জিহ্বা বাঘের সবচেয়ে গোপন অস্ত্র
ODD বাংলা ডেস্ক: বাঘ দেখতে যেমন সুন্দর; ঠিক তেমনই ভয়ংকর। বাঘ আসলে বড় বিড়াল জাতের অন্তর্ভুক্ত একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। সিংহ, চিতাবাঘ ও জাগুয়ারের সঙ্গে প্যানথেরা গণের চারটি বিশালাকার সদস্যের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী প্রাণী।
শিকারি প্রাণী হিসেবে বাঘের পরিচিতি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। হরিণ, মহিষসহ বনের বিভিন্ন পশুকে শিকার করে নিজের খাবার গ্রহণ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শিকারের ক্ষেত্রে বাঘের সাবধানতার কথা প্রায়ই শোনা যায়। তবে বাঘের শিকারে সফলতার ক্ষেত্রে জিহ্বারও বেশ অবদান থাকে। বলা হয়ে থাকে, জিহ্বাই বাঘের সবচেয়ে বড় গোপন অস্ত্র!
একটি বাঘের জিহ্বা এতটাই রুক্ষ বা অমসৃণ হয় যে তারা খুব সহজেই যেকোনো হাড়ে লেগে থাকা মাংস চেটে তুলে আনতে পারে। বাঘের জিহ্বায় ধারালো এবং ছোট ছোট কাঁটার মতো তন্ত্রী থাকে, যেগুলোকে ‘প্যাপিলা‘ বলা হয়। শুধু জিহ্বার অগ্রভাগই নয়, বাঘের পুরো জিভজুড়েই এই ক্ষুদ্রাকার, শক্ত এবং হুকের মত প্যাপিলাগুলো থাকে।
বাঘের জিহ্বা প্রায় ৭-৯ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। তাতে থাকা প্যাপিলার কারণেই মনে হয় পুরো জিহ্বাটাই যেন লোমশ। এই প্যাপিলাগুলো বাঘের জিহ্বাকে এতোটাই রুক্ষ ও কর্কশ করে যে, যদি একটি বাঘ কয়েকবার কোনো মানুষের চামড়া চেটে দেয়, তাহলে সেই চামড়া ছিলে রক্ত বের হয়ে আসবে। এগুলো বাঘকে তার শিকারের মাংস ছিঁড়তে এবং শিকারের শরীরে পালক থেকে থাকলে সেগুলো তুলে ফেলতেও সাহায্য করে।
মূলত বাঘের শিকার করা প্রাণীর দেহ থেকে মাংস এবং লোম তুলে ফেলার জন্য তারা এই প্যাপিলা ব্যবহার করে। যা তাদের হজমের কাজে এবং শিকারের শরীর থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি নিজেদের শরীর পরিষ্কার করতেও বাঘ জিহ্বা ব্যবহার করে থাকে!
মজার বিষয় হচ্ছে, এই জিহ্বাটা চিরুনির কাজও করে। এর সাহায্যে তারা খুব সতর্কভাবে নিজে পশমগুলোকে আঁচড়ায়। শিকারকে এই জিহ্বা দিয়ে যতটা জোরে আঘাত করে, ঠিক ততটাই নরমভাবে নিজের ক্ষেত্রে চিরুনি হিসেবে কাজ করে এই জিহ্বা। তাছাড়া বাঘের লালা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে বিবেচিত। বাঘের লালায় থাকে অ্যান্টিসেপটিক সালাইভা। সম্ভবত এটিই বাঘের একটি ভালো বৈশিষ্ট্য। যদি বাঘের শরীরের কোথাও ক্ষত হয়; তখন তারা চেঁটে চেঁটে স্থানটি জীবাণুমুক্ত করে।
বাঘের গর্জন কিন্তু এই জিহ্বা পেরিয়েই বের হয়। একটি বাঘের গর্জন প্রায় বজ্রধ্বনির সমতুল্য। শিকারকে সাময়িক অসাড় এবং নিষ্ফল করে দিতে বাঘের কয়েকটি গর্জনই যথেষ্ট। এই বড় বিড়ালদের স্বরতন্ত্রী বা ভোকাল কর্ডের নিচে একধরনের ‘ভোকাল ফোল্ড‘ থাকে। এই ভোকাল ফোল্ডের কম্পনজাত ধ্বনিই মূলত বাঘের গগনবিদারী গর্জনের মূল কারণ।
বাঘেরা প্রধানত দু’ধরনের গর্জনের সৃষ্টি করে। এক ধরনের গর্জন মানুষ শুনতে পায়, অপরটি মানুষ শুনতে পায় না। স্বল্প মাত্রা ও কম্পাংকের গর্জন মানুষ সাধারণত শুনতে পায় না। আর এ ধরনের গর্জনই অনেক দূর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে, যেগুলো বিভিন্ন ভবন, ঘন বন, পাহাড়-পর্বত, এমনকি হাড় ভেদ করেও চলে যায়। শিকারের দেহের অভ্যন্তর দিয়ে ভ্রমণের সময় এই গর্জন একধরনের হিম বা শীতলতার সৃষ্টি করে, যা শিকারকে জমিয়ে ফেলা বা অসাড় করে ফেলার মতোও ক্ষমতা রাখে। আর ঠিক এভাবেই বাঘ তার স্বল্প দৈর্ঘ্যের এবং কম্পাংকের গর্জন ব্যবহার করে শিকার অবশ করে ফেলে।
Post a Comment