যার ভয়াবহ অপরাধ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছিল ‘সাইলেন্স অভ দ্য ল্যাম্বস’ সিনেমা
ODD বাংলা ডেস্ক: সিরিয়াল কিলার বাফেলো বিল। ১৯৯১ সালের সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার সিনেমা 'সাইলেন্স অভ দ্য ল্যাম্বস'-এর অবিস্মরণীয় চরিত্র। সিনেমাটি তৈরি হয়েছে টমাস হ্যারিসের একই নামের বইয়ের কাহিনি অবলম্বনে। আর বাফেলো বিল চরিত্রের অনেকটাই গড়া হয়েছে বাস্তবের সিরিয়াল এক খুনির আদলে।
বাস্তবের এই সিরিয়াল খুনির নাম গ্যারি হেইডনিক। তার বীভৎস সব অপরাধের ওপর ভিত্তি করেই অনেকটা গড়ে উঠেছে 'সাইলেন্স অভ দ্য ল্যাম্বস'-এর কাহিনি।
দুর্বল নারীরা ছিল তার শিকার
প্রায় চার দশক আগে নির্মম কয়েকটি খুনের মাধ্যমে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন গ্যারি হেইডনিক। তাকে নিয়ে মেটাল ব্যান্ডদল ম্যাকাবর 'মরবিড মিনিস্টার' শিরোনামে একটি গানও বানায়।
১৯৮৬-র শেষ দিক থেকে ১৯৮৭-র মার্চের মধ্যে মোট ছয়জন নারীকে অপহরণ করেন হেইডনিক—স্যান্ড্রা লিন্ডসে, জোসেফিনা রিভেরা, লিসা টমাস, জ্যাকুলিন অ্যাসকিন্স, অ্যাগনেস অ্যাডামস ও ডেবোরা ডাডলি। তাদের মধ্যে লিন্ডসে ও ডাডলি বন্দি অবস্থায় মারা যান।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হেইডনিক যৌনতার বিনিময়ে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন।
বাড়িতে নিয়ে নারীদের আটকে ফেলতেন হেডনিক। বেজমেন্টে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন তাদের। বেশিরভাগ সময়ই তাদের অর্ধনগ্ন রাখা হতো।
বন্দি নারীদের কুকুরের খাবার খাওয়ানো হতো। হেডনিক তাদের পরিণত করেছিলেন যৌনদাসীতে। উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হতো তাদের।
অপহৃত নারীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারও চালাতেন হেইডনিক। তাদের বৈদ্যুতিক শক দেওয়া থেকে শুরু করে চোখে স্ক্রুড্রাইভারের খোঁচা পর্যন্ত দিতেন।
ধরা পড়ার আগপর্যন্ত হেইডনিক ছিলেন আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার এক বিশপ। তার অধিকাংশ অনুসারীই ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন। যদিও তারা কেউই এই 'বিশপের' অপকর্ম সম্পর্কে কিছু জানত না।
হেইডনিকের এক ভিক্টিম লিন্ডসের বয়স ছিল ২৫। তিনি ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। লিন্ডসের এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে অপহরণ করেছিলেন হেইডনিক।
যেভাবে ধরা পড়লেন
হেইডনিক যেহেতু বিশপ ছিলেন, তাই তার বাড়িতে প্রার্থনা বা আচার-অনুষ্ঠানের জন্য লোক সমবেত হতো। গির্জারই একজন অনুসারী একদিন বেজমেন্টে এক বন্দি নারীকে দেখে ফেলেন। পরবর্তীতে তিনি অন্যদের তা জানানও।
কিন্তু একজন বিশপের পক্ষে এরকম কাজ করবেন, ওই সময় তা লোকের বিশ্বাস হনি।
তারপরই আসে ১৯৮৬ সালের থ্যাঙ্কসগিভিং। এর পরদিন ব্যথানাশক ওষুধ কিনতে দোকানে যান লিন্ডসে। কিন্তু তিনি আর বাড়ি ফেরেননি।
লিন্ডসেকে খুঁজে পেতে মরিয়া পরিবার তার সঙ্গে হেইডনিকের বাড়িতে গির্জার আচার অনুষ্ঠানে যেতেন, এমন এক বন্ধুকে খুঁজে বের করে। তার কাছ থেকে হেইডনিকের ফোন নম্বর নেওয়া হয়।
তারপর হেইডনিককে বারবার ফোন করে জানতে চাওয়া হয় লিন্ডসে তার বাড়িতে গেছেন কি না। কিন্তু হেইডনিক ফোন কেটে দেন।
লিন্ডসের আত্মীয়রা হেইডনিকের বাড়িতেও যান। সেখানে এক প্রতিবেশী জানান, তিনি লিন্ডসেকে ওই বাড়িতে যেতে দেখেছেন। কিন্তু হেইডনিক সে কথা অস্বীকার করেন।
এরপর লিন্ডসের পরিবার পুলিশের কাছে যায়। এবার সবার নজর ফেরাতে নতুন কৌশল আঁটেন হেইডনিক। তিনি লিন্ডসেকে দিয়ে তার মায়ের কাছে একটি ক্রিসমাস কার্ড পাঠান। তাতে লেখেন, মা যেন কোনো চিন্তা না করেন। কিন্তু কার্ড পেয়েও লিন্ডসের পরিবারের বিশ্বাস হনি।
অবশেষে হেইডনিক বিকৃত গোপন জীবন প্রকাশ্যে আনেন আরেক ভিক্টিম জোসেফিনা রিভেরা। রিভেরা কৌশলে হেইডনিকের বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। তারপর একদিন তিনি অল্প সময়ের জন্য তাকে বাড়ির বাইরে যেতে দিতে রাজি করান হেইডনিককে।
বাড়ি থেকে বেরিয়েই রিভেরা পালান। তারপর পুলিশকে ফোন করেন। কিন্তু ততক্ষণে লিন্ডসে ও ডাডলিকে হত্যা করে ফেলেছেন হেইডনিক।
হেইডনিকের বাড়িতেই পাওয়া যায় লিন্ডসের খণ্ডিত দেহ। এই বীভৎস ঘটনার খবর প্রকাশের সময় সংবাদমাধ্যমগুলো হেইডনিককে 'হাউস অভ হররস' খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করে।
তবে বিচারের সময় হেইডনিক নিজেকে বারবার নির্দোষ দাবি করেছেন। যদিও অন্যান্য ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার দাবি ধোপে টেকেনি।
বিচারে হেইডনিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। শেষ মুহূর্তে হেইডনিকের প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হলেও তা নাকচ করে দেওয়া হয়।
অবশেষে ১৯৯৯ সালের ৬ জুন কার্যকর করা হয় হেইডনিকের মৃত্যুদণ্ড।
Post a Comment