যেভাবে হয়েছিল জিন্সের জন্ম

 


ODD বাংলা ডেস্ক: আধুনিক নারী-পুরুষ উভয়ের পছন্দের পোশাক  জিন্স। কলেজ হোক কী বন্ধুর বাড়িতে জিন্স এমন একটা পোশাক যা যখন খুশি, যেখানে খুশি পরে চলে যাওয়া যায়। এই পোশাকের জনপ্রিয়তার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি সুবিধাজনক এবং আরামদায়ক। 

কিন্তু, জানেন কী, এই জিন্স, যাকে ছাড়া আজকাল আপনার একদম চলে না, তা আদৌ কোনোদিন ফ্যাশন ট্রেন্ড হয়ে উঠতে পারে তার ধারণাই ছিল না। কোথা থেকে কীভাবে হয়েছিল জিন্সের জন্ম? আসুন জেনে নিই সেই গল্প।


জিন্স কয়েক দশকের নয়, কয়েক শতকের পুরনো পোশাক। সেই জিন্স, যা এখন ফ্যাশনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়, তা এক সময় শ্রমিকদের পোশাক ছিল। উনিশ শতকে জিন্স ফ্রান্সের NIMES শহরে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। যে ফ্যাব্রিক থেকে জিন্স তৈরি করা হয়, তাকে ফরাসি ভাষায় বলা হয় 'Serge' বলা হয় এবং এটির নাম দেওয়া হয় 'Serge de Nimes'। 'de Nimes' তারপর সংক্ষিপ্ত হয়ে হয়ে ওঠে 'ডেনিম'। 


এরপর ধীরে ধীরে এই ডেনিম পুরো ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নাবিকদের এই পোশাক দারুণ পছন্দ হয়। লোকেরা তাদের সম্মান জানাতে এই নাবিকদের একটি ডাকনাম দিয়েছিল - জিন্স।


১৮৫০ সালের দিকে, লেভি স্ট্রাস, নামের একজন জার্মান ব্যবসায়ী, জিন্সের উপরে নাম ছাপিয়ে তা ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্রি করা শুরু করে দেন। সেখানকার এক টেলার জ্যাকব ডেভিস তার প্রথম কাস্টোমার হন। উনি লেভি কাছ থেকে জিন্স কিনে তা অন্যদের কাছে বিক্রি করা শুরু করেন। সেই সময় সেখানকার কয়লা খনির শ্রমিকদের এই জিন্স বেশ পছন্দ হয়। কারণ এর কাপড় বাকি কাপড়ের তুলনায় অনেকটাই মোটা ছিল, তাতে তা সহজে ছিঁড়ে যেত না, আর আরামদায়কও হত বেশ।


একদিন ডেভিস স্ট্রাসকে বললেন, চলো আমরা জিন্সের বড় ব্যবসা শুরু করি। ডেভিসের প্রস্তাব স্ট্রাসেরও খুব পছন্দ হয়। এইভাবে, তাঁরা জিন্সের জন্য মার্কিন পেটেন্ট নেন এবং তারপরে বড় আকারে জিন্স প্রস্তুতি শুরু করেন।


যদিও ডেনিম অনেক রঙে রঞ্জিত হয় তবে প্রথম জিন্সটি শুধুমাত্র নীল রঙে তৈরি করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে, জিন্স শুধুমাত্র শ্রমিক এবং পরিশ্রমী লোকেরা পরতেন। তার জামাকাপড় দ্রুত ময়লা হয়ে যেত, এমনকি নোংরা হলেও, জিন্স নোংরা দেখায় না, তাই তাদের রঙ নীল রাখা হয়েছিল। পুরুষদের জন্য তৈরি জিন্সে, জিপটি সামনের দিকে নীচে রাখা হয়েছিল, যেখানে নারীদের জন্য তৈরি জিন্সে এটি রাখা হয়েছিল পাশের দিকে।


জিন্স পরে বুট পরতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই বুট কাট জিন্সও তৈরি হলো ধীরে ধীরে। মার্কিন নৌবাহিনীর কর্মীদের জন্য আলাদা করে জিন্স দিয়ে তৈরি হলো ইউনিফর্ম। ১৯৫০ সালে, জেমস ডিন হলিউড সিনেমা ‘রেবেল উইদাউট আ কজ’ তৈরি করেন। সেখানে তিনি প্রথমবার জিন্সকে ফ্যাশন হিসাবে ব্যবহার করেন। এই ছবিটি দেখার পরে আমেরিকার কিশোর ও যুবকদের মধ্যে জিন্সের পরার প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ে।


জিন্সের জনপ্রিয়তা কমানোর জন্য় আমেরিকায় রেস্তোরাঁ, থিয়েটার এবং স্কুলগুলোতেও জিন্স পরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তবুও জিন্স তরুণ সমাজে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে তার ব্য়বহার কোনোভাবেই কমেনি।


ধীরে ধীরে, জিন্সের জনপ্রিয়তা আরো বাড়তে থাকে। ১৯৭০ সালে এটি একটি ফ্যাশন ট্রেন্ড হিসাবে গৃহীত হয়। তারপর থেকে এখনো পর্যন্ত জিন্স নিয়ে উন্মাদনা বিন্দুমাত্র কমেনি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.