পুরুষ কেন খুব সহজে কাউকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বানাতে পারে না
ODD বাংলা ডেস্ক: ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২,০০০-এর বেশি মানুষের ওপর করা এক জরিপে অংশগ্রহণকারী অর্ধেকের বেশি জানিয়েছেন তারা তাদের বন্ধুসংখ্যা নিয়ে সন্তুষ্ট হন।
একই জরিপে আরও দেখা গেছে, নারীদের চেয়ে পুরুষেরা তাদের বন্ধুদের আবেগীয় সমর্থনের ওপর নির্ভর বা ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ কম করেন।
বেশিরভাগ পুরুষ তার পুরো জীবনে কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু বানাতে পারেন না। তবে তারা নিজেদের বন্ধুদের সঙ্গে নিবিড় হওয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে প্রবল ইচ্ছে পোষণ করেন।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে বন্ধু বানানোর চেষ্টা করতে পুরুষদেরকে চারটি কৌশল বাতলে দিয়েছে। চাইলে আপনিও এগুলো নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন।
নিজের দুর্বলতা ঢাকার প্রয়োজন নেই
পুরুষ হয়েছেন বলেই যে আপনার মধ্যে কোনো দুর্বলতা থাকবে না, তা হতে পারে না। আর এ দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টা করবেন না, বরং প্রকাশ করুন। এতে আপনার অসুবিধা বোধ হলেও এটিকে এড়িয়ে যাবেন না।
জন্মের পর থেকেই পুরুষদের শেখানো হয় কীভাবে তারা পুরুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে। তাদেরকে শেখানো হয় শক্তিশালী হতে, প্রতিযোগিতায় না হারতে ও ভাবলেশহীনতা প্রদর্শন করতে।
আর এগুলোর কারণেই পুরুষরা অন্যদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ কোনো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন।
ইউনিভার্সিটি অব রেডল্যান্ডস-এর মনস্তত্ত্ব বিভাগের প্রধান ফ্রেড রবিনোউইটজ বলেন, 'বাচ্চাদেরকে দেখবেন কী দারুণভাবে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর তাদের মধ্যে কিছু একটা ঘটে।' সামাজিক মূল্যবোধ তাদেরকে জানিয়ে দেয় যে এভাবে অন্যের সঙ্গে মন খুলে মেশা বা নিজের আবেগকে প্রকাশ করা এক ধরনের 'ট্যাবু'।
নিজের আবেগকে এভাবে ভেতরে আটকে না রাখার একটি উপায় হলো বন্ধুর সঙ্গে নিজের অনুভূতি নিঃসংকোচে প্রকাশ করা। এতে করে আপনার বন্ধুও বুঝতে পারবে, আপনি আপনার সম্পর্কে গুরুত্বের চোখে দেখেন।
অধ্যাপক রবিনোউইটজের আরেকটি পরামর্শ হলো, গ্রুপ থেরাপি সেশনে অংশগ্রহণ করা। এ ধরনের সেশনে ব্যক্তি মন খুলে নিজের মনের ভাব বাকিদের সামনে প্রকাশ করতে পারেন। এসব আনুষ্ঠানিক সভায় অনেক সময়ই ব্যক্তি তার মানসিকতার সঙ্গে মেলে এমন অন্যদের খুঁজে পান।
অনেক সময় দেখা যায়, বন্ধুদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক থাকলেও ব্যক্তি তার মনের গোপন অন্দরের খবর তার বন্ধুদের সামনে কখনো প্রকাশ করেন না। বন্ধুরাও জানতে পারেন না, তাদের বন্ধুটি মানসিকভাবে কতটা অসহায় আর বেদনাবোধ করছেন।
এসব প্রতিবন্ধকতা, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য হলেও নিজের মানসিক দুর্বলতার দিকগুলো বিশ্বস্ত বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা উচিত।
অবশ্য আবেগ প্রকাশের জন্য যে ওয়ার্কশপ বা গ্রুপ সেশনে বসতে হবে, বন্ধুকে সামনে পেলে মনের ঝাঁপি খুলতে হবে তাও নয়। চাইলেই ব্যাপারটিকে সাধারণ রাখা যায়।
'আপনি কোন বিষয়টি নিয়ে অসুবিধার মুখে আছেন, তা নিয়ে বন্ধুকে বললেই হলো। এর বেশি কিছুর দরকার নেই,' বলেন ড. মারিসা ফ্রাংকো নামক আরেক মনস্তাত্ত্বিক।
ধরে নেবেন না বন্ধুত্ব নিজে থেকে গড়ে ওঠে
ফিনিক্সের বাসিন্দা ৩৭ বছর বয়সী কুইন্সি উইনস্টন তার সারা জীবন আরও বেশি বন্ধুর জন্য হাপিত্যেশ করেছেন। গত মার্চে তিনি স্থানীয় পেশাজীবি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের একটা দল গড়ে তোলেন।
তিন-চারজন বন্ধুতেই উইনস্টন সন্তুষ্ট থাকতেন। অথচ এখন তার দলে ৮০ জন সদস্য হয়ে গেছেন। তারা প্রতিমাসে একবার একসঙ্গে জড়ো হন।
ড. ফ্রাংকো জানান, তিনি তার পেশাদার জীবনে অনেক মানুষকে দেখেছেন যারা বিশ্বাস করেন, প্রাপ্তবয়স্কদের বন্ধুত্বও ছোটবেলার মতো স্বাভাবিক পদ্ধতিতে নিজে থেকে গড়ে ওঠে।
'প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে এসে বন্ধু তৈরি করতে হলে আপনাকে একটু চেষ্টা করতে হবে,' বলেন এ মনস্তাত্ত্বিক।
তার পরামর্শ, বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হলে আপনাকে নিয়মিত সামাজিক পরিস্থিতিগুলোতে অংশগ্রহণ করতে হবে। এ পরিস্থিতিগুলো হতে পারে কোনো ক্লাবে যোগদান, কোনো সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ। কারণ এগুলোর মাধ্যমেই দীর্ঘদিনের পরিচয়ে বন্ধুত্ব তৈরি হতে পারে।
পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে ব্যবহার করুন
সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়ায় বন্ধুও তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। কাউকে খেলতে ডাকা, কোথাও একসঙ্গে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো; এসবের মাধ্যমে যেমন সামাজিক সম্পর্ক জোরদার হয়, পাশাপাশি বাড়তি পাওনা হিসেবে বন্ধুত্বও তৈরি হয়ে যেতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মগুলোকে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর সুযোগে পরিণত করা উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন ড. ফ্রাংকো। আপনি যদি দৌড়াবিদ হন, তাহলে আরেক বন্ধুকে আপনার সঙ্গে দৌড়াতে আহ্বান করুন।
তবে কাজের কারণে যেন সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা কমে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
খোঁজখবর নিন অন্যের
২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, হুটহাট বন্ধুবান্ধবের খবর নিলে তা-তে বন্ধুরা দারুণ খুশি হয়। এরকম হাই-হ্যালো বলা যেতে পারে টেক্সট মেসেজ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে।
'মানুষ মনে করে, অন্যরা বুঝি খুব ব্যস্ত। তাদের এত সময় নেই,' ড. ফ্রাংকো বলেন। 'কিন্তু ব্যাপারটা বাস্তবে ভিন্ন। তাই বন্ধুদের মেসেজ পাঠান; জিজ্ঞেস করুন তারা কেমন আছে, কী করছে এসব।'
Post a Comment