বোয়িং প্রকৌশলীদের কাগজের বিমান, গড়ল সর্বোচ্চ দূরত্ব অতিক্রমের রেকর্ড!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ফুটবল মাঠের প্রায় সমান অর্থাৎ দীর্ঘ ৮৮ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব উড়ার রেকর্ড গড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তিন বোয়িং প্রকৌশলীর তৈরি কাগজের বিমান।


এতদিন রেকর্ডটি দক্ষিণ কোরিয়ার তিনজন ব্যক্তির দখলে ছিল। ২০২২ সালে এপ্রিল মাসে তাদের তৈরি কাগজের বিমানটি দীর্ঘ ৭৭ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছিল।


নতুন রেকর্ড গড়তে বোয়িং প্রকৌশলী ডিলন রুবল সাথে নিয়েছিলেন গ্যারেট জেনসেন ও নিথানিয়েল ইরিকসন নামের আরও দুইজন বিমান প্রকৌশলীকে। এই তিনজনই সম্প্রতি মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।


নতুন রেকর্ড সম্পর্কে বোয়িং প্রকৌশলী ডিলন রুবল বলেন, "আমার পরিবার ও বন্ধুদের জন্য এটা খুবই গর্বের মুহূর্ত। কাগজের বিমানটির ওপর ভিত্তি করে আমি অধিকতর নকশা এবং প্রোটোটাইপ তৈরির কথা ভাবছি।"


তবে রেকর্ড গড়ার ক্ষেত্রে মার্কিন তিন বোয়িং প্রকৌশলীর যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিল না। কাগজের বিমানটি তৈরির আগে দলটির কাগজের নকশা ও বায়ুগতিবিদ্যা নিয়ে প্রায় ৫০০ ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হয়েছে।


প্রয়োজনীয় পড়াশোনার পর বেশ কয়েকবারের প্রচেষ্টায় নকশা তৈরি করে গত বছরের ২ ডিসেম্বর পরীক্ষাটি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যের ক্রাউন পয়েন্ট এলাকায় প্রকৌশলী রুবলের তৃতীয়বারের নিক্ষেপে এ রেকর্ডটি গড়া হয়।


এ সম্পর্কে প্রকৌশলী জেনসেন বলেন, "আশা করি রেকর্ডটি দীর্ঘদিন আমাদের দখলে থাকবে। কেননা ৮৮ মিটার খুবই অবিশ্বাস্য দূরত্ব। আগের রেকর্ডের তুলনায় আমাদের কাগজের বিমানটি যে আরও ১১ মিটার দূরত্ব বেশি উড়েছে, সেক্ষেত্রে আমাদের বহু পরিকল্পনা ও স্কিলের সমন্বয় ঘটাতে হয়েছে।"


বিশ্বরেকর্ডটি তৈরি ক্ষেত্রে প্রকৌশলীর দলটি বিমানের ডিজাইন তৈরির ক্ষেত্রে গতি বৃদ্ধি ও ঘর্ষণ কমিয়ে আনার দিকে নজর দিয়েছে। কেননা এতে করে অল্প সময়ে কাগজের বিমানটি অধিক দূরত্বে পৌঁছাতে পারবে। এক্ষেত্রে 'নাসা এক্স-৪৩এ' এর মতো দ্রুতগতির হাইপারসনিক বিমানের নকশাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নেওয়া হয়েছে।


এ সম্পর্কে রুবল সিএনএনকে বলেন, "সত্যিকারের বিমান ও কাগজের বিমানের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তবে দুই ধরণের বিমানই একই মৌলিক নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। কাগজের বিমানের ক্ষেত্রে ভিন্নধর্মী একটি ভাঁজ আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।"


অন্যদিকে কাগজের বিমান নিক্ষেপের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত কার্যকরী কৌশলটি বের করার জন্য দলটি বিভিন্ন উপায়ে বিমান নিক্ষেপের ভিডিও করে ও সিমুলেশনের তথ্য সংগ্রহ করে সেটি বারবার পর্যালোচনা করেছে।


এ সম্পর্কে প্রকৌশলী জেনসেন বলেন, "ভূমি থেকে ৪০ ডিগ্রী কোণে কাগজের বিমান নিক্ষেপ করা হলে সেটি সবচেয়ে ভালো দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। আমি মনে করেছিলাম সিমুলেশনের মাধ্যমে আমরা তেমন উপকারী কোনো তথ্য পাবো না। তবে এই তথ্য আসলেই কাজে দিয়েছে।"


অন্যদিকে বিমানের কাগজ হিসেবে নিজেদের সুবিধার্থে লেটার সাইজের কাগজের পরিবর্তে দলটি 'এ৪' সাইজের কাগজ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শীঘ্রই দীর্ঘ সময় আকাশে উড়ার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়তে দলটি গিনেস কর্তৃপক্ষের গাইডলাইন মেনে প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।


দলটির রেকর্ড দূরত্ব অতিক্রমের ক্ষেত্রে বিমানটি মাত্র ৬ সেকেন্ড পরিমাণ সময় নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে কাগজের একটি বিমান দীর্ঘ ২৯.২ সেকেন্ড উড়েছিল।


এ সম্পর্কে রুবল বলেন, "আকাশে উড়ার সর্বোচ্চ সময়ের রেকর্ডটি ভাঙার জন্য আমরা যে বিমান ব্যবহার করবো সেটার নকশা সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। এক্ষেত্রে নকশায় বিমানটির পাখা আরও প্রসারিত করা হবে।"


কাগজের নকশার প্রতি ঝোঁক থেকে বিমানের প্রকৌশলী বনে যাওয়া রুবল ও জেনসেন স্কুলে থাকা অবস্থায়ই কাগজের বিমান তৈরি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। এমনকি বোয়িং কোম্পানি কর্তৃক আয়োজিত কাগজের বিমান নিয়ে করা একটি ইভেন্টেও দুইজন অংশ নিয়েছিলেন।


রেকর্ড সৃষ্টি করা দলটি মনে করে, তাদের এই অর্জন তরুণ বিমান প্রকৌশলীদের নিজেদের স্বপ্ন পূরণে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। আর কেউ যদি রেকর্ড গড়ার মতো কাগজের বিমান তৈরি করতে চায়, তবে সেটা অসম্ভব কিছু নয়। এক্ষেত্রে শুধু মেধা আর সময় ব্যয় করতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.