জাপানে সমুদ্রের গভীর তলদেশের মাছের ছবি তুলল বিজ্ঞানীরা

 


ODD বাংলা ডেস্ক: উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের অতল গহ্বরে অনুসন্ধানের সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের ঠিক ওপরে, ৮,৩৩৬ মিটার (২৭,০০০ ফুটেরও বেশি) গভীরে ধারণ করা একটি স্নেইলফিশের ভিডিও হয়ে উঠেছে বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে ভিডিও ধারণ করা গভীরতম মাছ।


ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া এবং টোকিও ইউনিভার্সিটি অফ মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা রবিবার স্নেইলফিশটির ফুটেজ প্রকাশ করেছেন, যা গত সেপ্টেম্বর মাসে জাপানের গভীর সামুদ্রিক ট্রেঞ্চে সি রোবটের মাধ্যমে ধারণ করা হয়েছিল। 


গভীরতম স্নেইলফিশের চিত্রগ্রহণের পাশাপাশি, বিজ্ঞানীরা ৮,০২২ মিটার গভীরতায় আরও দুটো স্নেইলফিশ ধরে গভীরতম জায়গা থেকে মাছ ধরার আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন।


এর আগের গভীরতম মাছের ভিডিও ফুটেজ ধারণ করার রেকর্ডটি ছিল ২০০৮ সালে ৭,৭০৩ মিটার গভীর থেকে করা একটি স্নেইলফিশ। তখনো বিজ্ঞানীরা ৮,০০০ মিটার গভীর থেকে মাছ সংগ্রহ করতে সক্ষম হননি।


এই অভিযানের নেতৃত্বদানকারী মিন্ডারু-ইউডাব্লিউএ ডিপ সি রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী অ্যালান জেমিসন বলেন, "এই আবিষ্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটি নির্দিষ্ট ধরণের মাছ কতদূর গভীরতায় নামতে সক্ষম সেটি আমাদেরকে দেখায়।"


বিশ্বের গভীরতম অঞ্চলে মাছের জনসংখ্যার পরিমাণ সম্পর্কে জানার জন্য ১০ বছর সময় ধরে করা একটি গবেষণার অংশ হিসাবে বিজ্ঞানীরা জাপানের ট্রেঞ্চে ভিডিও ধারণ করছেন। স্নেইলফিশ লিপারিডে গোত্রের সদস্য। জেমিসন জানান, "অধিকাংশ স্নেইলফিশই অগভীর জলে বাস করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে বেশি গভীরতাতেও এগুলোর কিছু বেঁচে থাকে।"


গত বছর দুই মাস ধরে চলা সমীক্ষার জন্য জাপান, ইজু-ওগাসাওয়ারা এবং রুকিউ নামের তিনটি গভীর সামুদ্রিক ট্রেঞ্চে তিনটি হাই-রেজোল্যুশন ক্যামেরা লাগানো স্বয়ংক্রিয় সামুদ্রিক রোবট নামিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ইজু-ওগাসাওয়ারা ট্রেঞ্চের ফুটেজে দেখা যায়, গভীরতম স্নেইলফিশ সমুদ্রতলের অন্যান্য ক্রাস্টেসিয়ানদের পাশাপাশি শান্তভাবে ঘোরাফেরা করছে।


জেমিসন মাছটিকে একটি কিশোরবয়সী মাছ হিসেবে শ্রেণিকরণ করেন এবং জানান যে, ছোট গভীর সামুদ্রিক স্নেইলফিশগুলো প্রায়ই অগভীর অঞ্চলে সাঁতার কাটা বড় শিকারীদের এড়াতে যতটা সম্ভব গভীরে থাকার চেষ্টা করে।


একই ট্রেঞ্চে ৭,৫০০ থেকে ৮,২০০ মিটার গভীরতায় শট করা আরেকটি ফুটেজে একদল মাছ এবং ক্রাস্টাশিয়ানকে সামুদ্রিক রোবটের সাথে বাঁধা টোপের পেছনে ঘুরতে দেখা যায়। 


কীভাবে সমুদ্রের গভীরতম অংশের চরম পরিবেশে এই মাছগুলো বেঁচে থাকে, তা জানা যাবে বন্দী দুটি মাছের ওপর গবেষণা চালিয়ে। মাছগুলোর ছোট চোখ, স্বচ্ছ শরীর এবং অন্য মাছকে ভাসতে সহায়তা করা সুইম ব্লাডার না থাকায় এগুলো সমুদ্রের গভীরতম অঞ্চলে টিকে থাকতে পারে।


জেমিসন জানান প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ দক্ষিণ স্রোত সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর আরও গভীরে  যাওয়ার জন্য উপযোগী। আর এখানে সামুদ্রিক প্রাণীর অবাধ বিচরণ থাকায় সমুদ্রের তলদেশে মাছের অবশিষ্ট জমা হয়, যার ফলে সমুদ্রের গভীরে খাবারের অভাব থাকে না। 


বিজ্ঞানীরা চরম গভীরতায় বসবাসকারী এই প্রাণীগুলো সম্পর্কে আরও বেশি জানতে চান, তবে এর সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো পর্যাপ্ত অর্থ। জেমিসন জানান, প্রতিটি ল্যান্ডার রোবট অ্যাসেম্বল এবং অপারেট করতেই ২ লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ হয়। তিনি বলেন, "মূল চ্যালেঞ্জ হলো যে এই গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যয়বহুল এবং বিজ্ঞানীদের কাছে প্রচুর অর্থ নেই।" 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.