৫০ বছরের বন্দী জীবন শেষে সাগরে ফিরছে নিঃসঙ্গ কিলার হোয়েল ‘লোলিতা’

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বন্দীদশায় থাকা সবচেয়ে বয়স্ক ও নিঃসঙ্গ অরকা বা কিলার হোয়েল এবার ছাড়া পেতে যাছে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্দী থাকা ৫৬ বছর বয়সী 'লোলিতা'কে সাগরে মুক্ত করে দিতে যাচ্ছে ফ্লোরিডার মায়ামি সিকোরিয়াম কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসির।


বয়স্ক এ প্রাণীটির মুক্তির জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার কর্মীরা।


বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) মায়ামির সিকোরিয়াম জানিয়েছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে লোলিতাকে তার প্রাকৃতিক বাসস্থানে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।


লোলিতা, যার আসল নাম টোকিটা বা টোকি, একটি স্ত্রী জাতের অরকা। ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে, এই অরকাগুলোর বাস মূলত উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে।


অরকার এই বিশেষ জাতকে ২০০৫ সালে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। ১৯৭০ এর দশক থেকে এই প্রাণীগুলোকে বন্দী করার প্রবণতা শুরু হয়। অবাধে এসব প্রাণী শিকার করার ফলেই অবশেষে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় নাম লেখায় সাগরে দাপিয়ে বেড়ানো অরকা।


অরকার প্রতি বিশ্বব্যাপী আকর্ষণের যে ইতিহাস, তা নিজের বইতে নথিভুক্ত করেছেন ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিবেশগত ইতিহাসবিদ এবং অধ্যাপক জেসন কোলবি। তার বইতেই লোলিতাকে বন্দী করার ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়।


১৯৭০ সালের আগস্টে বন্দী করা হয় কিলার হোয়েল লোলিতাকে। সেসময়, সামুদ্রিক প্রাণী শিকারিরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় কম বয়সী অরকা শিকার করতেন। আটককৃত অরকাগুলো বিক্রি করা হতো সিওয়ার্ল্ড কিংবা মায়ামি সিকোয়ারিয়ামের মতো অ্যামিউজমেন্ট পার্কগুলোতে।


জেসন কেলবি বিবিসিকে বলেন, "লোলিতাকে যখন বন্দী করা হয়, তখন শিকারিরা ঘটনাক্রমে সেখানে অবস্থিত অরকার প্রায় পুরো দলটিকেই জালে আটকিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে দেখা যায়, তাদের জালে প্রায় ৯০টি অরকা আটকা পড়েছে!"


"সেসময় অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার কর্মীরা জেলেদের জাল কেটে অরকাগুলো মুক্ত করার চেষ্টা করলেও তা কাজে দেয়নি। কিছু অরকা জালে আটকে যায়, চারটি ছোট অরকা সাগরে তলিয়ে যায়। সে যাত্রায় লোলিতাসহ আটটি অর্কা বন্দী করে শিকারিরা," বলেন তিনি।


"ঘটনাটি ঘটে ১৯৭০ সালের আগস্টে। সেসময় ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলছিল। রিচার্ড নিক্সনের রাষ্ট্রপতিত্বের প্রথম মেয়াদ ছিল সেটি। এতদিন ধরে লোলিতা বন্দী!" বলছিলেন কোলবি।


মায়ামি সিকোরিয়ামের ওয়েবসাইট অনুসারে, লোলিতাকে যখন মায়ামি সিকোয়ারিয়ামে বিক্রি করা হয়, তখন সেখানে তার সঙ্গী হিসেবে ছিল হুগো নামের আরেকটি পুরুষ অর্কা। কিন্তু ১৯৮০ সালেই মারা যায় হুগো। এরপর এই ৪০ বছর একাকিত্বে কেটেছে লোলিতার।


সেই সত্তরের দশক থেকে আজ পর্যন্ত, এই ৫০ বছরেরও বেশি সময়ে লোলিতার বাসস্থান ছিল মায়ামি সিকোয়ারিয়ামের একটি ৮০ ফুট বাই ৩৫ ফুট আকারের ট্যাংক। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ২০ ফুট লম্বা একটি প্রাণীর জন্য জায়গাটি মোটেও যথেষ্ট না।


টানা ৫২ বছর মঞ্চে পারফর্ম করেছে লোলিতা। ২০২১ সালে মঞ্চ থেকে তার অবসর ঘোষণা করে সিকোরিয়াম কর্তৃপক্ষ।  


তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, লোলিতাকে সমুদ্রে স্থানান্তর বেশ বড় কিছু বাধা রয়েছে।


বিবিসিকে কোলবি বলেন, "আমি যে বিষয়টি নিয়ে ভয় পাই তা হলো, যারা লোলিতাকে মুক্ত করতে যাচ্ছে তারা হয়তো ভাবছে তাকে সাগরে ছাড়ার পর সে স্বাভাবিক নিয়মে সাঁতরে নিজের প্রাকৃতিক বাসস্থানে ফিরে যাবে, নিজের গোত্রের সাথে মিশে যাবে। কিন্তু আমার ধারণা এটি হবেনা।"


একে তো লোলিতা বেশ বয়স্ক একটি অরকা, তারমধ্যে ছোট থেকে অ্যামিউজমেন্ট পার্কে বন্দীদশায় কাটানোয় নিজে থেকে খাদ্য সংগ্রহের ক্ষমতাও নেই তার। ফলে এতবছর পর তাকে বন্যে ফিরিয়ে দিয়ে আসাটা জটিল হয়ে উঠতে পারে।


কেলবি বলেন, লোলিতাকে সালিশ সাগরে ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে হয়তো একটি সি পেনে (সমুদ্রের পাশেই অবস্থিত আলাদা জেটির মতো জায়গা) রাখা হবে তাকে, যেখানে নিজের প্রাকৃতিক আবাসস্থলের স্বাদ পাবে সে।


এই পদক্ষেপটিকেও একটি 'শক্তিশালী ও প্রতীকী' বিজয় হিসেবে দেখছেন কেলবি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.