লিভারে অতিরিক্ত চর্বি ও ফ্যাট হলে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: লিভার বা যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি হলে সেটিকে সাধারণ ভাষায় ফ্যাটি লিভার বলা হয়। দেখা যায় যাদের ওজন বেশি, ডায়াবেটিস আছে তাদের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সমস্যা হলো লিভারে যখন চর্বি জমে তখন এর কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এর কারণে লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সারের মতো রোগ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই রোগটি সম্পর্কে সচেতন জরুরি এবং লিভারে যাতে অতিরিক্ত চর্বি জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 


ফ্যাটি লিভারের প্রকারভেদ: ফ্যাটি লিভারকে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। ১. অ্যালকোহলিক (মদ্যপানজনিত) ফ্যাটি লিভার রোগ ও ২. নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ (মদ্যপানজনিত নয় এমন কারণে ফ্যাটি লিভার রোগ)। 


চর্বি জমার কারণসমূহ: শরীরের অতিরিক্ত ওজন, রক্তে চর্বির আধিক্য, ডায়াবেটিস, ইনসুলিন কার্যকরহীনতা বা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক ইত্যাদি। কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়ামবিহীন আরামদায়ক জীবনযাপন এবং অনিয়ন্ত্রিত অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাস। এ ছাড়া লিভারে চর্বির অন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হলো- মদ্যপান,  হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস বি। উইল্সন ডিজিজ, অনেক দিন ধরে উপবাস, হরমোনজনিত রোগ- হাইপোথাইরয়েডিজম, হাইপোপিটুইটারিজম, কিছু ওষুধ যেমন- এমিয়োডেরন,  স্টেরয়েড, মেথোট্রেক্সেট,  টেমোক্সিফেন, ভেলপ্রোয়েট ইত্যাদি। রোগটি যেভাবে ধাবিত হয় লিভারে চর্বি (Steatosis) >কোষসমূহে চর্বিজনিত প্রদাহ (Steatoepatitis)>ক্রমবর্ধমান লিভারে ফাইব্রোসিস>লিভার সিরোসিস>লিভার ক্যান্সার।


লক্ষণসমূহ প্রথমে বেশির ভাগ রোগীই লক্ষণ বা উপসর্গহীন থাকে। লিভার ফাংশন টেস্টে অস্বাভাবিকতা বা লিভার সাইজ বড় হওয়া বা অন্য  রোগের জন্য পরীক্ষা করার সময়ে বিশেষত আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে রোগটি ধরা পড়ে। পেটের ডান দিকে উপরি অংশে ভার ভার বা হালকা ব্যথা হতে পারে বা শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। 

ফ্যাটি লিভার আক্রান্ত ব্যক্তির পরীক্ষাগুলো: ১. রক্ত পরীক্ষা ২. আলট্রাসনোগগ্রাফি ৩. সিটিস্ক্যান ৪. ফাইব্রোস্ক্যান লিভার ৫. লিভার বায়োপসি। 


চিকিৎসা: ফ্যাটি লিভার  রোগের চিকিৎসায় দু’টি দিক থাকে যেমন- ১. লিভার রোগের চিকিৎসা ২. রোগটির সন্নিবেশিত অবস্থানগুলো নির্ণয় ও চিকিৎসা, যেমন- শরীরের স্থূলতা, চর্বির আধিক্য, ডায়াবেটিস ইনসুলিন অকার্যকর, কার্ডিওভাসকুলার  রোগের ঝুঁকিসমূহ ইত্যাদি। 


প্রতিরোধে করণীয়: শরীরের ওজন কমানো, দৈনন্দিন ব্যায়াম ও সঙ্গে ক্যালরিযুক্ত আঁশসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। শরীরের ৫-১০% ওজন কমালে লিভারের চর্বি ও চর্বিজনিত প্রদাহ যথেষ্ট পরিমাণে কমে এবং লিভারের এনজাইমগুলো স্বাভাবিক হয়। তবে অতি দ্রুত শরীরের ওজন কমানো ঠিক নয়। খেতে হবে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ইত্যাদি। উচ্চ শর্করা বা চর্বিসমৃদ্ধ খাবার যেমন- ঘি, মাখন, পনির, লাল মাংস, মাছের ডিম, বড় মাছের মাথা বর্জনীয়। এতে শরীরের পরিপাক সঠিক হয় এবং ওজন ঠিক রাখতে সহায়তা করে। একবারে নেশাজাতীয় দ্রব্য বর্জন করতে হবে ও মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে। ফাস্টফুড, কার্বোনেটেড চর্বি বা শর্করা সমৃদ্ধ ড্রিংকস, চকোলেট খাওয়া যাবে না। নিয়মিত ব্যায়াম ও রোজ ঘণ্টাখানেক ঘাম ঝরিয়ে হাঁটাচলা করতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চিকিৎসকরা যেসব ওষুধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন রোগের ধরন অনুযায়ী কিছু কিছু  ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ওষুধ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা হয়  যেমন ভিটামিন-ই, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.