটবটের জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী চান। অল্প সংখ্যক প্রতিষ্ঠান ডাটা এন্ট্রি, সেলস কিংবা ফাইন্যান্সের কাজের জন্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মী খুঁজছে।


কোম্পানির উচ্চ থেকে নিন্ম, প্রায় সব পদেই চ্যাটজিপিটিতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মী খুঁজছে কোম্পানিগুলো। শুধুমাত্র কোম্পানির বিশেষ ব্যবহারের জন্য কাস্টমাইজড লার্জ-ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তৈরি করতে পারবে- এমন কর্মী খুঁজছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।


যেসব কোম্পানি প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার খুঁজছে, তাদের শতকরা ৭৫ ভাগ প্রতিষ্ঠানই মনে করে এতে করে অন্যান্য কর্মীরা চাকরি হারাবেন।


এ সম্পর্কে হ্যালার বলেন, "ইতিহাসের দিকে তাকালে বুঝা যায়, নতুন প্রযুক্তি কর্মক্ষেত্রে সবসময় বড় পরিবর্তন এনেছে। তিনি ফ্যাক্স মেশিনের কথা উল্লেখ করেন, ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে দ্রুত নথিপত্র পাঠানো যেত।" 


তবে হাতিম রহমান বলেন, "ফ্যাক্সের মতো চ্যাটবট সবকিছুতে অতটা পরিবর্তন আনতে পারবে না। এটি তথ্য পুনরুদ্ধারে ব্যক্তিকে আরও বেশি উৎপাদনশীল করে তুলতে সাহায্য করতে পারবে।"


চ্যাটবটের প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য কম্পিউটার সাইন্সেই পড়াশোনা করতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিন একজন চ্যাটবট বিশেষজ্ঞের গল্প তুলে ধরেছে, যিনি ইংরেজি বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন।


চ্যাটবট হুইস্পারার এর কাজটা হলো- কিভাবে প্রণোদিত করলে সবচেয়ে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে সেই উপায় খুঁজে বের করা। এর জন্য সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা থাকার প্রয়োজন হয়।


হাতিম রহমান বলেন, "আপনি চ্যাটবটে আজকে প্রশ্ন করে যে উত্তর পাবেন, আগামীকাল বা তার পরেরদিনও ঠিক একই উত্তর নাও পেতে পারেন।"


চ্যাটজিপিটির প্যারেন্ট কোম্পানি ওপেনএআই গত মার্চ মাসে জিপিটি-৪ নামে আপডেটেড সংস্করণ চালু করেছে। পূর্ববর্তী সংস্করণের সুবিধার পাশাপাশি নতুন সংস্করণে কোডিং করা ও ছবি থেকে নির্দেশনা গ্রহণের সুবিধাও রয়েছে।


প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট ইতোমধ্যেই ওপেনএআই-তে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং নিজেদের সার্চ ইঞ্জিন বিং এর একটি আপডেটেড সংস্করণ এনেছে, যার মধ্যে বিল্ট-ইন এআই চ্যাটবট প্রযুক্তি রয়েছে।


ওপেনএআইয়ের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে অন্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও এআইয়ের দিকে ঝুঁকছে। টেসলা, স্পেসএক্স ও টুইটারের সিইও ধনকুবের ইলন মাস্ক গত মাসে এক্স.এআই নামক একটি কোম্পানি চালু করেছেন।


আরেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল গত ফেব্রুয়ারি মাসে চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চ্যাটবট প্ল্যাটফর্ম 'বার্ড' আনার ঘোষণা দিয়েছিল।


এদিকে এআই প্রযুক্তির দ্রুতগতিতে উন্নতি ও বিপুল পরিমাণ কর্মী নিয়োগের ফলে ভুল ও পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।  তবে দিনশেষে কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এআই যে খুব কার্যকরী হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ সম্পর্কে হ্যালার বলেন, "এআই প্রযুক্তির ফলে কোম্পানিগুলো পূর্বের তুলনায় আরও বেশি সৃজনশীল হবে; কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে অর্থ সাশ্রয় করাও সম্ভব হবে।"

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.