দৈনিক ১১ মিনিটের ব্যায়াম মৃত্যুঝুঁকিসহ হৃদরোগ ও ক্যান্সারের হার কমাবে: গবেষণা

 


ODD বাংলা ডেস্ক: প্রতিদিনের ব্যস্ততম জীবনে অনেকেই হয়তো ব্যায়াম করার সময়টুকু পর্যন্ত পান না। কিন্তু ব্যায়াম করতে যে সবসময় খুব বেশি সময়ের দরকার হয় তা নয়। প্রতিদিনের কাজের মাঝে মাত্র ১১ মিনিট সময় বের করে মাঝারি থেকে ভারি অ্যারোবিক ব্যায়াম করলে তা শরীরের জন্য দারুণ কার্যকরী হতে পারে। এমনকি সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, এ ব্যায়ামের ফলে ক্যান্সার, হৃদরোগ কিংবা অপ্রাপ্তবয়সে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত কমতে পারে। খবর সিএনএন এর।


হাঁটা, নাচ, দৌড়ানো, জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি অ্যারোবিক ব্যায়ামের অংশ। সাধারণত শারীরিক গতিবিধি- হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে ব্যায়ামের সংযোগ রয়েছে। ব্যায়াম করতে করতে কথা বলতে পারবে কিন্তু গান গাওয়ার মত অবস্থায় থাকবে না; এমন পর্যায়কে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম বলা যায়। আর ব্যায়ামের সময় কথা বলার মতো অবস্থায়ই থাকবে না এমন পর্যায়কে বলা যায় ভারি ব্যায়াম। 


যত বেশি শারীরিক কসরত করা হবে, ততই জটিল রোগ কিংবা অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে আসবে। কিন্তু ঠিক কী পরিমাণ শারীরিক কসরতের সাথে সুস্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক বিষয়গুলো জড়িত সেটি নির্ধারণ করা একটু কঠিন। আর এই প্রভাব খুঁজে বের করতেই বিশেষ করে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা প্রায় ১৯৬ টি গবেষণার ডেটা পর্যালোচনা করেছেন।


এ গবেষণায় মোট ৩০ মিলিয়নেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে ১০ বছরের তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার এর ফলাফল ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণায় মূলত যারা দৈনিক গড়ে ২২ মিনিট ও সপ্তাহে গড়ে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করে থাকেন, তাদের ডেটা পর্যালোচনা করা হয়েছে।


ডেটা পর্যালোচনা শেষে দেখা যায় যে, যারা একদমই ব্যায়াম করেন না তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি থেকে শুরু করে ভারি অ্যারোবিক শারীরিক ব্যায়াম করেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি ৩১ শতাংশ কম। একই সাথে ব্যায়াম না করা ব্যক্তিদের থেকে সপ্তাহে ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যায়াম করা ব্যক্তিদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা ২৭ শতাংশ ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১২ শতাংশ কম।


জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ডক্টর লিয়েনা ওয়েন বলেন, "এটি পুরো গবেষণার সারসংক্ষেপ ফলাফল। আমরা ইতোমধ্যেই জানি যে, শারীরিক ব্যায়ামের সাথে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও অপ্রাপ্তবয়সে মৃত্যুর ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। আর এই গবেষণা আরও প্রমাণ করে যে, সপ্তাহে মাত্র ১৫০ মিনিটের ব্যায়াম কতটা কার্যকরী হতে পারে।" লিয়েনা অবশ্য এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।


এমনকি শুধু ১৫০ মিনিটই নয়, বরং সপ্তাহে এর অর্ধেক সময় ব্যায়াম করলেও তা সুস্বাস্থ্যের জন্য দারুণ কার্যকরী। সপ্তাহে মাত্র ৭৫ মিনিট মাঝারি থেকে ভারি ব্যায়াম করলে সাধারণের তুলনায় অপ্রাপ্তবয়সে মৃত্যুঝুঁকি ২৩ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। এছাড়াও এ অল্প সময়ের ব্যায়াম হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি যথাক্রমে ১৭ শতাংশ ও ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।


গবেষণাটির লেখক, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল এপিডেমিওলজি ইউনিট-এর  ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি এপিডেমিওলজি গ্রুপের দলনেতা, অধ্যাপক ড. সোরেন ব্রেজ বলেন, "আপনার কাছে যদি সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মাঝারি থেকে ভারি ব্যায়াম করা কষ্টকর করে বলে মনে হয়, তবে আপনার জন্য সুসংবাদ রয়েছে। কেননা আপনি সপ্তাহে ৭৫ মিনিট সময় ব্যায়াম করার মধ্যে দিয়ে অভ্যাসটি শুরু করতে পারেন এবং ধীরে ধীরে তা ১৫০ মিনিটে নিয়ে যেতে পারেন।"


ড. সোরেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে সুর মিলিয়ে জানান, একদমই ব্যায়াম না করার থেকে অল্প ব্যায়াম করা অন্তত ভালো। সেটা যদিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নাও হয়, তবুও। তিনি আরও বলেন, "যদি ১৫০ মিনিট সময়ের অর্ধেক সময়ও ব্যায়াম করা হয় তবে ১০টি অপ্রাপ্তবয়সে মৃত্যুর মধ্যে অন্তত একটি এড়ানো সম্ভব। একই সাথে এই ব্যায়ামের ফলে হৃদরোগের ১০.৯ শতাংশ এবং ক্যান্সারের ৫.২ শতাংশ সম্ভাবনা কমে আসতে পারে।"


গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা কোন ধরনের ব্যায়াম করতেন সেটি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ব্যায়াম কিভাবে শরীরের জটিল সব রোগ থেকে অপ্রাপ্তবয়সে মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন।


যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের বিশেষজ্ঞ ইলিয়েনর ওয়াটস বলেন, "অ্যারোবিক ব্যায়ামের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের অবস্থা, প্রদাহের মাত্রা, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং বডি ফ্যাটের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।" তবে ওয়াটস গবেষণাটির সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না।


অন্যদিকে অধ্যাপক লিয়েনা ওয়েন বলেন, "সপ্তাহে ৭৫ মিনিট ব্যায়াম করলেও উপকার পাওয়া যাবে বলে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করবেন না, বিষয়টি এমন নয়। কেননা ভালোর থেকে বরং যা একদম যথাযথ সেটাই করাই উচিত। তবে হ্যাঁ, একদম ব্যায়াম না করার থেকে অল্প ব্যায়াম করা অন্তত ভালো।"


সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের এ অ্যারোবেটিক ব্যায়াম ব্যক্তি ঠিক কোন উপায়ে করবে সেটি নিজের পছন্দ অনুযায়ী নির্ধারণ করতে পারেন। হাঁটা, নাচ, দৌড়ানো, জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদির মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে। তবে এর জন্য আপনাকে নিজের সুবিধাজনক অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।


এ বিষয়ে কুইন্স ইউনিভার্সিটির প্রভাষক লিয়ান্দ্রো গারসিয়া বলেন, "মাঝারি ব্যায়াম বলতে শুধু খেলাধুলা কিংবা দৌড়ানোই বোঝায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় গাড়ির পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার করুন, কিংবা হেঁটে যেতে পারেন। কিংবা শিশুদের খেলায়ও নিজেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে পারেন। আপনার যে ধরনের ব্যায়াম করতে ভালো লাগে, সাপ্তাহিক কার্যক্রমে সেগুলোই সুপরিকল্পিতভাবে যুক্ত করুন। তাহলেই প্রতিদিন ব্যায়ামের সাথে নিজেকে যুক্ত করা সম্ভব হবে।" 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.