১০০ বছর আগে যেমন ছিল যাত্রীবাহী প্রমোদতরীতে প্রথম বিশ্বভ্রমণ

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ১৯২৩ সালের ৩০ মার্চ, আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে বিশ্বের প্রথম কোনো যাত্রীবাহী ভ্রমণ জাহাজ টানা ১৩০ দিনের সমুদ্রভ্রমণ শেষে নিউইয়র্কে ফিরে আসে। ছয় মাসের এই ভ্রমণটি ছিল প্রমোদতরীতে বিশ্বভ্রমণের প্রথম উদাহরণ- যা আধুনিককালে নৌপথে বিলাসবহুল ভ্রমণের পথ সুগম করেছে। দীর্ঘ যাত্রাপথে জাহাজটি জাপান, সিঙ্গাপুর, মিশর, ভারতের মতো দেশগুলোসহ সুয়েজ খাল এবং পানামা খালও পাড়ি দিয়েছে। আমেরিকান এক্সপ্রেস কোম্পানি এই বিশেষ সমুদ্রভ্রমণের জন্য কিউনার্ড লাইনের একটি যাত্রীবাহী জাহাজ 'এসএস লাকোনিয়া'কে বেছে নেয়।


লাকোনিয়ায় থাকা যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন বিশের কোঠায় থাকা দুই বোন এলেনর ফেলপস এবং ক্লডিয়া ফেলপস। ১৯২২ সালের ২১ নভেম্বর লাকোনিয়া যখন বন্দর ছেড়ে রওনা দিল, তখন দুই বোনের খুশি আর ধরে না! দুজনেই সেই মুহূর্তের স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তোলেন এবং যার যার নিজস্ব ডায়েরিতে এই দিনটির কথা লিখে রাখেন।


শুরুতে ক্লডিয়া ভেবেছিলেন তার এই ডায়েরি লেখার ব্যাপারটা হয়তো 'সানফ্রান্সিসকো অবধি গিয়েই থেমে যাবে'- লাকোনিয়ার মাত্র দ্বিতীয় যাত্রাবিরতি ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার এই শহরটি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এলেনর ও ক্লডিয়া দুজনেই ১৩০ দিনের সমুদ্রযাত্রার শেষ দিন পর্যন্ত তাদের ডায়েরি লেখা অব্যহত রেখেছিলেন।


দুই বোন তাদের মায়ের সাথে লাকোনিয়াতে চড়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। এসময় তারা নিয়মিত এই ভ্রমণ সম্পর্কে নিজেদের পর্যবেক্ষণ-অনুভূতি লিখে রাখতেন, এবং সেই সঙ্গে নানা স্যুভেনির সংগ্রহ করে এবং ছবি তুলে চামড়ায় বাঁধানো ডায়েরিতে সেঁটে রাখতেন। বর্তমানে ফেলপস বোনেদের এই 'লাকোনিয়া কালেকশন' (যার মধ্যে রয়েছে তাদের ভ্রমণ ডায়েরি, ছবি, স্লাইড এবং ফিল্ম ফুটেজ) ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনার মুভিং ইমেজ রিসার্চ কালেকশনের মালিকানায় রয়েছে।


নিজের ট্রাভেল লগের একেবারে শেষ পৃষ্ঠায় এলেনর তার সম্পূর্ণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতার একটি সারমর্ম করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে শুধু এক লাইনে তিনি লিখেছেন, "১৩০ দিনের বিশ্বভ্রমণে কী কী দেখেছি, তার পরিসমাপ্তিতে আসা বা সংক্ষেপে মতামত ব্যক্ত করা কি কারো পক্ষে সম্ভব?


ভ্রমণের নতুন দিগন্ত


২২০০ যাত্রী ধারণে সক্ষম- এমনভাবেই নির্মিত হয়েছিল লাকোনিয়া। কিন্তু ১৯২২-২৩ সালে বিশ্বভ্রমণের উদ্দেশ্যে সমুদ্রযাত্রায় আমেরিকান এক্সপ্রেস কোম্পানি এই জাহাজটিতে যাত্রী সংখ্যা মাত্র ৪৫০ জনে সীমাবদ্ধ রাখে। তারা চেয়েছিল, এই ভ্রমণে কোনো যাত্রী যেন ডেকের নিচে তৃতীয় শ্রেণীতে শুয়ে ভ্রমণ না করে এবং জাহাজে যেন প্রচুর যাত্রীর ভিড় না থাকে। বরং অল্পসংখ্যক যাত্রীই যেন সর্বোচ্চ সুযোগসুবিধা নিয়ে বিলাসবহুলভাবে ভ্রমণ করতে পারে সেদিকে নজর রেখেছিল তারা।


ফেলপস বোনেরা ছিলেন সাউথ ক্যারোলাইনার সমৃদ্ধশালী এক পরিবারের সন্তান। এলেনর ফেলপসের নাতনি স্টেফানি ওয়াইল্ডস সূত্রে জানা যায়- ময়দার কারখানা, রেলওয়ে ও রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা সূত্রে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছিলেন তারা। সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে তিনি বলেন, "তারা সবাই ছিলেন অভিজাত রক্তের, সম্ভ্রান্ত ও বিত্তশালী আমেরিকান পরিবারের।"


যদিও স্টেফানি ওয়াইল্ডসের মতে, 'তাদের কাছে টাকার চাইতে মর্যাদাই বেশি ছিল'; তবুও সেসময় লাকোনিয়ার তিনটি টিকিট কেনার মতো সামর্থ্যও তাদের ছিল। ওয়াইল্ড জানান, এলেনর ও ক্লডিয়ার মা চেয়েছিলেন এই সমুদ্রভ্রমণে যেন তাদের মেয়েরা যোগ্য কোনো অবিবাহিত ছেলেকে খুঁজে পায়; এই ভ্রমণের মাধ্যমে তার মেয়েরা 'সমাজে প্রকাশ্যে আসবে' বলে ভেবেছিলেন তিনি।


"আমার প্র-মাতামহী চেয়েছিলেন ভ্রমণ করতে গিয়ে যেন তার মেয়েরা উপযুক্ত পাত্র খুঁজে পায়", বলেন স্টেফানি ওয়াইল্ডস।


বর্তমান যুগের সমুদ্রভ্রমণের মতো তখনও জাহাজের ভেতরে আনন্দ-যাপন ও আড্ডা দেওয়ার যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল। নিজের ডায়েরিতে ক্লডিয়া লিখেছেন, 'লাকোনিয়ার কালো ওক কাঠের স্মোকিং রুম এবং কাঁচ ও সিলভার দিয়ে সাজানো ডাইনিং রুম ছিল খুবই চমৎকার'।


অন্যদিকে, এলেনর লিখেছেন ভ্রমণপথে অবসর সময় কাটানোর নানা উপায় নিয়ে। এর মধ্যে ছিল ইতিহাস এবং লাকোনিয়ার গন্তব্যগুলো নিয়ে লেকচার শোনা এবং 'ক্যামেরা ক্লাব'-এ যুক্ত হওয়া, যা ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী ফেলপস বোনেদের জন্য একেবারে যথাযথ ছিল। সেই সঙ্গে কস্টিউম বল ও ক্লাসিক্যাল কনসার্টের ব্যবস্থাও ছিল জাহাজে। অন্যদিকে, ক্লডিয়া লিখেছেন যাত্রাপথে ক্লে পিজন শুটিং, ফেন্সিং ক্লাস এবং জিমে সময় কাটানোর কথা।


ক্লডিয়া এবং এলেনর জাহাজের অন্যান্য যাত্রীদের সাথে কথাবার্তা বলার বিষয়টিও লিখেছেন ডায়েরিতে; তবে এর মানে এই নয় যে তারা উপযুক্ত সঙ্গী পাওয়ার জন্যই আলাপ করতেন। তাদের ডায়েরির মূল আলোচ্য বিষয় ছিল যেসব দেশ তারা ভ্রমণ করেছেন; এবং প্রায়ই সমুদ্রে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতি লিখে রেখেছেন তারা।


এলেনরের ডায়েরিটি বর্তমানে সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহে রয়েছে, যা আগ্রহী কেউ চাইলে গিয়ে দেখতে পারে। এই ডায়েরির ভেতরে ছিল কিছু নিউজপেপার কাটিং- যার একটি আর্টিকেল ছিল নিউইয়র্ক টাইমসের, 'বিশ্বভ্রমণের জন্য রওনা দিয়েছে জাহাজ'- এ ধরনের শিরোনামে খবরটি প্রকাশ করেছিল তারা। আরও ছিল আমেরিকান এক্সপ্রেসের দেওয়া জাহাজের প্রতিদিনকার সময়সূচি, বিভিন্ন বন্দর থেকে সংগ্রহ করা স্মারক, স্ট্যাম্প ও বিভিন্ন ব্যাংক নোট।


পানামা খাল পার হওয়া


অবশ্যই ১৩০ দিনে পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় কোণায় ভ্রমণ করেনি লাকোনিয়া, এই যেমন, তারা অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করেননি; কিন্তু তবুও এটি ছিল এমন একটি সমুদ্রভ্রমণ যা আগে কেউ কোনোদিন দেখেনি।


১৯২৩ সালের নভেম্বরে লাকোনিয়া ছিল পানামা খাল অতিক্রমকারী প্রথম মহাসাগরীয় জাহাজ; এর মাত্র বছর দশেক আগেই পানামা খালের কাজ শেষ হয়। এলেনর লিখেছেন, তিনি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছিলেন যাতে পানামা খাল অতিক্রমের একটি মুহূর্তও মিস না হয়। "আকাশ নরম মেঘে ঢাকা ছিল, ধূসর-বেগুনি রঙের রেখা এবং সমুদ্রে হালকা বৃষ্টির ঝাপটা যেন রুপোলি রঙের পর্দার মতো দেখাচ্ছিল'- ওই মুহূর্তে নিয়ে লিখেছেন তিনি।


পানামা খাল নিয়ে এলেনরের প্রথম অনুভূতিই ছিল 'এটির নিজস্ব সৌন্দর্য্য'। তিনি লিখেছেন, "একেবারে নিখুঁত-পরিপাটি কংক্রিটের কাজ, সবুজের সতেজতা এবং পুরো নির্মাণশৈলীই ছিল অসাধারণ।" ডায়েরিতে তিনি ১৯২২ সালের নভেম্বরের তারিখ দেওয়া একটি ইনফরমেশন বুকলেট রেখেছেন, যেখানে পানামা খালের নির্মাণকাজ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এই রুটে যাতায়াতের ফলে জাহাজগুলো কতখানি পথ বাঁচিয়েছে তা উল্লেখ করা হয়েছে।


পানামা খাল ছাড়াও ক্লডিয়ার ডায়েরিতে রয়েছে সমুদ্রভ্রমণের সময় প্রথম জাপানের মাউন্ট ফুজি পর্বত দেখার অনুভূতির কথা। তিনি লিখেছেন, "এটা একেবারে নিঁখুত একটা কোণ, তুষারাচ্ছাদিত এবং কুয়াশার মধ্য দিয়ে যেন জ্বলজ্বল করছে। প্রথমবার এই পর্বতের সৌন্দর্য্য দেখে আমি এতটাই মুগ্ধ হয়েছি যে এখন আমি বুঝতে পারছি জাপানিরা কেন এটিকে পবিত্র মনে করে।"


১৩০ দিনের সমুদ্রভ্রমণে ক্লডিয়া ও এলেনর এত এত চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন যে প্রায়ই তারা সেই অনুভূতি প্রকাশের যথাযথ ভাষা খুঁজে পেতেন না। যেমন- তাজমহল দেখে এলেনর বলেছেন- তাজমহল নিয়ে তার প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল, কিন্তু এর সৌন্দর্য্য তার প্রত্যাশাকে এতটাই ছাপিয়ে গেছে যে সেই অনুভূতি প্রকাশের ভাষা নেই তার। তিনি লিখেছেন, "কোনোকিছুই আসলে তাজমহলের প্রশংসার জন্য যথেষ্ট হবে না, তাই আমার আর চেষ্টা না করাই ভালো।"


প্রতিটি বন্দরে থামার পর আশেপাশের দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা ও স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদ নেওয়ার জন্য আমেরিকান এক্সপ্রেস যাত্রীদের জন্য গাইডসহ ভ্রমণ ও ট্যুর এবং ভ্রমণস্থলে হোটেলে থাকার সুব্যবস্থা রেখেছিল।


ভারতের দার্জিলিং সম্পর্কে ক্লডিয়া লিখেছেন, "একটা গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে পাহাড়ে উঠেছি এবং উপত্যকার চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য উপভোগ করেছি। তখন সবে ভোর হচ্ছে, এমন সময়ে আমরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠি, কফি খাই এবং পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে ফিরে গিয়ে সূর্যোদয় দেখি।"


ভ্রমণের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব


১৯২৩ সালের ধনী আমেরিকানদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, ফেলপস বোনেদের বর্ণনা হয়তো কখনো কখনো আধুনিক পাঠকদের বিরক্তির কারণ হবে। কিন্তু এলেনরের নাতনি ও ক্লডিয়ার ভাগ্নি স্টেফানি মনে করেন, সব মিলিয়ে ক্লডিয়া-এলেনর 'মুক্ত মনমানসিকতা' নিয়েই ভ্রমণ করেছিলেন।


তিনি বলেন, "আমি তাদের কৌতূহল এবং সহনশীলতার প্রশংসা করি। তারা আসলে চমৎকার মানুষ ছিলেন। আমার মনে হয়, এভাবেই কৌতূহল, মুক্ত মনমানসিকতা ও সহনশীলতা নিয়েই মানুষের ভ্রমণে যাওয়া উচিত। এভাবেই আসলে কোনো ঘটনার মুখোমুখি হওয়া উচিত।"


বড় হয়ে স্টেফানি তার আন্টি ক্লডিয়ার সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং স্টেফানির ভাষ্যে, ক্লডিয়া তার সারাজীবনে, অন্য সব রকম ভ্রমণেই সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রেখেছিলেন।


"তার হাস্যরসবোধ বেশ ভালো ছিল এবং তার মধ্যে মানবতাবোধ ছিল- তাই তাকে কিভাবে আতিথেয়তা করা হচ্ছে বা কতটা আরামে থাকতে পারছেন, তা নিয়ে তিনি খুব একটা মাথা ঘামাতেন না। বরং তিনি মানুষজনের সাথে মিশতে পছন্দ করতেন", বলেন স্টেফানি ওয়াইল্ডস।


ছোটবেলায় ক্লডিয়ার কাছ থেকে তার লাকোনিয়ায় চড়ে সমুদ্রভ্রমণের গল্প শুনে মুগ্ধ হয়ে যেতেন ওয়াইল্ডস। তার ভাষ্যে, "তিনি (ক্লডিয়া) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলোও মনে রাখতেন... যেমন, কোনো বাচ্চার খেলার দৃশ্য, সাপুড়ে, উট ও হাতির পিঠে চড়ার অভিজ্ঞতা ইত্যাদি আমাদের জানাতেন। স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করতে ভালোবাসতেন তিনি।"


কিন্তু ছোটবেলায় আন্টির মুখে তার ভ্রমণের গল্প শুনলেও, ১৯৮০র দশকে ক্লডিয়ার মৃত্যুর পরেই তিনি ক্লডিয়া ও এলেনরের লাকোনিয়ায় ভ্রমণের স্মারকগুলোর মালিক হন এবং সেগুলোর সত্যিকার মূল্য বুঝতে পারেন।


স্টেফানি জানান, তার সবচেয়ে পছন্দের স্মারক হলো সমুদ্রভ্রমণে ক্লডিয়া ও এলেনরের তোলা ছবি এবং স্লাইডগুলো। যদিও তিনি জানেন না কিভাবে ফেলপস বোনেরা আলোকচিত্রী বনে গিয়েছিলেন; কিন্তু তার কাছে তার আন্টির বক্স ক্যামেরা দিয়ে তোলা একটি 'সেলফি' ধরনের ছবিও আছে, যা ক্লডিয়া তার ১৬ বছর বয়সে তুলেছিলেন।


তবে বড় হয়ে আন্টির স্মারকগুলোর উল্টেপাল্টে দেখতে গিয়ে স্টেফানি টের পান, এগুলো কত ইতিহাসের স্মৃতি বহন করছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যাওয়ার কয়েক বছর পরেই এই ঐতিহাসিক সমুদ্রভ্রমণ শুরু করেন ফেলপস বোনেরা।


সেই শীতে লাকোনিয়ার দেখাদেখি পরে আরও কয়েকটি যাত্রীবাহী ভ্রমণ জাহাজ বিশ্বভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। কিন্তু এর ২০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এসময় যাত্রীবাহী ভ্রমণ জাহাজের কার্যক্রম থামিয়ে দেওয়া হয়। এসএস লাকোনিয়া তখন রিকুইজিশন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের কাজে ব্যবহারের জন্য এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৪২ সালে এটি পশ্চিম আফ্রিকা উপকূলে ডুবে যায়।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাহাজে করে প্রমোদভ্রমণ আবার চালু হলেও, ওয়াইল্ড মনে করেন লাকোনিয়ার ১৯২২-২৩ সালের যাত্রাটা ছিল ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। 'কারণ এটা ছিল রোয়ারিং টুয়েন্টিজ এর সময়। এতটাই সুন্দর ছিল এটা!' বলেন ওয়াইল্ড।


ওয়াইল্ড মনে করেন, ফেলপস বোনেরা তাদের পরিবারের মধ্যে ভ্রমণের একটা সূত্র তৈরি করে দিয়ে গেছেন। ছোটবেলায় আন্টি ক্লডিয়ার সাথেই ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ভ্রমণে গিয়েছিলেন স্টেফানি ওয়াইল্ড। এছাড়াও, কুইন এলিজাবেথ টু ক্রুজ শিপে করে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে তার।


আজ যখন তিনি তার পরিবারের সদস্যদের লাকোনিয়ায় ভ্রমণের প্রসঙ্গ তোলেন, তখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করেন তিনি। কেউ কেউ ১০০ বছর আগের এক ভ্রমণের কথা চিন্তা করে মুগ্ধ হয়, আবার কেউ কেউ ডায়েরি বা ছবিগুলো দেখেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এগুলো ওই কালের অবশিষ্টাংশ, যখন অধিকাংশ সময়ই ভ্রমণ শুধুমাত্র বিত্তশালী শ্বেতাঙ্গ ভ্রমণকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।


তবে ওয়াইল্ড মনে করেন, ক্লডিয়া ও এলেনরের ট্রাভেল ডায়েরি ও ছবিগুলো শতবছর আগের ভ্রমণ কেমন ছিল তা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। তাই সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতেও হাসিমুখেই তিনি এসব স্মারক তুলে দিয়েছেন।


"আমার এটা ভেবে ভালো লাগে যে তারা লাকোনিয়াতে ছিলেন এবং তাদের সেই অসাধারণ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটা হয়েছিল, এবং সেটি আমাদের সাথে শেয়ার করে গেছেন। আজ ১০০ বছর পরে এসেও আমরা তাদের সেই ভ্রমণ নিয়ে কথা বলছি; আমার মনে হয় এই অনুভূতির তুলনা হয় না", বলেন স্টেফানি ওয়াইল্ড। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.