সন্তানদের নাচতে শেখায় মৌমাছিরা!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: একটা মৌমাছির জীবনে সফল হওয়ার জন্য নাচ শেখাটা অত্যাবশ্যক। কারণ আশপাশে কোথায় মধু বা পরাগরেণু আছে, সে খবর মৌমাছি সঙ্গীদের জানায় নেচে নেচে। অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মৌমাছিরা মধু বা পরাগরেণুর অবস্থা, দিক, দূরত্ব, এমনকি স্বাদের খবরও জানিয়ে দেয়। খবর দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর।


নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মৌমাছিরা জন্মগতভাবে নাচে দক্ষ হয় না। ঠিকঠাকমতো নাচার জন্য বাচ্চা মৌমাছিদের রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেয় প্রাপ্তবয়স্ক মৌমাছিরা। 


দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে ওই গবেষণার অন্যতম গবেষক, ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়ার জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক জেমস সি. নিয়েহ বলেন, ঠিকমতো না শিখলে নাচে অনেক ভুলভাল হতে পারে। আর তাতে মধুর উৎস সম্পর্কে ভুল দিকনির্দেশনা পেতে পারে অন্য মৌমাছিরা। কাজেই নাচে ভুল কমানোর জন্য আনাড়িরা অভিজ্ঞ মৌমাছিদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়।


সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মৌমাছিসহ অন্যান্য কিছু কীটপতঙ্গ জিনগতভাবে কিছু কাজের দক্ষতা পেয়ে যায় না। এই দক্ষতা তারা অর্জন করে অন্যদের দেখে দেখে, যাকে বলা হয় 'সামাজিক শিক্ষণ'। এ বৈশিষ্ট্য মূলত বানর ও পাখির মতো বড় মস্তিষ্কের প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়।


নিয়েহ বলেন, 'এটা আসলেই জটিল যোগাযোগব্যবস্থার সামাজিক শিক্ষণ।'


গবেষণার জন্য নিয়েহ ও তার দল গবেষণাগারে ১০টি কলোনিতে ইউরোপীয় মৌমাছিদের ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেছেন। এজন্য তাদের মৌমাছির হুলের দংশনও সইতে হয়েছে।


এ গবেষণায় অর্ধেক মৌচাকে বাচ্চা মৌমাছিদেরকে বয়স্কদের নাচানাচি পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেওয়া হয়। বাকি অর্ধেক মৌচাকে বাচ্চা  মৌমাছিদের নাচ শেখার ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়।


পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অভিজ্ঞ নাচের সঙ্গী পায়নি এমন প্রায় ১০ দিন বয়সি মৌমাছিরা অনেকটা আনাড়িভাবে নেচেছে। অন্যদিকে অভিজ্ঞ নাচের সঙ্গী পাওয়া ১০ দিন বয়সি মৌমাছিরা তুলনামূলক অনেক ভালো ও নিখুঁত নাচ দিয়েছে। 


সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের খাদ্যের উৎস খুঁজে বের করায় আগের চেয়েও দক্ষ হয়েছে তরুণ মৌমাছিরা। 


মৌমাছিরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল সংঘবদ্ধ সামাজিক জীবনযাপন করে। কিছু বিজ্ঞানী তো মৌচাককে 'সুপারঅর্গানিজম' পর্যন্ত আখ্যা দিয়েছেন।


অ্যারিস্টটল মৌমাছিদের নাচানাচি লক্ষ করেছিলেন। তিন আরও লক্ষ করেন, মৌমাছিরা একই ফুলে বারবার ফিরে আসে। 


১৯৭৩ সালে মৌমাছির নাচের আংশিক অর্থোদ্ধারের জন্য অস্ট্রিয়ান জীববিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিশ নোবেল জেতেন।


অতি সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মৌমাছিকে দড়ি টানার, এমনকি একে অপরকে ফুটবলের মিনিয়েচার গেম শেখার প্রশিক্ষণও দিয়েছেন।


নিয়েহদের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার মৌমাছির শেখার সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিষের সংস্পর্শে থাকলে এদের কাজেকর্মে ভুলের পরিমাণ বেড়ে যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.