আপেল খাওয়ার আগে কি মোমের প্রলেপ সরিয়ে নেওয়া উচিৎ?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: সুপারমার্কেটে থাকা ফলগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। নিখুঁত গড়ন, উজ্জ্বলরঙা এবং জ্বলজ্বলে ফলগুলোর বাহ্যিক গড়ন দেখলে এগুলকে যে কেউই নির্দ্বিধায় 'নিখুঁত' বলতে রাজি হয়ে যাবে। তবে প্রায়ই শোনা যায়, এই ফলগুলোর এই উজ্জ্বলতা নকল। এবং আসলেই তাই। প্রথম যখন কেউ জানতে পারে সুপারমার্কেটে থাকা আপেলগুলোর ওপর মোমের প্রলেপ থাকে, তখন সবাই কিছুটা চমকে ওঠে। এবং যখন এই তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় তারা, তখন স্বাভাবিকভাবেই এই আপেলের মোম নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। 


এরকমই ফলের ওপর থাকা মোম নিয়ে সতর্ক করা একটি পোস্ট বেশ কয়েকবার সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ২০২১ সালে এই বিষয় নিয়ে টিকটকের এক ভিডিওতে ১ লক্ষেরও বেশি লাইক পড়েছে। ভিডিওতে সতর্ক করে বলা হয়, এই মোম খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যান্সার হতে পারে। তাই আপেল খাওয়ার আগে ধুয়ে অথবা চামড়া তুলে ফেলে ওপরে থাকা মোম সরিয়ে ফেলা উচিৎ। হয়তো আপেল খাওয়ার জন্য একটু কষ্ট করতে হবে, কিন্তু এর ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি তো কমছে! নিশ্চয়ই শুনতে ভালো লাগছে? 


টিকটক থেকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপদেশ নেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, আর এই ভিডিওটিই এর নিখুঁত একটি উদাহরণ। মোমের ওপরে থাকা প্রলেপ মোটেই কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, আর এটি আপেলের ওপরে থাকার শক্ত কারণও রয়েছে। 


কেন ফলের ওপর মোমের প্রলেপ দেওয়া হয়?


ফলের ওপর মোম দেওয়ার দুটো মূল কারণ রয়েছে: একটি হলো সংরক্ষণ, আরেকটি উপস্থাপন। প্রত্যেকটি ফলেই একে সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক মোম থাকে। একইসাথে বাইরের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসসহ অণুজীব যেন একে আক্রমণ করতে না পারে, আর ভেতরের ময়েশ্চার যেন বাইরে বের হতে না পারে, সে জন্যই এই প্রাকৃতিক মোম উৎপন্ন হয়। যদি মোমের এই প্রলেপ না থাকে, তবে ফল খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়। 


তবে এই ফলগুলোকে যখন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়, তখন সেগুলোকে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়, যাতে করে কোনো ময়লা কিংবা প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিম কীটনাশক না থেকে যায়। এবং এই ধোয়ার ফলে আপেলের ওপর থেকে সেই প্রাকৃতিক মোমের প্রলেপ উঠে আসে। এই ক্ষতি পূরণের জন্য ধুয়ে ফেলা আপেলগুলোর ওপর মোমের প্রলেপ দেওয়া হয়। 


নষ্ট হওয়া আর ময়েশ্চার বের হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা এই মোমের ফলে ফলটির খোসা দীর্ঘদিন ধরে ভালো থাকে, যার ফলে এই ফলগুলো দীর্ঘদিন করে স্টোর করে রাখা যায়, এমনকি বহুদূর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। মোমের ফলে ফলের বাহ্যিক অংশও চকচক করে, যা ক্রেতাদের কাছে ফলটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। 


ফলের ওপর ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মোম ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কারনাউবা মোম, যেটি ব্রাজিলের পাম গাছের পাতা থেকে উৎপন্ন হয়। এছাড়াও ক্যান্ডেলিলা নামের আরেক ধরনের মোম ব্যবহার হয়, এটিও মেক্সিকো এবং দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রের মরুভূমিতে থাকা এক ধরনের গাছ থেকে পাওয়া যায়। 


মোমে ফল ডুবিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়, তবে বেশিরভাগ সময় এর স্প্রে নোজলের মাধ্যমে মোম স্প্রে করা হয়। ফলে লাগানোর আগে এই মোমের সাথে এত বেশি জল মেশানো হয় যে, এক গ্যালন মোম দিয়ে ১০ হাজার পাউন্ড সাইট্রাসের ওপর প্রলেপ দেওয়া সম্ভব। 


মোম নিয়ে কি দুশ্চিন্তা করা উচিৎ?


মোম নিয়ে অনেকেই বিভিন্নভাবে তাদের দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন, এরমধ্যে অনেকেই মনে করেন এই মোম খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যান্সার হয়। এবং এর পরিপ্রেক্ষিতেই অনলাইনে অনেক ব্লগ পোস্ট পাওয়া যাবে, যেখানে কীভাবে আপেলের ওপরে থাকা মোম সরিয়ে ফেলতে হবে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা আছে। 


অনেকের মতেই, কেবল জল দিয়ে ধুলেই এই মোম যাবে না, কারণ ওপরের মোম জলরোধক। তাই ব্রাশ দিয়ে ঘষে ওপরের মোমের কোটিং পরিষ্কার করার উপদেশ দিয়েছেন অনেকে। তাছাড়া বেকিং সোডা দিয়ে ধুয়ে ফেলার পরামর্শও দেন অনেকে। আবার অনেকে আপেলের পুরো খোসাই ফেলে দিতে বলেন, কিন্তু আপেলের অন্যতম স্বাস্থ্যকর অংশটিই হলো এর খোসা। বাস্তবে, এর কোনোটিই করার দরকার নেই, কারণ এই মোম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষকতিকর কিছু নয়। 


যেসব সূত্র থেকে এই আপেলের মোম থেকে ক্যান্সার হওয়ার মতো দাবি করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই করেছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা, যাদের কাছে এর কোনো শক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তাছাড়া ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপস জানিয়েছে ফলে ব্যবহার করা মোমগুলোতে কোনো ক্যান্সার-উৎপাদনকারী রাসায়নিক নেই। এই মোমগুলো আমাদের শরীর থেকে প্রাকৃতিকভাবে বের হয়ে যায় এবং আমাদের শরীর এই মোম শোষণ করে না।


অনেকেই আবার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন যে মোমের ফলে হয়তো এই প্রলেপের নিচে কীটনাশক থাকতে পারে। কিন্তু এই উপাদান মোমের প্রলেপ দেওয়ার আগে ধোয়ার সময়ই চলে যাওয়ার কথা। তাই আপনি নিশ্চিন্তে মোমের প্রলেপ দেওয়া আপেল খেতে পারেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.